দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: আইনজীবী রজত দে হত্যাকাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত স্ত্রী অনিন্দিতা পাল দে’কে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা শোনালো বারাসাত দায়রা আদালত। বুধবার বারাসাত আদালতের ফাস্টট্র্যাক থার্ড কোর্টের বিচারক সুজিত কুমার ঝা এই সাজা শোনান। সাজা ঘোষণার পরে স্বাভাবিক ভাবেই মিশ্র প্রতিক্রিয়া বিভিন্ন মহলে। অনিন্দিতাকে আদালত কক্ষ থেকে কোর্ট লকআপে নিয়ে যাওয়ার সময়ে আইনজীবীদের একাংশ আওয়াজ তোলে অনিন্দিতার কালো হাত ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও। ঘটনাকে কেন্দ্রকরে কোর্ট চত্ত্বরে ব্যপক অরাজকতা দেখা দেয়। পুলিশকে সামাল দিতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়।
আজ বিচারক তার জাজমেন্ট শিটের ১৭৬ ও ১৭৭ পৃষ্ঠার ২৩৮ নম্বর প্যারার পরতে পরতে তৎকালীন নিউটাউন থানার পুলিশ কর্মী ও এই কেসের প্রথম তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিক মৌলি খামারু ও আইসি অতনু ঘোষালকে তিরস্কার করেন। এদিন সকালে একটি সেচ্ছাসেবী সংগঠন অনিন্দিতার ফাঁসির দাবিতে আদালত চত্ত্বরে বিক্ষোভ দেখায়। স্বাভাবিক কারনেই আদালত চত্ত্বরে উত্তেজনা ছড়ায়।
এদিন বিকেলে হাইকোর্টের আইনজীবী রজত দে হত্যাকাণ্ডে দোষী অনিন্দিতাকে আমৃত্যু কারাবাসের পাশাপাশি ১০ হাজার টাকা জরিমানা করে অনাদায়ে অতিরিক্ত ৬ মাসের জেল। অন্য একটি ধারায় ২ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৩ মাসের অতিরিক্ত জেলের নির্দেশ দেন বিচারক। একই সঙ্গে অন্যান্য সাজাও চলবে।
উল্লেখ্য, গত সোমবার-ই অনিন্দিতাকে তার আইনজীবী স্বামী রজত দে- হত্যায় দোষী সাব্যস্ত করেছিল বারাসাত আদালত। প্রসঙ্গত আইনজীবী রজত দে কে ২০১৮ সালের ২৫ নভেম্বর তার নিউ টাউনের ফ্ল্যাটে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। তার কয়েকদিনের মধ্যেই, ১ ডিসেম্বর পুলিশ তার আইনজীবী স্ত্রী অনিন্দিতাকে গ্রেপ্তার করে। বাইশ মাসের মধ্যে আদালত অনিন্দিতা পাল দে-কে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা শোনালো।
আজ আদালতের দেওয়া সাজার নির্দেশে খুশি রজত দে-র বাবা সমীর কুমার দে। সরকারী আইনজীবী বিভাস চ্যাটার্জী সাংবাদিকদের বিচারকের নির্দেশের বিষয়টি জানিয়ে বলেন, দু বছরের কম সময়ে দোষী প্রমাণ করার প্রক্রিয়া শেষে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা শুনিয়েছেন বিচারক। অন্যদিকে অভিযুক্তের আইনজীবী সোহিনী অধিকারী এই রায় বিক্রিত আক্ষা দিয়ে বলেন এই রায়ের বিরুদ্ধে তাঁরা উচ্চতর আদালতে যাবেন।
এদিন অনিন্দিতাকে সকাল ১১টা ২০ নাগাদ আদালতে আনে পুলিশ। সেদিন তার শরীরি ভাষা ছিল অনেক নমনীয়। দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর সেদিন এজলাসে সাড়ে তিন বছরের ছেলের কথা উল্লেখ করে কান্নায় ভেঙে পড়েছিল আনিনন্দিতা। তবে আজ সাজা ঘোষণার পর তিনি ছিলেন একদম নির্লিপ্ত।
জন্মদিনের উপহার অধরা থেকে গেল অনিন্দিতার। পনেরো তারিখ জন্মদিন ছিল অনিন্দিতার। সোমবার ছিল রজত দে হত্যা কাণ্ডের রায় দান। সেদিন সকালে বাড়ি থেকে খুব আশা নিয়েই বারাসাতের দিকে রওয়ানা হয়েছিলেন জামিনে মুক্ত অনিন্দিতা। নির্দোষ সাব্যস্ত হবেন আশা নিয়েই বাড়ির থেকে বাবা অলোক পালের হাত ধরে বেরিয়েছিলেন অনিন্দিতা জন্মদিনের আগের দিনই।