দ্যা ক্যালকাটামিরর ব্যুরো: এই হোমে রয়েছে থাকার দারুন বন্দোবস্ত, রয়েছে পর্যাপ্ত ওষুধ, পরিষ্কার শৌচালয়, আর সেই সাথে সাথে এলাহি খাবারের অঢেল আয়োজন। কোভিড-১৯ এর অ্যাসিমটমেটিক অর্থাত্ যাদের কোনো দৃশ্যমান করোনা ভাইরাসের সংক্রমনের লক্ষণ নেই সেই সমস্ত রোগীদের জন্য তিরিশ শয্যার বারাসাত সেফ হোম জেলা স্তরে একটি মডেল সেফ হোম হয়ে উঠছে। কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে রুগীদের জন্য ঢালাও পরিষেবা ও ভুরিভোজের ব্যবস্থা থাকলেও আসেপাশেই দেখা মিলছে বিষধর সাপের।
উল্লেখ্য, জেলার তথা বারাসাত সদর শহরের ক্রমবর্ধমান করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে বারাসাত পৌরসভার উদ্যোগে স্টেডিয়ামেই গড়ে উঠেছে সেফ হোম। এই সেফ হোমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় গত জুলাই মাসের বাইশ তারিখে। মূলত: যে অ্যাসিমটমেটিক রোগীদের বাড়িতে একাধিক ঘর ও একাধিক শৌচালয় নেই তাঁদের আলাদা করে রেখে চিকিৎসা করার রাজ্য সরকারের ভাবনার বাস্তব রূপায়ণ করছে বারাসাত পৌরসভা। বারাসাত স্টেডিয়ামের ডর্মিটরিকে কাজে লাগিয়ে গড়ে তোলা বারাসাত পৌরসভা অঞ্চলের বাসিন্দাদের জন্য তিরিশ শয্যা বিশিষ্ট বারাসাত সেফ হোমে এই মুহূর্তে আবাসিক সংখ্যা বারো। এই হোমের আবাসিকদের মধ্যে দশ জন পুরুষ, দুজন মহিলা।




এই প্রসঙ্গে বারাসাত পৌরসভার বোর্ড অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের অন্যতম সদস্য অশনি মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর ভাবনার সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই সেফ হোমে সব রকম সুবন্দোবস্ত রাখা হয়েছে। তবে পৌরসভার উদ্যোগ ও আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন না সেফ হোমের আবাসিকরা। তারা বলছেন, এখানে সার্বিক সাচ্ছন্দ্য থাকলেও বিষধর সাপের আনাগোনায় বেশ আতঙ্কে আছেন।
এর পাশাপাশি তাঁদের কিঞ্চিৎ ক্ষোভ যে প্রতিদিন নিয়ম করে চিকিৎসক আসছেন না। যদিও প্রশাসক মন্ডলীর অন্যতম অশনি মুখোপাধ্যায় আবাসিকদের এই দাবি মানতে নারাজ। তাঁর মতে নিয়মিতভাবে ও নিয়ম মেনেই অ্যাসিমটমেটিক রোগীদের ওপর নজরদারী রেখে চলেছেন দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক মন্ডলী।
“মানুষের তো আরও ভালো থাকার ইচ্ছে হতেই পারে তথাপি বারাসাত ‘সেফ হোম’ রোগীদের সবরকম সু-পরিষেবা দিতে বদ্ধপরিকর এবং এই বিষয়ে কোনো রকমের কার্পণ্য করছে না বারাসাত পৌরসভা।”
-অশনি মুখোপাধ্যায়, চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল, বারাসাত পৌরসভা
তিনি আরও জানান যে দুজন সন্দেহজনক অ্যাসিমটমেটিক রোগীর ক্ষেত্রে অন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এমনকি হালে একজনের শরীরে এই রোগের-লক্ষণ প্রকট হতেই তাকে গুরুত্ব বুঝেই চিকিৎসার জন্য বারাসাতের নিকটবর্তী কদম্বগাছির জে এন আর সি কোভিড হাসপাতালে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
এই হোমে খাদ্য সরবরাহর দায়িত্বে থাকা সংস্থা জানিয়েছে রোজ সকালে ব্রেকফাস্টে রয়েছে একটি ডিম সেদ্ধ, কলা সহ চায়ের ব্যবস্থা। এছাড়া সপ্তাহের লাঞ্চে চারদিন মাছ, দু দিন চিকেন, একদিন নিরামিষ। সব মিলিয়ে ‘হোম; সুলভ খাওয়া দাওয়ার ব্যাতিক্রমি খাবারেরই ঢালাও ব্যবস্থা এখানে। এছাড়াও এখানে পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুত রয়েছে প্রয়োজনীয় ওষুধ, সাথে গরম জলের ব্যবস্থাও রয়েছে।
হোমের আবাসিকদের জন্যে এই ‘বাহারি খরচের’ পুরোটাই বহন করছে বারাসাত পৌরসভা। এখানে দ্বায়িত্বে থাকা কর্মীদের মতে কার্যত জামাই আদরেই আছেন কোভিড-১৯ সেফ হোমের আবাসিকরা।
তবে এই ভালোর মধ্যেও করোনার আতঙ্কের পাশাপাশি আবাসিকদের অভিযোগ তারা বিষধর সাপ নিয়ে দুশ্চিন্তায়। থাকার জন্যে দেওয়া ঘরেও নাকি ঢুকে পড়ছে সাপ। বিরোধী নেতা ফরওয়ার্ড ব্লকের সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় এই ইস্যুকে হাতিয়ার করে বলেন- সুচিন্তিত হলেও ‘সেফ হোম’ প্রকল্পটি সুপরিকল্পিত নয়, রয়েছে নজরদারির যথেষ্ট অভাব। আর সেকারণেই রোজ সাপের আতঙ্কে রয়েছেন সেফ হোমের কোভিড অ্যাসিমটমেটিক রোগীরা।
যদিও বিরোধীদের দাবিকে নস্যাত করে পৌরসভা জানিয়েছে সাপের উৎপাত থেকে আবাসিকদের নিরাপদে রাখতে ঘরের চারপাশে কার্বলিক অ্যাসিড ছড়ানো হয়েছে। প্রশাসক অশনি মুখোপাধ্যায় আস্বস্ত করে বলছেন- “মানুষের তো আরও ভালো থাকার ইচ্ছে হতেই পারে তথাপি বারাসাত ‘সেফ হোম’ রোগীদের সবরকম সু-পরিষেবা দিতে বদ্ধপরিকর এবং এই বিষয়ে কোনো রকমের কার্পণ্য করছে না বারাসাত পৌরসভা।