‘তালের বড়া খেয়ে নন্দ নাচিতে লাগিলো’। হ্যাঁ, আজ জন্মাষ্টমী। প্রভু শ্রীকৃষ্ণের জন্ম তিথি। দুধ, দই আর তাল, এই না হলে গোপালের ভোগ অসুম্পূর্ণ থেকে যায়। যদিও অন্যান্য বারের থেকে এইবারের জন্মাষ্টমী অনেকটাই আলাদা। বাঙালি ঘরে এবার করোনা সংকটে যেমন ট্যাকে পড়েছে টান তেমনি বাজারেও ‘তালে’র আকাল।


তালের বড়া, তাল ক্ষীর, তালের লুচির মতো সুস্বাদু ভোগেই গোপাল কে সন্তুষ্ট করেন গৃহিনী। কিন্তু এবার ভাদ্র মাসের পরিবর্তে অনেকটাই এগিয়ে এসেছে জন্মাষ্টমী। ফলে প্রাকৃতিক নিয়ম মেনে তাল পাকেনি গাছে। পাঁজী দেখে যে কটাও বা পেকেছে সেগুলোর দাম তিল থেকে তাল হয়ে গিয়েছে। অন্যান্য বারে যে তাল ২০-৩০ টাকায় পাওয়া যেত, এখন সে তাল বিকোচ্ছে ১৫০-২৫০ টাকায়। এর পাশাপাশি ভোগের জন্যে প্রয়োজনীয় তেল, গুড়, কলা, নারকেলের মত উপকরণগুলিও অত্যন্ত চড়া দাম। একেই খোলা বাজার বসার ওপরে বিধি নিষেধ রয়েইছেই অন্যদিকে ট্রেন বন্ধ থাকায় সঠিক যোগান না থাকার কারণে বাজারে চাহিদার তুলনায় যোগান কম। বিক্রেতারা জানাচ্ছেন কবে কিভাবে রাতারাতি লকডাউন হয় সে ভয়ে বেশি মাল তুলতে পারছি না। ঘটনা যদিও একেবারেই অস্বীকার করা যায় না।
কিন্তু সনাতন মতে শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি তালের তৈরি খাবার ছাড়া অসম্পূর্ণ। বর্তমান ব্যস্ততার যুগে, গৃহিণীদের সময়াভাবে অনেকেই মিষ্টির দোকানের উপর নির্ভর করে থাকেন। কিন্তু এবছর করোনা আবহে আদৌ মিষ্টির দোকানে তালের বড়া পাওয়া যাবে কিনা এ বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে! কারণ হিসেবে দোকানদারের কাছ থেকে জানা যায়, লকডাউন এর মাঝে মিষ্টির দোকান খোলা থাকলেও বিভিন্ন পুজো অর্চনায়, সেই ভাবে বিক্রি হচ্ছে না মিষ্টি! তাই জন্মাষ্টমীতেও তালের বড়া তৈরি করে আদৌ সব বিক্রি হবে কিনা সে নিশ্চয়তা পাচ্ছেন না তারা। এর থেকেও বেশি প্রভাব ফেলেছে এ বছরের তালের দাম।
তিথি অনুযায়ী জন্মাষ্টমী বেশ খানিকটা এগিয়ে আসায় অপ্রতুল তাল যোগাড় করতে গাঁ উজাড় করে দিচ্ছেন বাড়ির কর্তা। এর পাশাপাশি গৃহিণীর চাপ তো রয়েইছেই। তালের স্বাদ নারকেলে মেটানোর চেষ্টাও বৃথা। থ্রি জি থেকে ফোর জি, মোবাইল টাওয়ারের দাপটে আগেই বিদেয় হয়েছে চড়ুই পাখি আর এখন সে আঘাত হানছে নারকেলের ফলনে। এই দুই এর অপ্রতুলতার পাশাপাশি দীর্ঘদিন কর্মহীন অবস্থায় গৃহবন্দী বাঙালি পরিবারগুলি এবছর কিভাবে স্বল্পেই গোপাল কে সন্তুষ্ট করে জন্মাষ্টমী পালন করে তাই দেখার অপেক্ষায়।