দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরোঃ বিরলতম এক ইউরেশিয়ান স্কোপস আউল গত বুধবার নিউটাউনে পাখিপ্রেমী মানুষদের কাছে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছিল। রেকর্ড অনুযায়ী জানা যায় সারা ভারতে মাত্র ২০ বার এই প্রজাতির পেঁচা দেখতে পাওয়া গেছে। সে হিসাবে দেখতে গেলে এটি কলকাতার রাজারহাট পার্শ্ববর্তী এলাকার পাখিপ্রেমী মানুষদের জন্য অত্যন্ত সুখকর একটা বিষয়।
কংক্রিটের কলকাতায় যেসব স্থানে গাছেরাই বিরল হয়ে উঠেছে সেসব স্থানে তো পাখির দর্শন মেলায় ভার। তবে প্রাচীন কলকাতা এবং কলকাতাতে কিছু কিছু স্থান শহরবাসীর জন্য চোখের আরাম! সবুজে ঘেরা অত্যন্ত শান্তিকর। সে সব স্থানে প্রাকৃতিক পরিবেশে এখনও স্বস্তি বিরাজ করছে। তবে রাজারহাটের নিউটাউনের বেশ কিছু এলাকা পাখিদের জন্য বেশ পছন্দের ও শান্তির স্থান।
সেই জন্য শীতের শুরু থেকে পুরো শীতজুড়ে এবং বছরের বিভিন্ন সময় নানান পাখির দেখা মেলে এখানে। কিছু কিছু বিদেশি পাখি ও শীতের সময় সেখানে উপস্থিত হয়। তাই পাখি প্রেমীদের জন্য এই স্থান অত্যন্ত প্রিয়। তারা সময় করে ছুটে আসেন ওই সব অঞ্চলে। ঘন্টার পর ঘন্টা লেন্স তাক করে বসে থাকেন একবার তাদের দর্শন পাওয়ার জন্য। কিছু কিছু পাখিপ্রেমী লেন্স, ক্যামেরা ছাড়াই সেখানে এসে উপস্থিত হন। পর্দায় না দেখে সরাসরি রক্ত মাংসের চোখে পাখি দেখার নেশায়।


ইউরেশিয়ান স্কোপস আউল, ইউরোপের আজারবাইজান, অস্ট্রিয়া, ক্রোয়েশিয়া এবং তুরস্ক ও কেনিয়া সহ আফ্রিকার কিছু অংশের দেখা যায়। এরা জলাশয় সন্নিহিত বড় ঘাস যুক্ত বনভূমিতে থাকতে পছন্দ করে। এরা নিজেরাও খুব শান্ত প্রকৃতির হয়। প্রজনন মৌসুমের শুরুতে যখন এরা সঙ্গীর খোঁজে থাকে, তখনই সাধারণত এদেরকে দেখা যায়। অন্য সময় এরা চোখের আড়ালে থাকতেই পছন্দ করে।
এরা সঙ্গী খোঁজার সময় অদ্ভুত সুন্দর এক রকম শিস দেয়। এই ইউরেশিয়ান আউল খোলা জঙ্গল, গাছের কোটরে, বড়ো পাতার মধ্যে,মাঠের ঘাসের মধ্যে, এবং মাটিতে গর্ত করে বাসা বাঁধে এবং ৩ -৬ টি ডিম পাড়ে।
এই পাখি, একটি মৌসুমী অভিবাসনের সময় অল্প সময়ের জন্য একেক স্থানে থেমে থেমে পরিগমন করে। তাই, যদি ইকো পার্কের মাত্র ৭০০ মিটারের দুরত্বে যে জলাশয়ের পাশে তাকে দেখা গেছে, যদি তাকে বিরক্ত করা না হয় তাহলে ঐ স্থানে সে কয়েক সপ্তাহের জন্য বাসা করে থাকতে পারে।


এই স্কোপস আউলের সুন্দর উজ্জ্বল হলদেটে সোনালী চোখ, কানের পাশে থাকা গুচ্ছাকার শক্ত পালক(টুফ্ট) যখন তারা সতর্ক থাকতে চেষ্টা করে তখন ঐ টুফ্ট গুলি খাড়া করে। তবে এদের পালকে রঙ ও নক্সা গাছের ছালের অনুরূপ, যা ছদ্মবেশ ধরতে সাহায্য করে। যখন কোনো গাছের কোটরে বা ডাল পাতার মধ্যে বসে থাকে এই পাখি তখন এদের আলাদা করে চিহ্নিত করা কঠিন হয়ে যায়।
এটি একটি ছোট প্রজাতির পেঁচা, এর দৈর্ঘ্যে মাত্র ১৯-২১ সেমি (৭.৫-৮.৩ ইঞ্চি) এবং এটির ডানা মেলা অবস্থায় ৪৭-৫৪ সেমি (১৯-২১ ইঞ্চি) তবে বড় পেঁচার তুলনায় এদের ডানা অনেক ছোট। শরীরের ওজন মাত্র ৬৪ থেকে ১৩৫ গ্রাম (২.৩ থেকে ৪.৮ oz) পর্যন্ত হয়। এই পাখিটি দক্ষিণ ইউরোপে পূর্ব দিকে, পশ্চিম ও মধ্য এশিয়ার পাখি। এটি পরিযায়ী, সাধারণত এরা দক্ষিণতম ইউরোপ এবং সাব-সাহারান আফ্রিকায় শীতকাল কাটাতে পছন্দ করে।
এই পাখির এখানে দেখা যাওয়ার কারণ হিসাবে অনেকেই মনে করছেন ইকো পার্কের ওই স্থানের প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে স্কোপস আউলের বাসস্থানের পরিবেশের সঙ্গে মিল রয়েছে। সে কারণেই হয়তো পাখিটি এই স্থানে এসেছে। বেশ কয়েক বছর ধরে নিউটাউন এরিয়াতে দেশী বিদেশী পাখির সমাবেশ ঘটছে। তবে শীতের শুরুতেই এই পাখির আগমন পাখি প্রেমীদের জন্য আগাম সংকেত হতে পারে ভালো কিছু দেখার।


বন বিভাগ এবং হিডকোর যৌথ সমীক্ষাই উঠে এসেছে, মেজর আর্টারিয়াল রোড বরাবর যে ছোট ছোট সবুজের অংশগুলি রয়েছে তাতে অ্যাকর্বিয়ান কোকিল, ইয়েলো ওয়াগটেইল, ব্ল্যাক-টেইলড গডভিট এবং রেড-ওয়াটলড ল্যাপউইং এর মত কমবেশি ২৮ প্রজাতির পাখি কে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। এছাড়াও সেভেন ওয়ান্ডার্স পার্কের ৫০০ মিটারের মধ্যে আরও একটি স্থান রয়েছে যেখানে, সাধারণ দেশীয় প্রজাতির পাখিদের আনাগোনা রয়েছে।
এছাড়াও মাদার ওয়াক্স মিউজিয়ামের পিছনের দিকে যে বড় বড় লম্বা ঘাস যুক্ত জায়গা গুলি রয়েছে ওইসব স্থান এবং তার পাশে পাখিদের প্রিয় জলাভূমি ও গাছের সমন্বয় রয়েছে। যার ফলে সকাল-বিকাল ওই স্থানগুলি মনমুগ্ধকর দৃশ্য এবং পাখির কূজনে প্রখর হয়ে থাকে।
লেখা – তানিয়া তুস সাবা।