(দেবারুণ রায়, বাংলা সংবাদ মাধ্যমের একজন উল্লেখযোগ্য নক্ষত্র। পেশাগত কারণেই তাঁর সাথে স্বর্গীয় প্রণব মুখার্জী’র সম্পর্ক দীর্ঘ ৩৫ বছরের। শুধু পেশা নয়, ব্যক্তিগত জীবনেও প্রণব মুখার্জী ছিলেন তাঁর দাদা তুল্য। অনেক কাছ থেকেই প্রণব মুখার্জীকে দেখেছেন দেবারুণ বাবু। আর প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি’র মহা প্রয়াণের পর দেবারুণ রায়ের কলমে উঠে আসছে অনেক না জানা প্রণব স্মৃতি। যা ধারাবাহিকভাবে শুধুমাত্র দ্য ক্যালকাটা মিররে প্রকাশিত হবে। আজ রইল সেই ধারাবাহিকের প্রথম কিস্তি।)
“আজকেও আপনি ভাবলেশহীন ? এতটাই নির্বিকার কিন্তু আপনার আরাধ্য ব্রাহ্মণও ছিলেন না। শিখায় বন্ধনী দিয়ে রাখতেন চাণক্য। ওঁর তীব্র প্রতিক্রিয়া ছিল।” সেদিনের সেই পরিবেশে আমার প্রশ্নের আবেগে ছাড় ছিল। কারণ, কেন , কীভাবে, কী হলো, সেসব নেপথ্যকাহিনি ওঁর কাছে শোনার জন্য ফোন করিনি। তাছাড়া ততক্ষণে যতটা যা ঘটেছে তার তেমন কোনও আড়াল ছিলনা।
২৪, আকবর রোডে এআইসিসির সদর দফতরে শামিয়ানার নীচে আমাদের সারা দুপুর, বিকেল, সন্ধে কেটেছে। ভেতরে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির আনুষ্ঠানিক বৈঠক অনেকটা আগেই শেষ হয়েছে। বৈঠক সভানেত্রী সনিয়া গান্ধীকে কংগ্রেসের সংসদীয় দলনেতা মনোনয়নের ভার দিয়েছে। কংগ্রেসের চিরাচরিত সংস্কৃতি এটাই। সভাপতি বা সভানেত্রীকে সর্বভৌম এক্তিয়ার সবযুগে, সব কালেই দিয়ে এসেছে কংগ্রেস। এটাই দলে শৃঙ্খলার আর সর্বস্তরের বোঝাপড়ার বুনোট। সুতরাং প্রণববাবুর নামটি উচ্চারণের কোনও অবকাশও ছিলনা। আর তা থাকলেও জেনে শুনে বেড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে? অতএব ধৈর্যের প্রহর পেরিয়ে মঞ্চে এসে উঠলেন আমাদের বঙ্গের বাবু, পিএম। কেউ বলে দুবার, কেউ বলে তিন, কেউ বা বলে একবার। ৭, রেস কোর্স এর দরজা থেকে ফিরে আসা একজন যোগ্যতর রাজনীতির মানুষ।
তাঁর প্রধানমন্ত্রী হওয়া হয়নি। তবু তিনি পি এম। প্রণব মুখোপাধ্যায়। বললেন, কংগ্রেস সভাপতির সিদ্ধান্ত, ড. মনমোহন সিং কংগ্রেস সংসদীয় দলের নেতা নির্বাচিত হয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে সংখ্যা গরিষ্ঠতার দাবি পেশ করবেন। সংসদীয় দলের নেতা নির্বাচনে প্রণববাবুই হলেন প্রস্তাবক। কারণ হিসেবে বলা হল, ইন্দিরা মন্ত্রিসভার একমাত্র মন্ত্রী প্রণববাবুই এই সংসদে আছেন। এরপর যত না প্রণবজিকে