দ্যা ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে ‘আজকাল’ পত্রিকার ক্রীড়া বিভাগের সঙ্গে যুক্ত থাকা সদাহাস্যময় ‘রণিদা’ বাংলার সংবাদ জগতের সকলেরই প্রিয় ছিলেন। কিন্তু গত এপ্রিল মাসের এক বিষাদঘণ শুক্রবারে মাত্র ৫৭ বছর বয়সে তিনি সকল কে ছেড়ে পরলোক গমন করেন। তাঁর নাম রণজয় হলেও সকলের ভালোবাসা আর আদরে তা হয়েছিল ‘রনি’।


মৃত্যুর আগে বেশ কয়েকদিন ধরেই সর্দি-কাশি-জ্বরে ভুগছিলেন তিনি। সেই সময়ে রাজ্যে করোনার প্রকোপ ও ছিল শুরুর মুখে। তাঁর সুগার এবং শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যাও ছিল। অসুস্থ অবস্থায় নিজের বাড়িতেই ছিলেন। ওই শুক্রবারই তাঁকে হাসপাতালেভর্তি করা হয়। তাঁর মৃত্যুর কিছুদিন আগেই তাঁর স্ত্রীও ক্যানসারে প্রয়াত হন।


এহেন আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন বিশিষ্ট চিত্রসাংবাদিক রনজয় রায়, ওরফে রনি রায়ের আটান্ন তম জন্মদিনকে অভিনব উপায়ে পালনের সিদ্ধান্ত নেয় ‘সমব্যথী’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। রনি দা যেমন সকলের বিপদে আপদে নি:স্বার্থভাবে ঝাঁপিয়ে পড়তেন, তাঁর সেই মন্ত্র কে আশ্রয় করেই সমব্যথী ‘শিক্ষা বিকাশ’ প্রকল্পের সূচনা করলো সুন্দরবনের কালীতলা গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত ১৫টি বুথে। আর তাও ‘রনি’ দার জন্মদিনের দিন।






‘সমব্যথী’র এই প্রকল্পের অধীনে পাঁচ থেকে দশ বছর বয়সী পঞ্চাশ জন আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া মেধাবী ছাত্র ছাত্রীর মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনার দায়িত্ব গ্রহণ করা হয়।




সেই উদ্দেশ্যে দেশের ৭৪’তম স্বাধীনতা দিবসে সুন্দরবনের হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের অন্তর্গত কালীতলা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ছাত্র ছাত্রীদের হাতে পোশাক, স্কুল ব্যাগ, বই খাতা, কলম এবং খাদ্য সামগ্রী তুলে দেন সমব্যাথীর সদস্যরা।


ছোট ছোট শিশুরাই এদিন রনি রায়ের জন্মদিনের কেক কেটে অনুষ্ঠানের সূচনা করে। এদিন ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কালীতলা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান দীপ্তি মন্ডল, প্রাক্তন প্রধান শ্যামল মন্ডল। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পঞ্চায়েত সমিতির অন্যান্য সদস্যরা এবং হেমনগর কোস্টাল থানার সাব ইন্সপেক্টর মনোরঞ্জন তিওয়ারি সহ সমব্যথীর সকল সদস্যরা।


কালীতলা পঞ্চায়েত প্রধাণের বক্তব্য, ‘শিশুদের যাবতীয় পড়াশোনার খরচ বহন করায়, গ্রামের এই পঞ্চাশজন শিশুর ভবিষ্যত্ কে উজ্জ্বলতার দিকে এগিয়ে নিয়ে গেল ‘সমব্যথী’। শুধু শিশুরা নয় শিশুর পাশপাশি তাদের পরিবারের ওপর থেকেও একটা বড় চাপ হালকা হল। অন্তত আর্থিক অনটনের জন্যে বা অন্য কোনও কারণে শিশুগুলির পড়াশোনায় ছেদ পরবে না।’


এই প্রসঙ্গে সমব্যথীর বক্তব্য-” রনি দা যেমনটি চাইতেন আমরা হয়তো ততটা স্পর্শ করতে পারব কিনা জানিনা, কিন্তু এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রয়াসের মাধ্যমে রনিদার চেতনা ও ভাবাবেগ যাতে আমাদের মধ্যে সর্বদা বজায় থাকে আমরা সেই প্রচেষ্টাই করে যাবো। রনি দা যেমন সদা হাস্যমুখর থাকতেন, আমরাও চাই সকলের মুখে সেই হাসি ফুটিয়ে তুলতে’।