দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে আয়ুষ্মান ভারত যোজনায় পাঠানো কেন্দ্রীয় সরকারের চিঠি ডাকঘর থেকে মানুষের বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছতে দেওয়া হয়নি, এমনটাই অভিযোগ ছিল বিরোধীদের। এমনকি মমতা ব্যানার্জী’র ও দাবি ছিল রাজ্যের চলমান ‘স্বাস্থ্য সাথী’ প্রকল্প’র হুবহু কপি করে কেন্দ্র নাম কামাতে চাইছে। এবার সেই অবস্থান থেকে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে আজ নবান্ন থেকে সাংবাদিকদের জানানো হয় যে এই দুই প্রকল্পই রাজ্যে চালু করতে চেয়ে কেন্দ্রকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, বহুবার কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ও রাজ্যের বিজেপি নেতৃত্বের সমালোচনার শিকার হতে হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের, তার একটাই কারণ ‘প্রধানমন্ত্রী কিসান সম্মান নিধি যোজনা’ ও ‘আয়ুষ্মান ভারত যোজনা’— এই দুই কেন্দ্রীয় প্রকল্প রাজ্যে চালু না করা।


মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চলতি মাসের ৯ তারিখ কেন্দ্রীয় কৃষি ও কৃষক কল্যাণমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমর এবং কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ড. হর্ষ বর্ধনকে দুটি চিঠি পাঠিয়েছেন। সেই চিঠির একটিতে মন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমরকে শ্রীমতি ব্যানার্জী পরিষ্কার জানিয়েছেন যে কেন্দ্রীয় সরকার ‘প্রধানমন্ত্রী কিসান সম্মান নিধি’ প্রকল্প নিয়ে আসার অনেক আগেই কৃষক বন্ধু ও অন্যান্য প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলার কৃষকদের সহায়তা করেছে রাজ্য সরকার। আর দ্বিতীয় চিঠিতে মন্ত্রী ড. হর্ষ বর্ধনকে তিনি জানিয়েছেন যে, কেন্দ্রীয় সরকারের ‘আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প’ নিয়ে আসার অনেক আগে থেকেই পশ্চিমবঙ্গে প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান করা হয়।
প্রসঙ্গত, রাজ্যে ‘প্রধানমন্ত্রী কিসান সম্মান নিধি’ প্রকল্প চালু না হওয়ায় মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের প্রতি নিন্দা জানিয়ে আজ মঙ্গলবার সকালে টুইট করেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। রাজ্যপাল টুইটে জানিয়েছেন যে, এই প্রকল্প চালু না হওয়ার কারণে পশ্চিমবঙ্গের ৭০ লক্ষ কৃষক ৮,৪০০ কোটি টাকার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এমনকি প্রশাসন এই যোজনা চালু না করায় প্রত্যেক কৃষকের প্রতি বছরে ১২ হাজার টাকা করে ক্ষতি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন যে, রাজ্যপালের এই অভিযোগের পাল্টা উত্তর দিতে এদিন রাজ্য’র প্রশাসনিক দফতর থেকে টুইট করে জানিয়ে দেওয়া হল যে, ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী নিজেই এই প্রকল্প চালুর জন্য কেন্দ্রকে চিঠি পাঠিয়েছেন।


উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. হর্ষ বর্ধনকে পাঠানো চিঠিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শর্ত রেখেছেন যে ‘আয়ুষ্মান ভারত যোজনা’ রাজ্যে সম্পূর্ণভাবে চালু করতে হলে তার ১০০ শতাংশ খরচই বহন করতে হবে কেন্দ্রকে। এবং এএই প্রকল্পের জন্যে পাঠানো পুরো ফান্ড রাজ্যের হাত ঘুরে তবেই সংশ্লিষ্ট দফতরে পৌঁছবে। সেই অনুমতিও রাজ্যকে দিতে হবে। এই একই কথা বলা হয়েছে কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমরকে পাঠানো চিঠিতে। কৃষি প্রকল্পের ক্ষেত্রেও ফান্ড সরাসরি রাজ্য সরকারের হাতে দেওয়ার শর্ত চাপানো হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী’র এই চিঠি প্রদান কে বিরোধীরা ‘ঘুলিয়ে জল খাওয়ার’ সাথে তুলনা করেছেন সেই সাথে তাদের বক্তব্য, এটাও মমতা ব্যানার্জী’র কাটমানি খাওয়ার বড় প্ল্যান। প্রকল্পের টাকা সরাসরি রাজ্যের হাতে এলে সেখানে নিজের নাম ও ছবি দিয়ে সরল কৃষকদের ২০২১ এর ভোটের আগে বোঝানো হবে যে মুখ্যমন্ত্রীর জন্যেই এই টাকা ঢুকেছে। তবে বিরোধীদের দাবি নস্যাত করে তৃণমূলের বক্তব্য, যাতে হিসেবে গরবর না হয় বা কেন্দ্র-রাজ্য বোঝাপড়া ঠিক থাকে সে কারণেই এই শর্তারোপ।