সান্ত্বনা পুরস্কার, তার চেয়ে বেশি সংকটের চোরাস্রোতের মোকাবিলায় তিনিই একমাত্র বকলমে নাবিক হওয়ার যোগ্য, তাই কেজো সহযোগী প্রণববাবুকেই করা হল লোকসভার নেতা। যে পদে অধিকার শুধু প্রধানমন্ত্রীর। প্রধানমন্ত্রীই লোকসভার নেতা হন। যেহেতু মনমোহন লোকসভার সদস্যই নন, তাই অগত্যা প্রণববাবুকে দেওয়া হল ওই তাৎপর্যের পদটি।
সরকারের নেতা করার সময় জনজীবনে দলের যে সর্বোচ্চ অভিজ্ঞতার মানুষটির ওপরে আস্থা হয়নি, সেই আস্থাই রাখল দল লোকসভার নেতা হিসেবে। এই প্রক্রিয়ায় বাংলার দল ছাড়াও অনেকের হতাশাকে কংগ্রেস হাইকমান্ডের আমল দেওয়ার দরকার হয়নি। কারণ, দলের এক প্রভাবশালী অংশ সর্বোচ্চ নেতৃত্বকে বুঝিয়ে দিয়েছিল, বাংলার কংগ্রেসের বিন্দুমাত্রও এবিষয়ে মাথাব্যথা নেই। ঐক্য তো অনেক দূরের কথা। সুতরাং নিস্তরঙ্গ গঙ্গার কল্লোল আছড়ে পড়েনি কল্লোলিনী কলকাতায়। উপদলীয় কোন্দলের পলি ততদিনে চর হয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে। আক্ষরিক অর্থেই কালীঘাটে রুদ্ধ আদি স্রোতধারা। তৃণমূলের ঢালে নেমে গেছে দক্ষিণবঙ্গের মূলস্রোত। ফারাক্কা থেকে উজানে, কিছুটা কংগ্রেসের ভিটে তখনও রুখে দিচ্ছে ভাঙনের গ্রাস। মুর্শিদাবাদ, মালদা আর দিনাজপুর এই তো সাকুল্যে কংগ্রেসের ফিক্সড ডিপোজিট তখনও।
অধীরের দূরদর্শী দাবি মানতে বাধ্য হয়েছিলেন সনিয়া। অনিচ্ছার সেই নির্বাচনে কখনও লোকসভায় জিততে না পারা প্রণব ভাবেননি নিজের জীবনে ও মাতৃভূমির মমতাঘেরা মরুভূমিতে অপেক্ষা করে আছে এমন একটা মরুবিজয়। জঙ্গিপুরের লড়াই জিতেছিলেন প্রণববাবু মাত্র ৩৯ হাজার ভোটে। বামগঙ্গায় তখন এই ভাটির টানের লক্ষ্মণ মোটেই নেই। উল্টে সেবার জোয়ারের বানভাসি জল ঢুকেছে তৃণমূলের সব ভিটেয়। শুধু কালীঘাটের আদিগঙ্গার পলিতে জোয়ারের দেখা মেলেনি। মাত্র একটা আসন ছিল লোকসভায়, বাংলার মমতা। অতীতে কংগ্রেসের শত দুর্দিনেও শুধু একবারের ব্যতিক্রম ছাড়া আর সবসময়ই যা অটুট থেকেছে। সেই ২০০৪ য়ে বাংলার রেডব্রিগেড যেন শেষবারের মত অপারেশন পরাক্রম দেখিয়েছে। শুধু গঙ্গা পদ্মার পারভাঙা বাংলার শেষ নবাব অধীর জঙ্গিপুরের বামদুর্গ দখল করে বুঝেছেন, উত্তরবাংলার উজানে জোট বেঁধেই বাঁচার পথ পেতে পারে ধর্মনিরপেক্ষ শিবির।
