দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: হর্ষবর্ধন লোধাকে এমপি বিড়লা গ্রুপ কোম্পানির পদ থেকে অপসারণের নির্দেশ দিল উচ্চ আদালত। এর ফলে ১৬ বছরের পুরনো এক বিতর্ক যা প্রিয়ম্বদা বিড়লার উইল নিয়ে তৈরি হয়েছিল সে মামলাতে বিড়লা পরিবারের বড় জয় এলো।
আজ কলকাতা হাইকোর্টে এই বিতর্কে প্রাথমিকভাবে লোধারা ধাক্কা খেলেও বিতর্ক এখনই সম্ভবত মিটছে না। কারণ, সূত্রের খবর,লোধাদের তরফে আইনজীবী ফক্স অ্যান্ড মন্ডলের ধনঞ্জয় মন্ডল জানিয়েছেন, তাঁর মক্কেল হাইকোর্টের এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রীম কোর্টে যাবেন।
এদিন আদালতের রায় ঘোষণার পর বিড়লা কর্পোরেশন লিমিটেডের তরফে একটি বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, কলকাতা হাইকোর্টের রায় বিশ্লেষণ করে তবেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে। এমনকি সুপ্রীম কোর্টে আপিলও করা হতে পারে। কারণ, এই রায়ে বিড়লা কর্পোরেশন লিমিটেডের শেয়ার হোল্ডারদের গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করা হয়েছে। ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে যে, হর্ষবর্ধন লোধা ৯৮ শতাংশ শেয়ারহোল্ডারের সমর্থন নিয়ে তবেই বিড়লা কর্পোরেশনের ডিরেক্টর নির্বাচিত হয়েছিলেন। এখন লোধা কে ডিরেক্টরের পদ থেকে নামনো মানে শেয়ারহোল্ডারদের সেই মতামতকে অমর্যাদা করা।
এই বিবৃতির পাল্টা বিবৃতিও দিয়েছেন বিড়লারা। সেই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আদালতের এই নির্দেশের অর্থ একটি প্রশাসক কমিটি বলবৎ করা। অর্থাৎ হর্ষবর্ধন লোধা এমপি বিড়লার গ্রুপ কোম্পানির কোনও পদে থাকতে পারবেন না । এমনকি এমপি বিড়লায় ডিরেক্টর পদেও তিনি থাকতে পারবেন না। সেই সঙ্গে বিড়লা গোষ্ঠীর সমস্ত ট্রাস্ট ও সোসাইটির কোনও পদে থাকার তাঁর আর কোনো আইনি ক্ষমতা রইল না।
শুক্রবার আদালত স্পষ্ট জানিয়েছে, প্রিয়ম্বদা বিড়লার এস্টেট বিতর্কে যে প্রশাসক কমিটির গঠন করা হয়েছে তার সিদ্ধান্তে লোধা কোনওরকম হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। বিড়লাদের বক্তব্য, প্রশাসক কমিটি সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
উল্লেখ্য, পারিবারিক ভাবে ব্যবসা ও বাণিজ্যে বিড়লা পরিবার বহুদিন ধরে সমৃদ্ধ। আদিত্য বিড়লা গ্রুপের বর্তমান চেয়ারম্যান কুমার মঙ্গলম বিড়লার কাকা ছিলেন মাধপ প্রসাদ বিড়লা। যিনি এমপি বিড়লা বলে পরিচিত ছিলেন। তাঁর স্ত্রী ছিলেন প্রিয়ম্বদা বিড়লা। এই প্রিয়ম্বদার উইলকে নিয়েই যত বিতর্ক। জানা যায়, ১৯৮২ সালে প্রিয়ম্বদা একটি উইল করেছিলেন। সেই তথাকথিত উইলে তিনি এমপি গ্রুপের শেয়ার (বিড়লা এস্টেট) রাজেন্দ্র সিং লোধাকে হস্তান্তরের কথা বলে গিয়েছিলেন। প্রয়াত রাজেন্দ্র সিং লোধা ছিলেন কলকাতার অন্যতম প্রতিষ্ঠিত চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট।
কিন্তু এরপর সেই উইলের কথা জানাজানি হওয়ার পর থেকেই বিড়লা পরিবারের একাধিক সদস্য রাজেন্দ্র সিং লোধা’র এক্তিয়ার নিয়েই চ্যালেঞ্জ করেন। এই বিষয়ে এমপি বিড়লার বোন লক্ষ্মীদেবী নেওয়ারের উত্তরাধিকারী অরবিন্দ এবং তাঁর ভাই অজয় লোধার বিরুদ্ধে মামলা করেন।
২০১৯ সালে এই মামলা নতুন মোড় নেয়। কলকাতা হাইকোর্ট এর নির্দেশানুসারে নিযুক্ত প্রশাসক বোর্ড সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে জানিয়ে দেয়, গ্রুপ কোম্পানির দুটি প্রতিষ্ঠান বিন্ধ্যা টেলিলিঙ্ক এবং বিড়াল কেবলের পদ থেকে লোধাকে অপসারণ করতে হবে। এমনকি মুনাফার ভিত্তিতে কোনও পারিশ্রমিকও তাঁকে দেওয়া যাবে না।
একই ভাবে এ বছর প্রশাসক বোর্ড জানিয়ে দিয়েছে, বিড়লা কর্পোরেশন ও ইউনিভার্সাল কেবলের বোর্ডেও হর্ষবর্ধন লোধাকে পুনর্নিয়োগ করা যাবে না। মুনাফার ভিত্তিতে কোনও পারিশ্রমিকও দেওয়া যাবে না। প্রশাসক বোর্ডের ওই নির্দেশ কার্যকর করার জন্যই বিড়লারা নতুন করে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। যা নিয়ে পুনরায় নতুন করে আইনি লড়াই শুরু হয়।
তবে এই শুক্রবার হাইকোর্টের এই রায়ের পর দুই শিবির যে রকম বিবৃতি ও তার পাল্টা বিবৃতি দিয়েছে তাতে বিতর্ক যে থামলো না বরং বেড়েই গেল আর তা যে আগামী দিনে আরও গড়াবে সে ব্যপারে বিশেষ কোনো সন্দেহ নেই।