দ্যা ক্যালকাটামিরর ব্যুরো: আকবরের সেকুলারিসম এর কথা আমরা শুনেছি। তিনি যেমন নিজের ধর্মের প্রতি নিষ্ঠাবান ছিলেন তেমনি অন্য ধর্মের মানুষদের প্রতিও সমান ভালোবাসা ও সম্মান দিয়েছেন। আকবরের সেই প্রজা বাত্সল্যতা ও সমানতা মুঘল সময়ে ভারতের মাটিতে সামঞ্জস্য বিধান করেছিল ভিন্ন ভিন্ন জাতির মানুষের মধ্যে সকলেই মিলে মিশে আকবরের ভারত কে সেই সময়ে এক অন্য মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছিলেন। ঠিক তেমনি, আজ ৪২২ বছর পর যখন সেই মুঘল সম্রাজ্যের একটি বিতর্কিত স্থাপত্য নিয়ে সমস্যার সমাধান হয়েছে, ঠিক সেই দিন আমাদের রাজ্যের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর একটি ট্যুইট মনে করিয়ে দিল “সবার ওপরে মানুষ সত্য তাহার ওপর নাই”।
আজ বেলা ১২ টার সময়ে অযোধ্যায় রাম মন্দিরের যখন ভূমি পুজো হচ্ছে ঠিক সেই সময়ে একটি টুইট করে সম্প্রীতির বার্তা দিতে চাইলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মুখ্যমন্ত্রী ট্যুইটে লিখেছেন, “হিন্দু, মুসলিম, শিখ, খ্রিস্টান/একে অপরের ভাই-ভাই! আমার ভারত মহান,/মহান আমার হিন্দুস্তান! আমাদের দেশ তার চিরায়ত বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের ঐতিহ্যকে বহন করে চলেছে, এবং আমাদের শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধভাবে এই ঐতিহ্যকে সংরক্ষিত রাখবো”।


উল্লেখ্য, মমতা ব্যানার্জী ঠিক সেই সময়ে তাঁর সম্প্রীতির বাক্য দেশবাসীর কাছে পৌঁছে দিলেন যখন অযোধ্যতে সেই ঐতিহাসিক কর্মকাণ্ডের পৌরোহিত্য করতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রাম মন্দিরের ভিতে রূপর ইট প্রতিস্থাপন করলেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে রাজনীতির কৌশলী মমতা ব্যানার্জী এই ট্যুইটের কোথাও রাম মন্দিরের ভূমি পুজোর কথা উল্লেখ না করে বরং সম্প্রীতি ও ভাতৃত্বের সংজ্ঞাকে বিজেপির সামনে এমন ভাবে রাখলেন যেখানে বিজেপির ধর্ম সহিষ্ণুতার অন্য দিকটাকেই তুলে ধরলেন। এই ট্যুইট পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের সাংস্কৃতিক রাষ্ট্রবাদের কথার যে ঘুরিয়ে উত্তর সেকথাই আলোচনা করছেন নেটিজেনরা।
মমতা ব্যানার্জী বাংলার মানুষের মধ্যে বিভেদ চান না। তাই তিনি যেমন এক হাতে দুর্গা পূজা করেন ঠিক তেমনি অন্য হাতে রমজানে ইফতারও করেন। আজ দিনটি সারা দেশের জন্যেই কিছুটা হলেও স্পর্শকাতর ছিল। মায়ের মতই তিনি চান নি তাঁর সাধের বাংলায় কোথাও কোন বিক্ষিপ্ত বা সংঘটিত অশান্তি ঘটুক। তাই তাঁর চলনে বলনে এবং লিখনে এমন ভাবই প্রকাশ পেয়েছে যেখানে অযোধ্যায় রাম মন্দিরের ভূমিপুজোকে কেন্দ্র করে বাংলায় যাতে কোনও ধর্মীয় অশান্তি না ছড়ায় সে ব্যাপারে সতর্কতা লক্ষ্য করা গিয়েছে।
ভারতবর্ষ সব সম্প্রদায়ের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের সনাতন ঐতিহ্যবাহী দেশ। কিন্তু বিগত দিনের অভিজ্ঞতাও খুব একটা মিষ্টি নয় তাই রাম মন্দির নির্মাণকে কেন্দ্র করে রাজনীতিতে উগ্র মেরুকরণের চেষ্টা হতে পারে বুঝে জোরালো ভাবেই ধর্মনিরপেক্ষকতার বার্তা দিতে সক্রিয় হয়েছেন তিনি।
যদিও বঙ্গ বিজেপির বক্তব্য রাম মন্দিরকে কেন্দ্র করে বাংলায় অশান্তি ছড়ানোর আশঙ্কা ভুল । কারণ কোথাও যেন কোনভাবেই অশান্তি না ছড়ায়এ ব্যাপারে সঙ্ঘ পরিবার অনেক বেশি দায়িত্বশীল। এই প্রসঙ্গে তাদের যুক্তি অযোধ্যা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের চূড়ান্ত রায় ঘোষণার পর সঙ্ঘ প্রধান মোহন ভাগবতের নির্দেশে কোনও মিছিল মিটিং পর্যন্ত করেনি বিজেপি-আরঅসএস।
বিজেপি মনে করে অযোধ্যা মামলার রায়ে সুপ্রিম কোর্ট দুই ধর্মের মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও ধর্মাচরণের অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে। সর্বোচ্চ আদালতের সেই রায়কে মর্যাদা দিয়েছে বিজেপি। আর মুখ্যমন্ত্রীও সেই কথাই বলেছেন যা একজন দ্বায়িত্বশীল মুখ্যমন্ত্রীর বলা উচিত।