কংগ্রেসের রাজনীতিতে গোড়ায় “প্রিয়দা”র সঙ্গে থেকে শেষে অন্য ঘরানার শিক্ষকের হাত ধরেন অধীর চৌধুরি। দুজনের জীবনেই দুজনার পারস্পরিক প্রভাব মোড় ঘোরানো। অর্ধ শতক তো মানুষের অর্ধেক নয়, সম্পূর্ণ জীবন। দেশ কাল রাজনীতি যখন জীবনের প্রতিটি ইটের ফাঁকে সময়ের সলিড সিমেন্ট গেঁথে যায় তখন মূল জীবনের পরিসর ছোট হয়ে যায়। তাই ১৯৬৯-য়ে রাজ্যসভায় কংগ্রেসের সাংসদ হিসেবে উত্থানের পঁয়ত্রিশ বছর পর জঙ্গিপুর ঠিক ৬৯ বছর বয়সে তাঁর জননেতা হওয়ার সিংহ দুয়ার হল। লোকসভায় প্রথম জয়েই লোকসভার নেতা হওয়ার সুযোগ নেহরুর পর কংগ্রেসে আর কার? বিজেপিতে নরেন্দ্র মোদি অবশ্য এই সুযোগ পেয়েছেন এবং নেহরুর মতো তিনিও প্রথমেই লোকসভায় জিতে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। যা প্রণববাবু হতে পারেন নি।
কেন হতে পারেন নি, সে বিষয়ে ইদানিং মালুম হচ্ছে, ” মার চেয়ে মাসির দরদ” প্রবচনের পদ্মপুরাণ পাঠ চলছে অষ্টপ্রহর। যেন , ভারতরত্ন কে চিনত, না চেনালে নরেন্দ্র। প্রধানমন্ত্রীই ইস্যু করেছেন। বোঝা সহজ, সনিয়া গান্ধীর প্রতি রাজনৈতিক প্রহারের অস্ত্র বিজেপির কাজে লাগবে বাংলায়। এবং প্রণববাবুর অবর্তমানে কে এই তীব্র তির ভোঁতা করার উদ্যোগ নেবেন ? প্রণববাবু দুবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কংগ্রেসের প্রাসাদপ্রিয় ছিলেন না বলেই তাঁর ভাগ্যে শিকে ছেঁড়েনি। এই কথা যদি মেনেও নেওয়া যায় তাহলে পরের প্রশ্নগুলো আসবেই।
প্রশ্ন ১) বিজেপি যখন এত প্রণবপ্রেমী ও বঙ্গবন্ধু, তাহলে হিন্দু ব্রাহ্মণের সনাতনী সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী বিজেপি ওঁকে সর্বসম্মতিক্রমে রাষ্ট্রপতি হতে দিলনা কেন ? বিশেষ করে কালামের সময় যখন বিরোধীদল কংগ্রেস সর্বসম্মত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের নজির মেনেছিল। কংগ্রেসের সমর্থন ছাড়া কালামকে জেতানোর ভোট ও ছিলনা এককভাবে বিজেপি বা এনডিএর হাতে। অথচ, প্রণববাবুকে জেতাতে কংগ্রেস ও ইউপিএর সঙ্গে বামেদের ভোট থাকায় ওঁর জয় নিশ্চিত জেনেও বিজেপি পূর্ণ সাংমাকে প্রণববাবুর বিরুদ্ধে দাঁড় করালো কেন ? এমন কি এনডিএ তে ফাটল দেখা দেওয়া সত্ত্বেও প্রণবকে হারাতে বিজেপিকে মরিয়া দেখে বালাসাহেব ঠাকরে ও নীতিশ কুমার সাংমাকে ভোট না দিয়ে প্রণববাবুকে ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। এবং ভোটে জিততে ব্যর্থ হওয়ার পর সুপ্রিম কোর্টে যেতেও কসুর করেনি সাংমার সমর্থক অর্থাৎ বিজেপি-পক্ষ । এটা কি প্রণববাবুর প্রতি প্রেমের নিদর্শন?
