দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: আজ দুপুরের সাংবাদিক সম্মেলনে একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতি দিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমতি মমতা ব্যানার্জী। তিনি সকল কে পুজোয় খোলামেলা প্যান্ডেল করার পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁর মতে প্যান্ডেলের একাংশ খোলা রাখলে আলো বাতাস চলাচলে সুবিধা হবে সেই সাথে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতেও সুবিধা হবে। পুজো উদ্যোক্তাদের এই উদ্দেশ্যে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। পুজোর প্যান্ডেল করা নিয়ে আগামী ২৫ শে সেপ্টেম্বর একটি বৈঠক করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এর পাশাপাশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের রাজ্যে এই মূহুর্তে করোনায় মৃত্যুর হার অনেকটা কমেছে বলেও সোমবার সাংবাদিক বৈঠকে দাবি করেছেন। আজ তিনি রাজ্যের বর্তমান করোনা আবহ সহ একগুচ্ছ পরিসংখ্যান ও প্রতিশ্রুতি পেশ করেছেন সাংবাদিকদের সামনে।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, এই রাজ্যে এখন অক্সিজেন বেড ১২ হাজারের বেশি। করোনায় মৃত্যুর হার ৯ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১.৯৪ শতাংশতে নিয়ে আসা হয়েছে। রাজ্যে সক্রিয় করোনা রোগী ২৩ হাজার ৬২৪ জন। রাজ্যে ৮৬ শতাংশ করোনা রোগীর মৃত্যু কো-মর্বিডিটির কারণে। কো-মর্বিডিটি কথাটা শুনে প্রথমে অনেকে ব্যঙ্গ করেছিলেন। কিন্তু পরে সারা দেশ মেনে নিয়েছে। বললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মুখ্যমন্ত্রী’র মতে রাজ্যে বিজেপি করোনাকে মোটেও গুরুত্ব দিচ্ছে না। যেখানে সেখানে মিটিং করছে এমন কী কেউ কেউ তো বলছেন করোনা রাজ্যে ছেড়ে চলে গিয়েছে। সেই সাথে তিনি এও বলেন যে দিল্লির হিংসায় কী কী হয়েছিল সকলেই জানেন। আন্দোলনকারীদের উপরে হামলা চালানো হয়েছিল। দিল্লিতে যা হয়েছে তা ঠিক হয়নি।
সেই সাথে পুজোর মাস থেকেই ৮ হাজার পুরোহিতকে ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন এরাজ্যে সংখ্যা গুরু মানুষই সনাতন ধর্মালম্বী। সেই জন্যে রাজ্যে সনাতনী ধর্মের তীর্থস্থান হবে। আর তার জন্যে রাজ্য জমি দিচ্ছে।
আমাদের রাজ্যে দলিত সাহিত্য অ্যাকাডেমি গঠনের সিদ্ধান্ত মুখ্যমন্ত্রীর। সেখানে সমস্থ পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের সাহিত্য কৃষ্টির উন্নতিসাধন করা হবে। সেই সাথে রাজ্যে বাস করা হিন্দীভাষী মানুষদের সাংস্কৃতিক উন্নতিকল্পে রাজ্যে হিন্দি অ্যাকাডেমি গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে বলেও জানান শ্রীমতি ব্যানার্জী।
করোনা আবহে আমাদের ডেঙ্গি এবং ম্যালেরিয়াকে ভুলে গেলে চলবে না, সে ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে বলেন তিনি। তিনি এই প্রসঙ্গে রাজ্যের বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষএর নাম না করেই কটাক্ষের সুরে বলেন, এখন অনেকেই বলছে করোনা চলে গেছে। কিন্তু এত সহজ ভাবে একটা অতিমারী যায় না। দ্বিতীয় বার সংক্রমণের ঢেউ আসতে পারে। সে ব্যাপারেও আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।
বিরোধীদের বক্তব্য, আজ মুখ্যমন্ত্রীর পেশ করা এই পরিসংখ্যানে আসন্ন বিধানসভা ভোটে হিন্দু ভোট টানার একটা মরিয়া চেষ্টা দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। নইলে দীর্ঘ দশ বছরে একবারও তাঁর ইমাম ভাতা ছাড়া পুরোহিতদের কথা মনে পড়েন। সেই সাথে হিন্দী ও দলিত অ্যাকাডেমি তৈরি করে কাদের কে তিনি হাত নেরে ডাকছেন সে রাজনীতির দুধের শিশুও জানে।
বিরোধীরা আরও বলেন যে মৃত্যুহার এতটা নেমে যাওয়ার মূলে যে রাজ্য জুড়ে টেস্ট এর পরিমাণই দায়ী সেটা তিনি চেপে যাচ্ছেন। এই মূহুর্তে রাজ্যে দৈনিক ৫০ হাজারেরও ওপরে টেস্ট হচ্ছে, তাই আক্রান্ত ও সুস্থতার হারের সাথে সাথে ব্যস্থানুপাতিক হারে মৃত্যুহার গাণিতিকভাবেই অনেকটা কমে গিয়েছে।
আজ মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্য পেশের পরে রাজ্যরাজনীতি যে ভোটের বাদ্যিতে সরগরম সে কথাই বলছেন রাজনীতি বিশেষজ্ঞরা।