দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: করোনা আবহে পাহাড়ের মানুষের আশঙ্কা অনাহার। দীর্ঘদিন লকডাউন থাকায় শুধুমাত্র পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল এই মানুষগুলোর সংসারে এখন নুন আনতে পান্তা ফুরানোর যোগাড়। তাই এবার শুধু ভয় কে আঁকড়ে ধরে নয় বরং ভয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে পাহাড়ের দরজা খুলতে তৎপর এই মানুষগুলো। এই উদ্দেশ্যেই জিটিএ ( গোর্খাল্যাণ্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিষ্ট্রেশন) আগামী রবিবার হোটেল মালিক ও সমস্ত স্টেক হোল্ডারকে নিয়ে দার্জিলিং এর জিমখানা ক্লাবে একটি বৈঠক করতে চলেছেন।


নতুন করে পর্যটনের পরিবেশ তৈরি করতে ও পর্যটন নির্ভর মানুষ গুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে জিটিএ’এর এই পদক্ষেপ কে সাদরে অভিনন্দন জানিয়েছে ছোট -বড় সব ধরণের ব্যবসায়ী সহ পাহাড়ের সকল মানুষ। এই প্রসঙ্গে হিমালয়ান হসপিটালিটী অ্যান্ড টুরিজম ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সম্পাদক সম্রাট স্যান্যাল জানান তাঁরা ‘জিটিএ’র এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছেন। তাঁরা এই বৈঠকে উপস্থিত থেকে নতুন কিছু প্রস্তাব দেবেন।
স্যান্যাল বাবু’র মত অনেকেরই ধারণা পাহাড়ে গতি ফেরা দরকার, পাহাড়ের মানুষ কে বাঁচিয়ে রাখার জন্যেই। তাই তাঁরা চাইছেন বৈঠকের মধ্য দিয়েই সমস্ত সমস্যার সমাধান হোক। সামনে পুজো। পুজো মানেই বাঙালীর ঘুরতে বেরোনো, তাই দার্জিলিং হোটেল ওনার্স অ্যাসোশিয়েশনের সভাপতি সাঙ্গে ছেরিং এর মতে বৈঠক ফলপ্রসূ হলে পুজোয় পর্যটনের পুরোনো ছবি কিছুটা হলেও ফিরে আসবে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পর্যটকের প্রভাবে পাহাড়ে করোনা বাড়বে এই দাবিকে সামনে রেখে ‘নিষেধাজ্ঞা’ লাগু করেছিল খোদ পাহাড়ের মানুষই। দার্জিলিং থেকে কালিম্পং পাহাড়ের সর্বত্রই বন্ধের ছবি ছিল। এমন কী পর্যটক হেনস্থার মত ঘটনার ও সাক্ষী থেকেছে শৈল নগরী। সেই জন্যে হোটেল খোলার ভাবনা থাকলেও জিটিএ পিছিয়ে এসেছিল। তবে এখন চিত্রটা অন্য রকম। দীর্ঘদিন বন্ধের ফলে পাহাড়ের আর্থিক অবস্থা ভঙ্গুর। রুটি রুজিতে টান পড়ায় এখন পাহাড় নিজেই চাইছে পর্যটক আসুক।


এই ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে জিটিএ’র চেয়ারম্যান অনীত থাপার কথায়। জিমখানা ক্লাবের একটি অনুষ্ঠানে যোগদান করার আগে ডিএইচওএ’র কয়েকজন প্রতিনিধিকে তিনি জানান বর্তমান পরিস্থিতিতে জিটিএ’র পাশাপাশি সাধারণ মানুষ ও পর্যটনের পক্ষে। তিনিই জানান রবিবারের বৈঠকের কথা।
অন্যদিকে দার্জিলিং অ্যাসোসিয়েশন অফ ট্রাভেলস এজেন্টের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ লামার বক্তব্য-” পর্যটনের দরজা খোলা মানে কিছুটা হলেও স্বস্তির বাতাবরণ তৈরি হবে। তবে ট্রেন পরিষেবা স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত একটা খটকা থেকেই যাচ্ছে।” তবে এই বৈঠক থেকে একটা ভাল বার্তা পৌঁছবে পর্যটকদের কাছে।
এখন যা পরিস্থিতি পাহাড়ের তাতে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে দরজা খুললে পুজোর সময় কিছুটা হলেও পর্যটক টানতে পারবে শৈলনগরী। দার্জিলিং হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন এর সাধারণ সম্পাদক বিনোদ খান্না ও কালিম্পং হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন এর সাধারণ সম্পাদক সিদ্ধান্ত সুদ বলেন, জিটিএ’র সিদ্ধান্তকে তাঁরা স্বাগত জানাচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, গত ১লা জুলাই থেকেই হোটেল খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল কিন্তু স্থানীয়দের বিরোধিতা এবং রাজ্য সরকারের লকডাউন সিদ্ধান্তের কারণে এক সপ্তাহের মাথায় পুনরায় পর্যটনের ঝাঁপ বন্ধ করে দিতে হয়। তাই জিটিএ’র এই নতুন করে বৈঠকের সিদ্ধান্তকে সকলেই একসাথে স্বাগত জানাচ্ছে। তাহলে কী সেপ্টেম্বরেই খুলছে শৈলনগরীর তালা? জানতে হলে রবিবার অবধি অপেক্ষা করতেই হবে।