প্রশ্ন ২) কংগ্রেসের নেত্রী সনিয়া ২০১৭-র রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রণববাবুকে আরেকটা টার্ম দেওয়ার সুপারিশ করেন। কিন্তু নিরঙ্কুশ বিজেপি তা শুনেও শোনেনি। কোবিন্দকে রাষ্ট্রপতি করে। আরএসএসের নির্দেশ শুধু না, সংঘের স্বপ্ন, সব উচ্চতম পদে স্বয়ংসেবকদের অভিষেক। একমাত্র রাষ্ট্রপতির পদেই স্বয়ংসেবক কেউ ছিলেন না। সুতরাং প্রণববাবুর প্রশংসাসূত্র কংগ্রেসকে কোণঠাসা করার বিজেপি-কৌশল ছাড়া অন্য কিছু হলে বিরোধীদের প্রস্তাব অগ্রাহ্য করে প্রণববাবুর দ্বিতীয়বারের মেয়াদ মঞ্জুর করলেন না কেন প্রধানমন্ত্রী ? তাছাড়া ভারতরত্ন খেতাব নিয়েও একই ধরনের রাজনীতির ইস্যু করে আপাদমস্তক কংগ্রেসি প্রণববাবুর অস্বস্তি বাড়ানো হয়েছিল কেন ? নির্বাচনের আগে রাহুলের কপালে জয়টিকা এঁকে দিয়ে, তাঁকে পুজোর ফুল দিয়ে আশীর্বাদ করে প্রণববাবুর সংকেত তাঁর অবস্থান ঘোষণার পক্ষে ছিল যথেষ্ট। জয়ের পর মোদিকে মিষ্টিমুখ করানোর সৌজন্যমাখা রাজনীতি থেকে তা অবশ্যই আলাদা।
ঠিক এইখানে ইতিহাস ও রাজনীতির কাটাছেঁড়া কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ করে দিয়েছি। এবারে এক লহমায় স্মৃতির সরণিতে। ঠিক ষোলো বছর পেছনে গিয়েছি । সেই রাত। নতুন প্রধানমন্ত্রী মনমোহনই, এমন খবর লেখা শেষ। তারপর দাদাকে একটা ফোন। সন্ধের পর তো দেখা হয়েছে। ওর বক্তব্যও নিয়েছি। এখন একটু কথা বলা। যদি তেমন কিছু মণিমাণিক জোটে তখন লেখা যাবে। কিন্তু এতক্ষণ এই চার দেয়ালের বিশ্বে নানান দৃশ্য দেখে আর যা যা কানে এল তার একটা খিচুড়ি বড় খচখচ করছে। জানাই ছিল বাঙালি প্রধানমন্ত্রী হবেন না কখনোই। সে যে দলেরই হন। শুধু বাঙালি নয়, পূর্বাঞ্চলই বলা যায়। ফোনটা পেতে সমস্যা হলনা। আদি অকৃত্রিম ল্যান্ডফোন, ভায়া এপিএস প্রদ্যুৎ ( গুহ )। প্রণববাবুর গলা কানে এল, “বল।”
দাদা, আজকের রুটিনেও কোনও বদল নেই আপনার। কিন্তু আজ কিছু মনে হোক নাহোক, বাংলার হতাশ হওয়ার দিন। আরও একবার। পাঁচ সেকেন্ড নীরব। তারপর, ” আমি ওভাবে ভাবিনা। আমি তো আর বলিনি আমি কিছু হতে চাই। দাঁড়াতেই তো চাইনি । কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট বেঙ্গলের ওপর জোর দিলেন, তাই। এই নির্বাচনে দল আর জঙ্গিপুরের মানুষ আমাকে যে সম্মান দিয়েছে সেটাই আমার পাবলিক লাইফে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। পঁয়ত্রিশ বছরের ক্যারিয়ারে এটা একটা খেদ তো ছিলই। ভাবতাম, আমি যাই পেয়ে থাকিনা কেন জীবনে, একটা জিনিস পাইনি। সেটা জনপ্রিয়তা। যেটা ছাড়া রাজনীতিতে সবাই অপূর্ণ। নামি সাংবাদিক আলোচকরা বারবার অবলীলায় লিখে দেন রুটলেস, সেই অপবাদ থেকে