দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরোঃ মহামারীর কারণে, একেবারে ঘরবন্দী শিশুরা। কার্যত দেড় বছর তারা চার দেওয়ালে বন্দী। খেলার মাঠ তাদের কাছে এখন স্মৃতি। অনলাইনে পড়াশোনা, ফোনে আর কম্পিউটারে খেলাধুলা, আর টিভিতে বন্দী অবসর। বন্ধু বা সহপাঠীদের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ নেই। বাড়ির অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটছে তাদের।
কার্যত মানসিক স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাচ্চাদের। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জেদ। বড়রা বাড়ির কাজের পাশাপাশি অফিস সামলাচ্ছেন, বাড়িতে থেকেই। তাই বাচ্চাকে সময় দিতে পারছেন না বেশি। তাদের জেদ মেটানই শ্রেয় মনে করছেন। তাদের বায়না মেটাতেই, চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন ফাস্টফুড থেকে প্যাকেটজাত খাবার, পাশাপাশি বোতলবন্দী ফলের জুস দিয়ে সহজেই শান্ত করছেন তাদেরকে। প্রয়োজনে মোবাইল, ল্যাপটপ থেকে টিভির রিমোট ধরিয়ে দিচ্ছেন তাদের হাতে, তাদেরকে ব্যস্ত রাখতে। যার ফলে বাচ্চারা ক্রমে অগ্রসর হচ্ছে অস্বাস্থ্যকর ভবিষ্যতের দিকে।


এই সব অস্বাস্থ্যকর খাবার ও অভ্যেস, ক্রমশ ওজন বাড়িয়ে দিচ্ছে বাচ্চাদের। যদিও আমাদের দেশে একটু গোলগাল, নাদুস-নুদুস বাচ্চাদের প্রতি একটা টান রয়েইছে। তাই আমাদের চোখে বাচ্চার বাড়তি ওজন কোনো ভয়ের উদ্রেক ঘটাচ্ছে না। তবে এই বিশ্বজুড়ে শিশুদের বাড়তি ওজন, বেশ চিন্তিত করে তুলেছে বিশেষজ্ঞদেরকে ।
বিশেষজ্ঞদের কথায় অত্যাধিক ওজন, যা ওবেসিটির কারণ। অনিয়মিত ওজন বাড়তে থাকলে তা ইমিউনিটি সিস্টেম কে দুর্বল করে তুলবে। পাশাপাশি এর ফলে হতে পারে ডায়াবেটিস (টাইপ 2) এর মতন অসুখ, যার ফলে বাড়বে কোলেস্টেরলের মাত্রা। কর্মক্ষমতা কমবে লিভারের। যার ফলে তাদের ভবিষ্যৎ হয়ে উঠতে পারে অনিশ্চিত। আবার দীর্ঘদিন গায়ে সূর্যের আলো না লাগায় কমছে শরীরে ভিটামিন- D এর পরিমাণ। ভিটামিন -ডি কমে গেলে বাচ্চার হাড় কমজোরী হবে। মেজাজ খিটখিটে হওয়া থেকে মন খারাপের মত সমস্যা গুলো দেখা দেবে ধীরে ধীরে।


তাই বাচ্চাদের অল্পসময়ের খুশি দিতে, জেদ মেটানো এখনই বন্ধ করার চেষ্টা করুন। বন্ধ করুন বাচ্চার হাতে চিপসের প্যাকেট বা রিমোট ধরিয়ে দেওয়ার অভ্যাস। হ্যাঁ, অবশ্যই তা হঠাৎ করে বা একবারে হবে না। সময় নিয়ে ধীরে ধীরে তা করতে হবে। যদিও সচেতন অভিভাবকরা এই ব্যাপারে সচেষ্ট। তবুও বুঝে উঠতে পারছেন না, ঠিক কীভাবে তা করবেন। এখানে একটা ছোট্ট বিষয় নিয়ে একটু ভেবে দেখলে সমাধান খুঁজে পাওয়া সম্ভব। ভেবে দেখুন নিজেদের শৈশবের দিনগুলোর কথা। আমাদের শৈশব কিন্তু টিভি, মোবাইল বা ফাস্টফুডে আবদ্ধ ছিল না।
সেসব দিনে বাচ্চাদের জেদ ও খিদে মেটানো হত বাড়িতে বানানো বিভিন্ন রকম খাবারে। লুচি, রুটি, পায়েস, ফিরনি বা মুড়িমাখা থেকে ছোলা সিদ্ধ, এই ধরনের স্বাস্থ্যকর খাবার। সেখানেও চকলেট, কেক, বিস্কিট ছিল, কিন্তু তা সীমিত পরিমাণে। পাশাপাশি দিতে পারেন ফল থেকে স্যালাড।
সময় বদলেছে, বাচ্চাদের স্বাদ থেকে রুচিরও পরিবর্তন হয়েছে। তবে চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে ঘরোয়া খাবার দিয়ে। নিশ্চয়ই কিছু খাবার তাদের ভাল লাগবে। হয়তো খাবার বানাতে আপনার একটু বেশি সময় লাগবে। তবে বর্তমানে কাজের পদ্ধতি এবং পণ্যদ্রব্যের সহজলভ্যতা কিছুটা সময় বাঁচিয়ে দেবে আপনার।


প্রয়োজনে সাহায্য নিন সোশ্যাল মাধ্যমগুলির। সেখানে অল্প সময়ে ঘরোয়া পদ্ধতিতে স্বাস্থ্যকর বিভিন্ন রকমের খাবারের রেসিপি পেয়ে যাবেন। আপনি যখন রেসিপি দেখছেন বা খাবার তৈরি করছেন, তখন সাথে রাখুন বাচ্চাকে। এতে তার আগ্রহ বাড়বে। অতীতে বাড়ির বড়দের কাজ করতে দেখে, বাড়ির ছোট দের মধ্যে একটা সৃজনশীলতার পাঠ নিজে থেকে সম্পন্ন হয়ে যেত। আপনার বাচ্চা ও সেটা শিখে নিতে পারবে। প্রয়োজনে তাকে ও সুযোগ দেন আপনাকে কাজে সাহায্য করতে। তার ফলে টিভি, মোবাইল থেকেও সরে থাকবে তার মন।
বাচ্চাকে সুন্দর ভবিষ্যত দিতে তো আমরা সদা সচেষ্ট। তবে সেই সুন্দর ভবিষ্যৎটা উপভোগ করতে হলে একটা সুস্থ জীবন তাকে উপহার দেওয়া খুবই প্রয়োজন। তাই একটু ভেবে দেখুন, উপরের টিপসগুলো কাজে লাগান। আপনার একটু প্রচেষ্টা বদলে দেবে আপনার বাচ্চার জীবন।
লেখা – তানিয়া তুস সাবা