দ্যা ক্যালকাটামিরর ব্যুরো: বাংলায় আবার ছন্দ পতন। আজ দুপুর পৌনে দুটো নাগাদ বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন কমরেড শ্যামল চক্রবর্তী। তিনি বাম আমলে পরিবহন মন্ত্রী ছিলেন সেই সাথে বাম শ্রমিক সংঘঠন CITU’র ও নেতা ছিলেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। বেশ কিছুদিন ধরেই তিনি কোভিড আক্রান্ত হয়ে বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন ।
তাঁর COPD বা ফুসফুসজনিত রোগ অনেক আগে থেকেই ছিল। এর আগেও তিনি শ্বাসকষ্ট নিয়ে এই বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। সম্প্রতি তাঁর জ্বর আসে এবং সেই সাথে প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট থাকায়, তাঁর পরিজনেরা তাঁকে এই হাসপাতলেই ভর্তি করেন। হাসপাতালে পরীক্ষা করে দেখা যায় তাঁর নিউমোনিয়া হয়েছে। সেই সাথে তার ইউরিনাল ডিজিজ ও ধরা পড়ে। এই পরীক্ষার পাশাপাশি তাঁর কোরোনা টেস্ট ও করা হয়। রিপোর্ট পজিটিভ আসায় তাঁর ট্রীটমেন্ট চলতে থাকে।
যদিও মাঝে তাঁর শারীরিক অবস্থার উন্নতিও হয়েছিল কিন্তু শ্বাসকষ্টের সমস্যা থাকায় তাঁকে অক্সিজেন সাপোর্টে রাখা হয়। এমনকি গত শনিবার সকালে তিনি খবরের কাগজ পড়েছিলেন, চিকিৎসকদের সঙ্গে কথাও বলেন। কিন্তু রবিবার রাত থেকেই তাঁর অবস্থার কিছুটা অবনতি হয়। ভেন্টিলেটর সাপোর্ট দিতে হয় বর্ষীয়ান নেতাকে। সোমবার ফের কিছুটা উন্নতি হলেও, বিকেলের দিকে তাঁকে ভেন্টিলেটর সাপোর্টে রাখা হয়। আর এরপর থেকে থেকে চিকিত্সায় সাড়া দিচ্ছিলেন না এই বর্ষীয়ান বাম নেতা।
কমরেড শ্যামল চক্রবর্তীর মেয়ে অভিনেত্রী উষসী চক্রবর্তী গতকাল অর্থাত্ বুধবার রাতে বাবার শরীর যে ভালো নেই, সে কথা নিজেই ফেসবুকে ওয়ালে পোস্ট করেছিলেন। অসুস্থ জানার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উষসীকে ফোন করে তাঁর বাবার স্বাস্থ্যের বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়েছিলেন ।
শ্যামল চক্রবর্তীর অকাল প্রয়াণে শোকবার্তা জ্ঞাপন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই বর্ষীয়াণ নেতার মৃত্যুতে রাজনৈতিক জগতের এক প্রভূত ক্ষতি হল বলে তিনি মন্তব্য করেছেন । শ্যামল চক্রবর্তীর পরিবার-পরিজন ও অনুরাগীদের প্রতি সমবেদনা জানান মুখ্যমন্ত্রী।


ইতিমধ্যে বাম শিবিরে একের পর এক নেতা কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রথম সারিতে থাকার কারণে করোনায় সংক্রমিত হচ্ছেন। এই যেমন শ্রমিক নেতা তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী অনাদি সাহু ও চিকিৎসক নেতা ফুয়াদ হালিম কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন। অনাদি সাহুর স্ত্রী আনবিকা গঙ্গোপাধ্যায়ও করোনা আক্রান্ত।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বাম নেতা শ্যামল চক্রবর্তীর জন্ম ১৯৪৩ সালে ২২ ফেব্রুয়ারি। ১৯৭৮ সাল থেকে সক্রিয় তিনি রাজনীতির সাথে সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। দমদমের মতিঝিল ও উত্তর কলকাতার বিদ্যাসাগর কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করেন। কলেজ জীবন থেকেই তিনি বাম আদর্শে পথ চলতে শুরু করেন। ১৯৮৯ এ বাম সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য ছিলেন শ্যামল চক্রবর্তী। তিনি বামেদের রাজ্য কমিটির সদস্যও ছিলেন। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তিনি বামেদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন।