দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: আর বিলম্ব নয়, অনেকটাই সময় নষ্ট হয়েছে। পড়ুয়াদের ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে পুজোর আগেই নেওয়া হবে রাজ্যের স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের অন্তিম বর্ষের পরীক্ষা।
আজ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের একটি ভার্চুয়াল বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে আগামী ১’লা থেকে ১৮’ই অক্টোবরের মধ্যে গৃহীত হবে ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা। আর আগামী ৩১’শে অক্টোবরের মধ্যেই ফলপ্রকাশ হয়ে যাবে।
উল্লেখ্য, গত ২৮’শে আগস্ট সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয় যে ৩০’শে সেপ্টেম্বরের মধ্যেই কলেজের অন্তিম বর্ষের পরীক্ষা নিতে হবে। UGC ও সুপ্রীম কোর্টের সিদ্ধান্তে সায় দিয়ে জানিয়ে দেয়, রাজ্যগুলি অন্তিম বর্ষের পরীক্ষা ছাড়া কোনও ছাত্রছাত্রীকে উত্তীর্ণ করতে পারবে না। তবে রাজ্যগুলি চাইলে নিজেদের সুবিধা ও সুরক্ষা অনুযায়ী পরীক্ষা পিছতে পারে।
সুপ্রীম কোর্ট ও ইউজিসি’র এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে পরীক্ষা বাতিলের দাবি জানিয়ে আদালতে বেশ কয়েকটি পিটিশন জমা পড়েছিল। পিটিশনারদের দাবি ছিলো এই যে করোনা আবহে সুরক্ষার বিষয় কে এড়িয়ে গিয়ে কিভাবে পড়ুয়াদের জীবনের ঝুঁকি বাড়াতে চাইছে সুপ্রীম কোর্ট ও ইউজিসি? এই একই ইস্যুতে পিটিশন দাখিল করেছিল আদিত্য ঠাকরের যুব সেনাও।
দেশজুড়ে করোনা সংক্রমণ যখন ক্রমবর্ধমান, এমত অবস্থায় পরীক্ষার আয়োজন করলে ছাত্রছাত্রীদের স্বাস্থ্যের সুরক্ষা নিয়ে উদ্বেগ থেকেই যাচ্ছে। তাছাড়া সব রাজ্যের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি বন্ধ থাকায়, পরীক্ষা আয়োজনে লোকবল নিয়ে সমস্যার মুখে পড়তে হবে বলেও পিটিশনে জানানো হয়। তাই একমাত্র পরীক্ষা বাতিলই এই সমস্যা থেকে মুক্তির উপায়, এই মর্মে আর্জি জানানো হয়েছিল সর্বোচ্চ আদালতে।
সুপ্রীম কোর্ট এ পিটিশনারদের উকিলের যুক্তি ছিল, কলেজে ছাত্রছাত্রীরা পাঁচটি সেমেস্টার সম্পূর্ণ করেছে, কিউমুলেটিভ গ্রেড পয়েন্ট অ্যাভারেজ অর্থাত্ CGPA পেয়েছে। তার ভিত্তিতেই চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষা ছাড়াই ফল প্রকাশ করা যায়। কিন্তু আদালত জানায় ইউজিসি সেপ্টেম্বরের শেষের মধ্যে পরীক্ষার আয়োজন করার নির্দেশ দিয়েছিল। ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরীক্ষা ছাড়া ছাত্রছাত্রীদের ডিগ্রি দেওয়া যায় না। সেই সাথে অভ্যন্তরীণ মূল্যায়ণের তত্ত্বে সায় না-দিয়ে ইউজিসি-র সিদ্ধান্তই বহাল রাখে সুপ্রিম কোর্ট। তবে রাজ্যগুলি চাইলে করোনা আবহের কারণে পরীক্ষা পিছিয়ে দিতে হবে বলে জানানো হয়েছে।
তবে শীর্ষ আদালতের মতে কোনোভাবেই পরীক্ষা বাতিল করা যাবে না। শুক্রবার বিচারপতি বলেন, ‘রাজ্যগুলি যদি মনে করে ২০ ‘শে সেপ্টেম্বরের মধ্যে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব নয়, তবে তারা ইউজিসি-র কাছে অতিরিক্ত সময় চেয়ে আবেদন করতে পারে।’ গত দিন ভিডিয়ো কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে এই রায় দেন বিচারপতি অশোক ভূষণ, আর সুভাষ রেড্ডি ও এম আর শাহের বেঞ্চ।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন সেপ্টেম্বর মাসে রাজ্যে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনও পরীক্ষা হবে না। গত শুক্রবার তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসে ভার্চুয়াল বৈঠকে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এ বিষয় নিয়ে কথা বলেন। মমতা ব্যানার্জী অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে নির্দেশ দেন। বলেন, ‘পড়ুয়াদের বিরক্ত করব না আমরা। সেপ্টেম্বর মাসে রাজ্যে পরীক্ষা হবে না।’ আজ পার্থ চট্টোপাধ্যায় তৃণমূল সুপ্রীমোর সেইআজ্ঞাই অক্ষরে অক্ষরে পালন করলেন, ঠিক করে ফেললেন পরীক্ষার তারিখ।
এ দিকে, যাবতীয় বিতর্ক সাথে করেই মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে সর্বভারতীয় JEE আর NEET পরীক্ষা। এই দুই পরীক্ষায় বসবেন সারা দেশের প্রায় ১৪ লক্ষ পরীক্ষার্থী৷