দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার ছিল শারদোৎসবের প্রস্তুতি বৈঠক। এই প্রস্তুতি বৈঠকে হাজিরা দিয়েছে সব পূজা কমিটির মেম্বার রা। এই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীকে দেখতে পাওয়া গেল দশভুজা দুর্গার মতই বিভিন্ন রূপে। বিরোধীদের প্রসঙ্গে তিনি যেমন অসুরদলনী, নাম না করে আপত্তিকর ভাষায় আক্রমণ করলেন, ‘শকুন’ বলে কটাক্ষও করেন তিনি। যদিও মুখ্যমন্ত্রীর মুখে আগেও শোনা গিয়েছে এই শব্দ। তবে বিরোধীদের মতই নিজের শব্দচয়ন যে মার্জিত করতে তিনি নারাজ, তা ফের একবার বুঝিয়ে দিলেন তিনি।
তিনি বিরোধীদের উদ্দেশে নাম না করে বলেন, ‘আমরা পুজো নিয়ে রাজনীতি করি না। ওরা শকুনের মতো ওঁত পেতে বসে আছে। যারা বলে, তাদের তো কোনও দায় নেই। যারা সরকারে আছে সব দায় তাদের। পুলিশকে সব সময় দোষ দিলে হবে না। যদি বলি করব না, তাহলেও কথা বলবে। আবার করলেও কথা বলবে। শকুনির মতো নাচতে শুরু করবে। পুজো আমি বন্ধ করতে পারি না। সে অধিকার আমার নেই। ঈদও আমি বন্ধ করতে পারি না। ভিড় এড়ানোর ব্যবস্থা নিয়েই পুজো হবে।’
আজ বৈঠকে পুজোর আয়োজনে মাতৃ সুলভ ভঙ্গিমাতে কমিটিগুলিতে যাবতীয় সতর্কতা মেনে চলার পরামর্শ দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, কোনও ভাবেই যেন পুজোর জন্য করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি না পায়। যেভাবে গ্লোবাল অ্যাডভাইজারি কমিটি নির্দেশ দিয়েছেন সেটার ভিত্তিতেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে পূজা কমিটিগুলিকে।
করোনা পরিস্থিতিতে আসন্ন শারদোৎসবের বিধিনিয়ম বৃহস্পতিবার ঠিক করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুজো কমিটি, পুলিশ ও ধর্মগুরুদের নিয়ে এই বৈঠকে আসন্ন শারদোৎসবের রূপরেখা ঠিক করে দেন তিনি।
সেই সাথে বৃহস্পতিবারের বৈঠকে রাজ্যের সমস্ত পুজোকমিটিকে ৫০,০০০ টাকা করে অনুদান দেওয়ার ঘোষণা করেছেন তিনি। সেই সাথে এও জানিয়েছেন যে পুরসভা, পঞ্চায়েতের কর ও দমকলের ফি এবার মকুব করা হয়েছে। পুজোতে মন্ডপ ও আলোক সজ্জার জন্য বিদ্যুতের খরচ দিতে হবে মাত্র ৫০ শতাংশ।
এর পাশাপাশি পুজোর মুখে রাজ্য সরকারের আর্থিক সংকট সত্বেও ফের একবার কল্পতরু হলেন, বিক্ষুব্ধ আশাকর্মী ও সিভিক ভলান্টিয়ারদের বেতনবৃদ্ধির ঘোষণা করলেন। এমনকী বঞ্চিত করলেন না হকারদেরও।
এই বৈঠক থেকেই মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, আশাকর্মীদের প্রস্তাবিত ১,০০০ টাকা করে ভাতা ছাড়াও বেতন বাড়াতে চলেছে রাজ্য সরকার। এর ফলে তারা এবার থেকে ৫,৫০০ টাকা করে মাসিক বেতন পাবেন। এছাড়া তাদের সাথে সিভিক ভলান্টিয়ারদের বেতনও ১,০০০ টাকা করে বাড়ানোর ঘোষণা হলো। যার ফলে CV দের বেতন বেড়ে দাঁড়ালো ৯,০০০ টাকায়।
