দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে সমস্ত রাজ্য সরকারী কর্মচারীকে বকেয়া ডিএ মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিল স্যাট (স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইবুনাল)। স্যাট’এর আগের নির্দেশ রাজ্য অমান্য করায় আদালত অবমাননার মামলা করেছিল একটি সরকারী কর্মচারী সংগঠন।
প্রসঙ্গত, রাজ্যের পক্ষে ঘোষণা করা হয়েছিল যে ষষ্ঠ বেতন কমিশন চালু হলেও বকেয়া ডিএ দেওয়া হবে না। কিন্তু আজকের এই রায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের উপরে নিঃসন্দেহে বড় চাপ তৈরি করলো। সরকার আগেই করোনা পরিস্থিতির জন্য আগামী দেড় বছর কেন্দ্র কর্মীদের মহার্ঘ ভাতা বাড়াবে না বলে জানিয়েছে। তবে গত ১’লা জানুয়ারিতেই কেন্দ্রীয় সরকারী কর্মীদের ৪ শতাংশ ডিএ ঘোষণা হয়েছিল। এর ফলে বিভিন্ন কর্মচারী সংগঠনের দাবি কেন্দ্রের ওই ডিএ বৃদ্ধির জন্যে রাজ্য সরকারী কর্মীদের বকেয়া মহার্ঘ ভাতা বেড়ে ২১ শতাংশে পৌঁছেছে।
উল্লেখ্য, বকেয়া ডিএ নিয়ে রাজ্য বনাম রাজ্য সরকারী কর্মচারীদের লড়াই দীর্ঘদিনের। এই নির্দেশের আগে স্যাট রাজ্য সরকারী কর্মীদের যাবতীয় বকেয়া মেটানোর পূর্বের নির্দেশে বলেছিল, ষষ্ঠ বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করার আগেই ২০০৬ সাল থেকে বকেয়া যাবতীয় পাওনা সরকারী কর্মীদের মিটিয়ে দিতে হবে।
এর নির্দেশের পরে আবার ২০১৯ সালের ২৬ জুলাই রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিল, পরবর্তী ছ’মাসের মধ্যে রাজ্য সরকারী কর্মীদের ডিএ দিতে হবে। কিন্তু রাজ্য সরকার বারবার এই নির্দেশ অমান্য করায় সরকারী কর্মীদের সংগঠন পুণরায় স্যাটে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করে। রাজ্যও এর পাল্টা হিসেবে পুনরায় স্যাটে রিভিউ পিটিশন দায়ের করে। বিগত ৩ মার্চ রিভিউ পিটিশনের শুনানি শেষ হয়। কিন্তু যেহেতু রাজ্য সরকার সেই নির্দেশ পুরোপুরি মানেনি তাই রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করে স্যাটে।
এরপর গত জুলাই মাসের ৮ তারিখে স্যাট রাজ্য সরকারের সেই আবেদন খারিজ করে দেয়। রাজ্যকে স্যাট জানিয়ে দেয় যে রাজ্য সরকারী কর্মচারীদের বকেয়া ডিএ দিতেই হবে, এটা তাদের অধিকারের মধ্যেই পড়ে। কিন্তু এই করোনা পরিস্থিতিতে এখন ডিএ দেওয়া সমস্যা বলে রাজ্যের পক্ষ থেকে জানানো হয়। এই বিষয়ে স্যাট পুনর্বিবেচনার কথা ভাববে বলে রাজ্যকে জানায়।
স্যাটে মামলা করেছিল কংগ্রেস সমর্থিত ‘কনফেডারেশন অব স্টেট গভর্মেন্ট এমপ্লয়িজ়’ ছাড়াও আরও দু’টি সরকারী কর্মীদের সংগঠন। তাদের দাবি কেন্দ্রীয় হারে ডিএ বা মহার্ঘ ভাতার দিতে হবে রাজ্য সরকারকে। এই বিষয়ে উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে স্যাটের রায়ে বলা হয়েছিল যে, ডিএ দেওয়া বা না -দেওয়া রাজ্যের ইচ্ছার উপরে নির্ভর করে।
স্যাটের সেই বিতর্কিত রায়কে চ্যালেঞ্জ করে আবার ২০১৭ সালের ৩০ মার্চ কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় সরকারী কর্মচারিদের সংগঠন। ঠিক এর পরের বছর অর্থাত্ ২০১৮ সালের ৩১ অগস্ট কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্ত ও বিচারপতি শেখর ববি শরাফের ডিভিশন বেঞ্চ এই মর্মে রায় দেয় যে, ডিএ সরকারী কর্মীদের অধিকার। সেই সাথে ওই মামলাটি পুনরায় স্যাটে ফিরিয়ে দিয়ে ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দেয় যে ডিএ কীভাবে ও কী হারে দেওয়া হবে, তা বিচার করে স্যাট তিন মাসের মধ্যে তার রায় জানাবে।
হাইকোর্টের সেই রায়ের কপি রাজ্য সরকারের হাতে এলে রাজ্য সরকার ওই রায় পুনর্বিবেচনা করে দেখার জন্য ডিভিশন বেঞ্চে একটি রিভিউ পিটিশন দাখিল করে। গত বছরের ৭ মার্চ হাইকোর্টের বিচারপতি হরিশ টন্ডন ও বিচারপতি শেখর ববি শরাফের ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যের দায়ের করা সেই রিভিউ পিটিশন খারিজ করে দেয়। এর পড়ে জুলাইয়ে রায় ঘোষণার পরেও রাজ্যের তরফে ডিএ মেটানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
কিন্তু একটা বিষয় লক্ষণীয় যে এই মামলায় বারবারই হেরেছে রাজ্য সরকার। কিন্তু এই বিষয়ে রাজ্য সরকারের অবস্থা ‘মচকাই কিন্তু ভাঙ্গি না’ গোছের। এবার ফের একবার স্যাট জানিয়ে দিল, রাজ্য সরকারী কর্মচারীদের অধিকার বকেয়া ডিএ দিতে হবে।
এই প্রসঙ্গে রাজ্য স্টিয়ারিং কমিটির সাধারণ সম্পাদক সংকেত চক্রবর্তী বলেন, “সত্যের জয় হবেই। সত্যের জন্য লড়াই জোর করে দমিয়ে রাখা যায় না। এই লড়াই করতে গিয়ে অনেকেই অনেক সাফার করেছে। আজকের রায়ে আমরা ভিশন খুশি, এটা আমাদের জয়। তবে এবারেও রাজ্য সরকার হয়তো নির্দেশ না মেনে সুপ্রিম কোর্টে মামলা টেনে নিয়ে যেতে পারে, আমরা তার জন্যেও প্রস্তুত।”
সূত্রের খবর, সরকারী কর্মীদের সংগঠনের পক্ষ হয়ে অ্যাডভোকেট সর্দার আমজাদ আলি বলেন, “রাজ্য বারবারই হারার পরেও ডিএ দিচ্ছে না। তাই আদালত অবমাননার মামলা হয়। সেই মামলার রায়েই ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত তারিখ ঘোষণা করেছে স্যাট। কেন্দ্রীয় সরকারী কর্মচারীদের সমান হারে ডিএ দিতে হবে। চিফ সেক্রেটারিকে এই নির্দেশ পালন করার রায় দিয়েছে স্যাট।” আজ সর্দার আমজাদ আলির সাথে মাসুম আলি সর্দার এবং ফিরদৌস শামিম নামে আরও দুই অ্যাডভোকেট ছিলেন।