দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: সিঙ্গুর, বাংলার মসনদের উলটপুরাণের সোপান। লাল রঙ মুছে সবুজের উত্থান। ২০১১ সালে এই সিঁড়িতেই পা রেখে মমতা ব্যানার্জী’র তৃণমূল পশ্চিমবঙ্গে বাংলায় ক্ষমতা দখল করেছিলো। বামেদের ‘কৃষি আমাদের ভিত্তি শিল্প আমাদের ভবিষ্যত্’ স্লোগান কে বাস্তবায়িত করতে ন্যানো কারখানা স্থাপন হচ্ছিল সেখানে। কিন্তু মমতা ব্যানার্জী ও তৃণমূলের আন্দোলনের চাপে শিল্পগুটিয়ে রাজ্য ছাড়ে শিল্পপতি টাটা গোষ্ঠী।
জয়ের আনন্দে সিঙ্গুরে এসে সর্ষে বীজ ছড়ান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু দীর্ঘ ৯ বছরে সিঙ্গুরের নিষ্ফলা জমিতে ফসল না ফললেও এবার বিধানসভা নির্বাচন কে সামনে রেখে সিঙ্গুরে প্রায় ১০ একর জমিতে কৃষি হাব গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নবান্ন।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী’র মতে এই কৃষি হাব তৈরির এই উদ্যোগ স্থানীয় মানুষের উন্নয়নে এবং ব্যাপকহারে কর্মসংস্থানের লক্ষ্যেই। ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের ভ্রান্ত কৃষি নীতি, বাংলাকে আর্থিকভাবে বঞ্চনা–সহ একাধিক জনবিরোধী নীতির প্রতিবাদে জেলায় জেলায় শুরু হয়েছে ‘মেঠো প্রতিবাদ আন্দোলন’।
এই কর্মসূচির অঙ্গ হিসেবে পশ্চিমবঙ্গ কিসান ও খেতমজুর সংগঠনের ডাকে বুধবার এই কর্মসূচিতে সামিল হন সিঙ্গুরের কৃষকরাও। তারা তৃণমূলের নেতৃত্বে কাঁধে কোদাল নিয়ে মাঠে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রবিরোধী আওয়াজ তোলেন। ওই কর্মসূচি চলাকালীন ফোনে কৃষকদের উদ্দেশে বার্তা দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ফোনে তিনি সিঙ্গুরের কৃষকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘সিঙ্গুরে ১০ একর জমিতে কৃষি হাব গড়ে তোলা হবে। এই প্রকল্পে উপকৃত হবেন স্থানীয় মানুষ। বাড়বে কর্মসংস্থান।’ একইসঙ্গে তিনি অভিযোগ করেন ‘কেন্দ্রে বিজেপি ফড়েদের নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে উৎপাদিত শস্য কিনে বিদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে। যে কারণে আলু–পেঁয়াজের দাম উর্ধমুখী। ’
এই প্রতিশ্রুতির আগেই মুখ্যমন্ত্রী সিঙ্গুরের উন্নয়নের স্বার্থে তাঁর পরিকল্পনা জানিয়েছিলেন। তাঁর পরিকল্পনা অনুযায়ী , সিঙ্গুরে একদিকে কৃষি আর অন্যদিকে হাইওয়ে ধরে শিল্প তৈরির কাজ হতে পারে। সেখানে অ্যাগ্রো–ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক হচ্ছে। শীঘ্রই অ্যাগ্রো–প্রসেসিং কৃষিজাত পণ্য নিয়ে সিঙ্গুরে কাজ করা হবে। সেই ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক এ চাকরি পাবেন ওই অঞ্চলেরই বহু মানুষ।
যদিও বিরোধীদের বক্তব্য, যে শিল্পের বিরোধীতা করে তিনি অনশনে বসেছিলেন আজ ৯ বছর পর এসে সেই শিল্পকেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সিঙ্গুরের মাঠে স্থাপন করতে চাইছেন। আসলে মমতা ব্যানার্জী নিজেও জানেন সিঙ্গুরের ওই জমিতে চাষ আবাদ সম্ভব নয়। এ ভোটের রাজনীতিকে সামনে রেখে ওনার পুরোনো খাতার নতুন ফর্মুলা।
যদিও সূত্রের খবর, কৃষিহাব হওয়ার খবরে মানুষের মনে কিছুটা হলেও আসার আলো জেগেছে। তাদের দাবি, ভোটের কারণে হলেও যদি তাদের রুজি রোজগারের ব্যবস্থা হয় তাহলে এর থেকে বড় বরদান আর কিছুই নেই। তারা অধীর আগ্রহে এই প্রকল্পের বাস্তবায়নের অপেক্ষা করছেন।