করোনা পরিস্থিতির মধ্যে হকারদের অবস্থা খুব খারাপ তাই হকারদের জন্যও পুজোর উপহার ঘোষণা হয়েছে আজ। মমতাময়ী মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, লাইসেন্সড হকারদের পুজোর আগে এককালীন ২,০০০ টাকা করে দেবে রাজ্য সরকার। এজন্য ইতিমধ্যে ৮৫,০০০ হকারের তালিকা ইতিমধ্যেই রাজ্যের কাছে জমা পড়েছে।
এদের সাথে সাথে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের জন্যও অবসরকালীন সুবিধা ঘোষণা করেছেন মমতা ব্যানার্জী। তিনি জানিয়েছেন, এবার থেকে অবসরের সময় এককালীন ৩ লক্ষ টাকা করে পাবেন তাঁরা।
মুখ্যমন্ত্রী আজকের বৈঠকে আরও জানান, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে পুজোর আয়োজনে সমস্ত রকম সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। থাকা একাধিক বিধিনিষেধ। তবে রাত জেগে ঠাকুর দেখায় থাকছে না কোনও বাধা। মমতা জানান, ‘তৃতীয়া থেকে একাদশী পর্যন্ত রাত জেগে ঠাকুর দেখা যাবে। তার জন্যে যথাযথ ব্যবস্থা করবে পুলিশ।’
কলকাতা ও জেলার পুজোয় পুজোর মণ্ডপ খোলামেলা করতে হবে। প্রতিমার মাথার ওপরে আচ্ছাদন থাকলেও চারদিক যেন খোলামেলা থাকে। এছাড়া পুজোকমিটিগুলিকে একদিক দিয়ে প্রবেশ ও অন্য দিক দিয়ে বেরনোর ব্যবস্থা করতেও বলেন তিনি। ব্যারিকেড করে ব্যারিকেডের ভিতরে গোল করে সোসাল ডিসট্যান্সিং এর দাগ কেটে দিতেও বলেছেন তিনি।
তবে পুজোর অঞ্জলি ও সিঁদুরখেলা একেবাড়ি নিষিদ্ধ হচ্ছে না এবার। ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে এই আচার পালন করতে করতে পরামর্শ দিয়েছেন। তবে অঞ্জলি দেওয়ার সময় মাইক্রোফোনেই পুরোহিতকে মন্ত্রোচ্চারণের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
সিঁদুরখেলাতেও ছোট দলে ভাগ হয়ে অংশগ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন মমতা। তবে ঠাকুর দেখায় কোনও বাধা থাকবে না বলে জানিয়েছেন তিনি। একাদশী পর্যন্ত ঠাকুর দেখা যাবে তবে শর্ত অবশ্যই মুখে থাকতে হবে মাস্ক।
বিসর্জনের বিধি ঘোষণা করে মুখ্যমন্ত্রী জানান, এক সঙ্গে সমস্ত পুজো যেন বিসর্জন না করে সেদিকে খেয়াল রাখবে পুলিশ। থানার আইসিদের সেজন্য তৎপর হতে হবে। তবে এবার বিসর্জনে শোভাযাত্রা সম্পুর্ণ নিষিদ্ধ।
তবে বিরোধীদের (শকুনদের) নাকে ইতিমধ্যেই পুজোর আগে অর্থায়ণ পরোক্ষভাবে ভোটের আগে ভেট’এর গন্ধ হয়ে বিরক্তির উদ্রেক করছে। তাদের বক্তব্য সরকার স্বাস্থ্য পরিষেবা ঠিক দিতে না পারলেও পূজোতে ক্লাব সহ বাকি যায়গায় খয়রাতি করে যাচ্ছে। তাঁরা বলছেন এসব মমতা ব্যানার্জী’র সেই পুরোনো বোতলে নতুন সূরা প্রেরণের ওল্ড ফর্মুলা ছাড়া আর কিছুই নয়। তিনি নিজের সরকারের বিসর্জন বাঁচাতে এই পন্থা অবলম্বন করছেন। মানুষের টাকা মানুষকেই ফেরত দিচ্ছেন আর বলছেন দিচ্ছেন তিনি।
তবে মুখ্যমন্ত্রীর এই বেতন বৃদ্ধির ঘোষণাতে আশা কর্মী, সিভিক ভলান্টিয়ার সহ রাজ্যের বহু অসহায় হকার এখন স্বল্প হলেও এই সহায়তার আশায় অধীর আগ্রহে দিন গুনছেন।