দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: ‘বামোশ’ মাছ যাকে আমাদের মধ্যে অনেকেই চিনি ‘বাইম’ মাছ নামে। কেউ কেউ একে ‘বাম’ মাছ নামেও ডেকে থাকে। এই মাছ সচরাচর দেখতে পাওয়া যায় না। এমনকি যারা একে ‘কুচে’ বা ‘কুচিয়া’ বলে ভাবছেন তারাও ভুল ভাবছেন কারণ এ মাছ কয়েকটি বিশেষ নদীর পার্শ্ববর্তী অঞ্চল ছাড়া অন্য জায়গায় পাওয়া খুবই দুষ্কর। যে ছবিটি দেওয়া হয়েছে সেটি জলপাইগুড়ির লাটাগুড়ি বাজারে এক বিক্রেতা বিক্রি করছিলেন। বড়টির ওজন প্রায় দেড় কেজি, ৪০০ টাকা কিলো দরে সেই মাছ বিক্রি হচ্ছিলো। মাছ গুলোকে নিয়ে জনগণের বেশ উৎসাহ ছিল। বিক্রেতা জানালো এই মাছ গুলি ধরা হয়েছে ক্রান্তির দেবীঝোড়া নদী থেকে।
এই মাছটিকে ‘বামোশ’ মাছ বলে। এই মাছ সম্পর্কে লাটাগুড়ির বাজারের এক বয়স্ক ব্যাক্তি দারুণ একটি তথ্য দিলেন। তিনি জানালেন যে, নদীর যে অংশে বা তীরবর্তী যে স্থানে এই মাছটি বাস করে তার ৫০০ মিটার দূরত্ব অবধি যদি কখনো সর্ষে চাষ হয়, তাহলে সেই সর্ষেফুল খেতে এই মাছ নদী থেকে ওই সরষে ক্ষেত অবধি গা ঘেষটে পৌঁছে যায়। লক্ষ্য সর্ষে ফুল। শুধুমাত্র সর্ষে ফুলের জন্য স্থলভাগের উপর দিয়ে এঁকে বেঁকে গিয়ে সরষে ফুল খায়। সরষে ফুল এই মাছের খুব প্রিয় খাদ্য।
মজার ঘটনা এই যে, যে পথ দিয়ে এই মাছটি সরষে ক্ষেতে সেই ফুল খেতে যায় ঠিক সেই পথ দিয়েই আবার নদীতে ফিরে আসতে পার। আর এই একই পথে ধরে ফিরে আসার মূল কারণ, এই মাছের দেহের ওপরিভাগ থেকে নিসৃত এক পিচ্ছিল পদার্থ দিয়ে সে যাতায়াতের পথ পিচ্ছিল করে রাখে। ফলে সে পথেই মাছটির ফিরতে সুবিধা হয়। মূলত: নদীর পাড়ের ঘাসের ওপর দিয়ে এই রাস্তা তৈরি করে এই মাছ।
এই মাছ টি সম্পর্কে দু’টি ভিডিও ইতিমধ্যে ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছ। এখানে সেগুলো দেওয়া হলো-
যারা ‘বামোশ’ মাছ ধরতে বিশেষ পারদর্শী, তারা নদী পরের এই পিচ্ছিল দাগ দেখেই বুঝতে পারেন যে বামোশ মাছ সরষে ক্ষেতে প্রবেশ করেছে। তখন তারা ওই ফেরার পথটিকে চিহ্নিত করে তাতে ছাই বা বালি দিয়ে দেয়। এর ফলে/ তাহলে ফেরার পথের পিচ্ছিল ভাবটি নষ্ট হয়ে যায় এবং মাছটিকে সহজেই ধরা সম্ভব হয়।
আমাদের দেশি বামোশ এর বৈজ্ঞানিক নাম: Gymnothorax tile আর ইংরেজিতে একে ডাক হয় Indian mud moray eel নামে। এটি একটি স্বাদু জলের মাছ। এই মাছটি দুষ্প্রাপ্য মাছের মধ্যে একটি । এই মূহুর্তে মাছটির সংরক্ষণ বিশেষ ভাবে প্রয়োজন। যেভাবে উত্তর বঙ্গের নদী গুলিতে দূষণ ছড়াচ্ছে আর সেই সাথে ইলেকট্রিক শক দিয়ে মাছ মারা হচ্ছে তাতে এই মাছটি আমাদের পৃথিবী থেকে অচিরেই বিলুপ্ত হয়ে যাবে।