দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: পুজো আসছে। সেপ্টেম্বরের এক তারিখ থেকেই খুলে গিয়েছে গোর্খা টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিষ্ট্রেশন ( GTA) এর অন্তর্গত অধিকাংশ হোটেল, হোমস্টে সহ পাহাড়ের পর্যটনের সাথে জড়িত অধিকাংশ অর্থনৈতিকও ও পর্যটন ব্যবস্থা। এই পাহাড় খোলা নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেছে HHTDN এবং এর সহযোগী উত্তরবঙ্গের সবকটি সংগঠন। শুধু বৈঠক নয় এর পাশাপাশি সরকারী সহযোগীতার দাবি করে রাজ্যের বিভিন্ন অংশে পথেও নামেন তারা। আর তাদের সেই আবেদনে সারা দিয়ে দার্জিলিং এবং কালিম্পং জেলা প্রশাসন পর্যটন সংক্রান্ত ইতিবাচক নির্দেশিকাও জারি করে। কিন্তু এই মূহুর্তে তাদের কাছে চ্যালেঞ্জ পাহাড়ের মানুষের মনে পুনরায় পর্যটনে আস্থা ফেরানো।
এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকারি স্বাস্থ্য নীতি ও SOP কার্যকর করার পাশাপাশি কোভিড পরিস্থিতিতে পাহাড়ের মানুষ কি চাইছেন তা জানতে বিশেষভাবে উদ্যোগী হল হিমালয়ান হসপিটালিটী অ্যান্ড টুরিজম ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক (HHTDN)ও তাদের সহযোগী সংগঠন গুলি।
মঙ্গলবার তাঁরা পৃথকভাবে পাহাড়ের মানুষের সাথে ছোট ছোট বৈঠক করেন। তাদের এই বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য ছিল পাহাড়ের মানুষদের এই মূহুর্তে মানসিক অবস্থার মূল্যায়ণ করা। পর্যটন ছাড়া যে পাহাড়ের অর্থনীতি অন্ধকার, মানুষের রুটি-রুজির ঝুঁকি যে এড়ানো অসম্ভব, এসব বিষয়েই সংগঠনের পক্ষ থেকে তারা তা বোঝালেন পাহাড়বাসীকে।
এই প্রসঙ্গে তাঁরা বলেন সামনেই পুজো। দীর্ঘ ছ’মাস লকডাউনের বিধিনিষেধ মেনে ভ্রমণপিপাসু বাঙালি এখন নিশ্চিতভাবেই পাহাড়ে বেড়াতে আসার কথা চিন্তা করছেন এমন কী তারা হোটেলের খোঁজ ও বুকিং ও প্রায় শুরু করে দিয়েছেন। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে কীভাবে করোনা-শঙ্কা দূরে করে এবং নিজেদেরকে সুরক্ষিত রেখে পর্যটকদের স্বাগত জানাতে হবে তা নিয়েই তাঁরা মূলত এখানকার বিভিন্ন স্থানীয় অঞ্চল সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।
হসপিটালিটি এন্ড ট্যুরিজম ডেভলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক সম্রাট সান্যাল বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে পাহাড়ের সাধারণ মানুষ কী ভাবছেন তাও জানা অত্যন্ত প্রয়োজন ছিল। তাই এখানকার প্রচুর মানুষের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। মত বিনিময়ের মাধ্যমে আমরা পর্যটনের নতুন রূপরেখা তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি পাহাড়ে হোটেল এবং রেস্তোরাঁ পুনরায় চালু করার অনুমতি দিয়েছে দার্জিলিং এবং কালিম্পং জেলা প্রশাসন তবে এখনও পর্যন্ত সেই অর্থে পাহাড়ে পর্যটক এর পা পড়েনি। তাছাড়া কোভিড পরিস্থিতিতে বাইরের লোক আসা নিয়ে যথেষ্ট আশঙ্কায় রয়েছেন পাহাড়ের বড় একটা অংশ। ইতিপূর্বে পর্যটনের দ্বার খুলে দেওয়া হলেও বিরোধীতার কারণে তা বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। সেখানেও মানুষের একটা বড় অংশের মনে অহেতুক সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়ে অসন্তোষ দানা বেঁধে ছিল। তাই সেই অংশের মানুষেরা যাতে নতুন করে বিরোধের রাস্তায় না হাঁটেন এর জন্য পৃথক ভাবে দুটি সংগঠনের এই উদ্যোগ বলে মনে করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, তিন দফায় টানা লকডাউন শেষ হতে হতেই জুলাই মাসেই সমস্ত হোটেল খোলার অনুমতি দিয়েছিল রাজ্য প্রশাসন। রাজ্যের বাকি অংশের সঙ্গে পাহাড়ের হোটেলও খোলা হয়েছিল কিন্তু সাত দিন যেতে না যেতেই তা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের বা GTA। এই ঘটনার মূলে ছিল স্থানীয়দের বিরোধিতা এমনকি দার্জিলিং কালিম্পং এ শুধুমাত্র গুজবের জেরে পর্যটক হত্যার ঘটনাও ঘটেছে।
সেকারণে এবার নতুন করে জেলা প্রশাসন পর্যটন চালুর ক্ষেত্রে সবুজ সঙ্কেত দিলেও পর্যটন নিয়ে কিছুটা হলেও আশঙ্কিত পর্যটন ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে পাহাড়ে হোটেল খোলার খবর প্রকাশিত হওয়ার পরেই পাহাড়ের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজখবর শুরু করেছেন পর্যটকরা। অনেক ক্ষেত্রেই কোনো সঠিক উত্তর দিতে পারছেন না HHTDN। আর সে কারণেই মঙ্গলবার পাহাড়ে HHTDN পৃথকভাবে বিভিন্ন আঞ্চলিক সংগঠনের সাথে বৈঠক করে। মঙ্গলবার তাঁরা আলোচনার জন্যে বেছে নিয়েছিলেন সিটং অঞ্চলকে। পাহাড়ের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন মানুষ ও সংগঠনের সঙ্গে কথা বলেন সম্রাট সান্যাল, তন্ময় গোস্বামী, জিতু গিরি ও শান্তনু চৌধুরীরা।
সেখানে ছোট ছোট বৈঠক করা হয়। সিটং ও এর সংলগ্ন আশপাশ এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে আলাদা ভাবে বৈঠক হয়। বৈঠকে আলোচনা হয় যে কিভাবে পর্যটকদের কে আকর্ষিত করতে হবে, কিভাবে সুরক্ষা বিধি মানতে হবে এই সব। আলাদা ভাবে আপার সিটং হোমস্টে এবং লাটপাঞ্চার হোমস্টে অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গেও বৈঠক করেন তাঁরা। সরকারি স্বাস্থ্য বিধিতে নজর দিলে যে নিজেদের সুরক্ষিত রাখা সম্ভব এবং তাতেই যে জীবন ও জীবিকার নতুন করে সংস্থান হবে সেটাই তাঁরা বোঝান পাহাড়ের মানুষদের। বৈঠক শেষে HHTDN জানান, পাহাড়ের মানুষ নতুন করে আশাবাদী। তারাও চাইছেন মানুষ পাহাড়ে আসুক।