দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: শনিবার পন্ডিত লক্ষীকান্ত মৈত্রের সুযোগ্য পুত্র, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রাক্তন মন্ত্রী এবং বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ কাশীকান্ত মৈত্রের জীবনাবসান হলো। 29 শে আগস্ট বিকেল চারটে দশ মিনিটে কলকাতার (সল্টলেকের সেক্টর-৩ এর) বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৬ বছর।
পন্ডিত লক্ষ্মীকান্ত মৈত্র ও হিরণ্যবালার একমাত্র সন্তান কাশীকান্ত মৈত্র ১৯২৫ সালের ১৮ই ফেব্রুয়ারী অধুনা বাংলাদেশের ঢাকাতে জন্ম গ্রহন করেন। পরবর্তীতে শান্তিপুর মিউনিসিপ্যাল উচ্চ বিদ্যালয়, কৃষ্ণনগর গভর্মেন্ট কলেজ ও কলকাতায় পড়াশোনা করেন। পেশাদারী জীবনে কোলকাতা হাইকোর্টের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আইনজীবী রূপে পরিচিত ছিলেন। হাইকোর্টের বিচারপতি হিসাবে একাধিকবার তাঁর নাম মনোনীত হয়েছে। কিন্তু তিনি অত্যন্ত বিনয়ের সাথে তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। ১৯৬২ সাল থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার নির্বাচিত সদস্য ছিলেন এবং তিনি প্রত্যেকবারই কষ্ণনগর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জয়লাভ করেছেন।
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী স্বর্গীয় বিধান চন্দ্র রায়ের মৃত্যুর পর প্রফুল্ল চন্দ্র সেন মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহন করেন এবং সে সময় নদীয়া জেলা সহ বেশ কয়েকটি জেলায় ভয়ানক খাদ্য সংকট দেখা দেয়। যা প্রায় দুর্ভিক্ষের চেহারা নেয়। একমুঠো চালের জন্য সেসময় মানুষ হাহাকার শুরু করে। রাজ্যের অন্যান্য অংশের মত নদীয়াতেও শুরু হয় খাদ্য আন্দোলন। সেই খাদ্য আন্দোলনেরও নেতৃত্ব দেন তিনি।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, আইনজীবী পশ্চিমবঙ্গ বাংলার যুক্তফ্রন্ট সরকারের আমলে মুখ্যমন্ত্রী অজয় ভট্টাচার্য এবং পরবর্তী সময়ে কংগ্রেসী জামানায় কংগ্রেস বিধায়ক হিসেবে মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থ শংকর রায়ের মন্ত্রী সভার সদস্য হন। খাদ্য, মৎস্য এবং সুন্দরবন দপ্তরের ক্যাবিনেট মন্ত্রীও হন তিনি। মন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে হরিণঘাটা এবং খাদ্য দপ্তরে শান্তিপুরের বহু যুবককে চাকরিও দেন বলে জানা যায়।


শান্তিপুরের বঙ্গীয় পূরান পরিষদ, পাবলিক লাইব্রেরীর সাথে যুক্ত ছিলেন তিনি। কর্মসূত্রে কলকাতায় থাকলেও দুর্গাপুজো, কালীপুজো, অন্নপূর্ণা পূজার সময় শান্তিপুরের মৈত্র পাড়ার বাড়িতে পারিবারিক পুজোয় অংশগ্রহণ করতেন। দেবী দূর্গার শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করতেন। শান্তিপুরে থাকার সময় বহু মানুষ তার সাথে দেখা করতে আসতেন তিনিও সকলের সাথে কথা বলতেন।
কাশীকান্ত মৈত্রের দুই সন্তানের এক সন্তান প্রয়াত সুব্রত মৈত্রও ছিলেন কোলকাতার স্বনামধন্য চিকিৎসক এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যক্তিগত চিকিৎসক। বর্তমানে তাঁর মেয়ে এবং অন্যান্য পরিজনদের রেখে তিনি অমৃত লোকের পথে যাত্রা করেছেন ।
নির্ভিক, বাগ্মী ক্ষুরধার যুক্তি সম্পন্ন সুবক্তা কাশীকান্ত মৈত্রের ২৯’ শে আগষ্ট জীবনাবসান হওয়ার পর ঐ দিন রাতেই কলকাতার নিমতলা মহাশ্মশানে তাঁর শেষ কৃত্য সম্পন্ন হয়। কাশীকান্ত মৈত্রের জীবনাবসানে রাজ্যের রাজনৈতিক মহল এবং শান্তিপুর সহ তাঁর অন্যান্য বিচরণের জায়গায় শোকের ছায়া নেমেছে।