দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: সূত্র মারফৎ আগেই খবর পাওয়া গিয়েছিল তবুও নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সৌরভের সাক্ষাতের দিন প্রকাশিত হল যে স্কুল গড়ার জন্য তৃণমূল সরকারের কাছ থেকে পাওয়া জমি ফিরিয়ে দেবেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। এমনকী ওই দিনই স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর হাতে জমি ফেরতের চিঠি দিয়ে আসেন সৌরভ। যদিও দু’পক্ষের কেউই সেই দিন ওই বৈঠক নিয়ে মুখ খোলেননি, সৌজন্য সাক্ষাৎ বলেই চালিয়ে দেওয়া হয়েছিল অবশেষে শনিবার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।
যদিও জমি নিয়ে বিশেষ করে তৃণমূল সরকারের দেওয়া জমি ফেরতের বিষয়ে সৌরভের এই পদক্ষেপ ভবিষ্যতে রাজনীতি জগতে তাঁর কোনও বড় সিদ্ধান্তের পূর্বাভাস, এমনটা অনেকেই মনে করছেন। যদিও কেউ প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি। তবে দিল্লি থেকে গোপন সূত্রে প্রাপ্ত খবরে অনুমান পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি দলের মুখ বা মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে সৌরভের নাম কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মাথায় রয়েছে। বিষয়টি বাস্তব পরিণতি পেলে যথাসময়ে ঘোষণাও করা হবে।
নবান্ন সূত্রে খবর, ‘গাঙ্গুলি এডুকেশন অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’র প্রেসিডেন্ট সৌরভ মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে রাজ্যের কাছ থেকে পাওয়া ২ একর জমি ফিরিয়ে নেওয়ার আর্জি জানানোর পরে তা প্রাথমিক ভাবে গৃহীত হয়েছে এবং অর্থ দফতরে ফাইল পৌঁছে গিয়েছে।
উল্লেখ্য, স্কুল তৈরিতে আগ্রহী গাঙ্গুলি এডুকেশন অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার সোসাইটিকে প্রথমে বামফ্রন্টের আমলে সল্টলেকে জমি দেওয়া হয়। তৎকালীন নগরোন্নয়নমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য সেই ব্যাপারে বিশেষ উদ্যোগী হয়েছিলেন । কিন্তু সেই জমি ঘিরে এক বিচার বিভাগীয় মামলায় হেরে জমি ফিরিয়ে দিতে হয়েছিল সৌরভ ও তাঁর সংস্থাকে। যদিও এবারেও প্রধানত মামলারই কারণে তিনি জমি ফেরত দিয়ে দিলেন বলে নবান্ন সূত্রের
দাবি।
নবান্ন সুত্রে দাবি, নিউ টাউনে সিটি সেন্টার ২-এর কাছে ওই জমিতে (প্লট নং আইআইডি-২৯২০/১) দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত আইসিএসই বোর্ডের অনুমোদিত স্কুল করতে চেয়েছিলেন গাঙ্গুলি এডুকেশন অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার সোসাইটি। সেই কারণে হিডকোর তরফ থেকে প্রেসিডেন্ট সৌরভকে তৃণমূল সরকারের জমানায় জমি দেওয়া হয়। যদিও সেখানেও ওই জমি দেওয়া নিয়ে মামলা হয়। সেই মামলা এখনও চলছে। সৌরভের ঘনিষ্ঠ মহল মনে করছে এই মামলার বিষয় এড়িয়ে যাওয়ার কারণেই সৌরভ জমি ফেরত দিয়ে দিলেন।
তবে এই ঘটনার পেছনে ‘রাজনৈতিক’ কারণ ও যে একেবারেই নেই তা মানতে চাইছেন না পর্যবেক্ষকদের অনেকেই। প্রথমত,
বিজেপির শীর্ষ মহল যে সৌরভকে রাজ্যে আগামী নির্বাচনে ‘মুখ’ হিসেবে ভাবছে, তা আগেই বিভিন্ন ভাবে সামনে এসেছে। যদিও সৌরভ ও তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল প্রকাশ্যে এই ধরনের
জল্পনায় আমল দিতে চায়নি। বরং মুখ্যমন্ত্রী মমতার সঙ্গেও যে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্ক মধুর, সেটাই দাবি করা হয়েছে।
দিল্লি থেকে যা আভাস তাতে বিজেপি শিবিরে সম্ভাব্য মুখ্যমন্ত্রীর দৌড়ে সৌরভের মতো এক জন ‘বাঙালি আইকন’-এর ‘পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি’ কাজে লাগতে পারে বলেই দলের উপর মহলে আলোচনা জারি রয়েছে। অন্যদিকে ক্রিকেট প্রশাসক হওয়ার সুবাদে এখন সৌরভের সঙ্গে অমিত শাহের যোগাযোগও
যথেষ্ট মসৃণ। এমত পরিস্থিতিতে রাজ্য বিজেপির পরিচিত
নেতাদের মধ্যে পারস্পরিক টানাপড়েন রুখতে সৌরভকে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব পছন্দ করতে পারেন বলে জল্পনা জোরদার হয়েছে।
সম্প্রতি রাজ্য বিজেপির কেন্দ্রীয় সহ পর্যবেক্ষক অরবিন্দ মেনন সৌরভের জন্মদিনে টুইট করে ক্রিকেট টিম পরিচালনায় তাঁর ‘দক্ষতা’র প্রশংসা করেছিলেন। ওই দিনে সৌরভের স্ত্রী ডোনা ও বলেছিলেন, সৌরভ রাজনীতিতে পা রাখলে শীর্ষেই থাকবেন।
যদিও সৌরভের ঘনিষ্ঠ মহল অবশ্য এ প্রশ্নে চুপ। এখন সময়ই বলবে এই জমি ফেরানোর আসল উদ্দেশ্য।