দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: গত পরশু FSSAI নির্দেশিকা জারি করেছিল দেশের প্রতিটি মিষ্টির দোকানে প্যাকেটজাত ও খোলা মিষ্টিতে ‘বেস্ট বিফোর ডেট’ লেখা বাধ্যতামূলক। কিন্তু এবার সেই নির্দেশিকা প্রত্যাহারের দাবিতে সরব রাজ্যের মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী সমিতি। তারা প্রধানমন্ত্রী মোদীকে চিঠি লিখছেন এই বিষয়ে।
সূত্রের খবর পশ্চিমবঙ্গের মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীরা প্যাকেটজাত নয় এমন মিষ্টিতে (রসগোল্লা, সন্দেশ বা লাড্ডু) ‘বেস্ট বিফোর ডেট’ লেখার নির্দেশিকা পুনর্বিবেচনার আবেদন জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দ্বারস্থ হয়েছেন। উল্লেখ্য, গত ২৫’শে সেপ্টেম্বর এক নির্দেশিকায় FSSAI রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে বিষয়টি নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেয়। এই নির্দেশ মান্য করে মিষ্টি ব্যবসায়ীদের আগামী ১ ‘লা অক্টোবর থেকে মিষ্টির ট্রে-তে ‘বেস্ট বিফোর ডেট’ লিখতেই হবে।
আরও পড়ুন : এবারে পুজোয় সবই ‘টাটকা’ মিষ্টি নইলে লাইসেন্স বাতিল, FSSAI
এই প্রসঙ্গে মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীদের সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে, কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে শহর ও শহরতলির ছোট ব্যবসায়ীদের ওপর এর বিরূপ প্রভাব পড়বে। এই মূহুর্তে গোটা রাজ্যের ২০০০ কোটি টাকা মূল্যের মিষ্টান্ন শিল্পে তাঁদের অংশিদারিত্ব যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।
আশিস পাল (পশ্চিমবঙ্গ মিষ্টান্ন নির্মাতা সমিতির যুগ্ম সচিব) এই প্রসঙ্গে বলেন, “কেন্দ্রের এই নির্দেশ কার্যকর করতে গেলে মিষ্টির দোকানদারদের ময়রা ভিন্ন অতিরিক্ত আরও ১ জন বা ২ জন কর্মী রাখতে হবে। কারণ, মিষ্টির দোকানের কর্মচারীরা এতটা শিক্ষিত নন যে তারা এই নির্দেশ অনুযায়ী তালিকা তৈরি করতে পারবেন। এমনিতেই লকডাউন হওয়ার ফলে রাজ্যজুড়ে মিষ্টি শিল্পের সার্বিক অবস্থা আশঙ্কাজনক। এর পরে ব্যবসা চালানোর জন্যে আরও লোক নিতে হলে ব্যবসাই বন্ধ করে দিতে হবে।”
রাজ্যের মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের এক সদস্য (প্রসিদ্ধ মিষ্টান্ন বিক্রেতা) ডি দাস জানিয়েছেন, ‘আমরা আইন মেনে চলতে তৈরি। কিন্তু আইন বাস্তবোচিত হওয়া দরকার। নতুন নির্দেশিকা বড় মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীদের জন্য কার্যকরী হতে পারে। কিন্তু ছোট ব্যবসায়ীদের পক্ষে তা মানা সত্যিই সম্ভব নয়।’
ডি দাস আরও জানান যে, এই বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্যে তাঁরা ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী ও ক্ষুদ্রশিল্প মন্ত্রী নীতিন গড়কড়িকে চিঠি দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী’র সাথে দেখা করে এই বিষয়ে আলোচনাও করেছেন।
কিন্তু শুধুই কী নিরক্ষরতা বা স্বল্প জ্ঞান এর জন্যে দায়ী? উত্তরে মিষ্টান্ন বিক্রেতাদের দাবি, ভারতের অন্যান্য অংশের মিষ্টির সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মিষ্টির বিস্তর ফারাক রয়েছে। ভারতের অন্যান্য অংশে মিষ্টিতে ছানা বা দুধের ব্যবহার সীমিত। তাদের মিষ্টি শুকনো প্রকৃতির। ফলে সেগুলির নষ্ট হয়ে যাওয়ার আপেক্ষিক তারিখ নির্ধারণ করা সহজ কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মিষ্টির ১০০%’ই দুগ্ধজাত। তা খাবার যোগ্য কতদিন তা এই মিষ্টি কী ভাবে সংরক্ষণ করা হচ্ছে তার ওপর নির্ভর করছে।
যেমন উদাহরণ স্বরূপ রসগোল্লা বা ছানার জিলিপি সঠিক ভাবে সংরক্ষণ করলে তিন-চার দিন পরেও তা খেতে টাটকা লাগে। কিন্তু গরম কালে বা অবহাওয়ার পরিবর্তণে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ফেলে রাখলেও তাতে মাত্র কয়েক ঘণ্টাতেই পচন ধরতে পারে। তাই মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীদের দাবি, বৌগলিক অঞ্চলের এবং মিষ্টি তৈরির কাঁচামালের ওপর নির্ভর করেই এই নির্দেশিকা তৈরি করা প্রয়োজন ছিল। তারও আগে প্রয়োজন ছিল রাজ্যের মিষ্টান্ন সংগঠনগুলি’র সাথে কথা বলা।