মুক্ত হলাম, জঙ্গিপুরের জনতার ভালবাসায়।” আবেগের ঝলক থামল। মানুষটা এইরকমই ছিলেন। অত বড় নেতা, মন্ত্রী, প্রশাসক এবং রাজনীতি অর্থনীতির চাণক্য কৌটিল্যের যুগ্ম সত্তা হয়েও অদ্ভুত এক আপনজন ছিলেন তাঁর কাজের বৃত্তে, এবং তার বাইরেও তাঁর ব্যক্তিগত পছন্দের পরিমণ্ডলে। শাসন ও প্রশ্রয়, একই বৃন্তে কীভাবে ফুটে ওঠে তার পরের পর সাক্ষী হয়ে আছে অন্তত পঁচিশ বছরের কালচক্রের নানা ঘটনা। আবেগের অভিব্যক্তিগুলো ছিল গর্জনহীন বিদ্যুৎ চমকের মতো।
আবেগে কখনও নিজের গতিবেগ কমতে দেননি। প্রধানমন্ত্রীর আসনের কাছ থেকে ফিরে আসার অপ্রাপ্তিকে কীভাবে গুছিয়ে নিয়েছেন বুঝেও খানিকটা আবেগের বশেই বলে ফেলি, ” আপনি কি শুধু ছাই ফেলতে ভাঙা কুলো হয়েই থাকবেন ? আবেগের বশে একটুও না এসে দাদা একেবারে শান্ত স্বরে সান্ত্বনার ভাষা বলেন, “চাইলেই তো আর দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়া যায় না। এরকম নজির আরও অনেক আছে।” এভাবেই সার্থকতার শ্রেষ্ঠত্বের পরম লগন স্পর্শ করেও কিছু কিছু না পাওয়াকে আড়াল করে মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছেন অনর্থ থেকে অর্থে । তাই ইন্দিরার অর্থমন্ত্রী আর মনমোহনের অর্থমন্ত্রী তিনি। মধ্যে দাঁড়িয়ে প্রায় তিন দশকের কাছাকাছি সময় সরণি।
বাংলার বাম সরকারের সঙ্গে সংঘাতের সম্পর্ক থেকে সমন্বয়ের সূত্রধর। দুই মেরুর মাস্তুলেই তিনি, বাংলার পি এম। যার ফলে তাঁর মন্থনেই গড়ে উঠেছে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের ব্যক্তিত্বের এমন এক অবয়ব যা তাঁর চেয়ে দলে বেশি কলকে পাওয়া মনমোহন, চিদম্বরমদের হয়ে ওঠেনি। প্রথমে অর্থমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে হাইকমান্ডের বেশি নেকনজরে ছিলেন চিদম্বরম। কিন্তু কালে কালে কী হল, তা তো সবাই জানেন। রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর পাঁচ বছর দলের নীতি নির্ধারণে সরাসরি যুক্ত ছিলেন না। তারপরও তিন বছর রাজনীতি থেকে সরে। এরপরও সনিয়া শোকবার্তায় আনুষ্ঠানিক শব্দাবলির বাইরে বেরিয়ে জানালেন তাঁর নিজের মনের আকুতি। বললেন, “প্রণবজিকে ছাড়া কংগ্রেসের কীভাবে চলবে? একথা অন্য কারও ক্ষেত্রে আশা করা যায়?
প্রতিভা পাটিল যখন রাষ্ট্রপতি হন তখনই প্রথম প্রণববাবুর রাইসিনা হিলসে যাওয়ার প্রসঙ্গ ওঠে। ইউপিএর রথের আসল সারথী প্রণব তখন খানিকটা ক্লান্ত। সরকার চালাতে অন্তত তিন পদের সমন্বয় সংলাপের সংসার তাঁর। কোনওটিতে প্রকাশ-সীতারাম, কোনওটায় লালু, কোনওখানে বিপদে আপদে সঙ্গে থাকা মুলায়ম এবং মিসলেনিয়াস। দরকারে বহেনজীর বদান্যতা নিতে এতটা স্বচ্ছন্দ আর কেউ ছিলেন না। আর কট্টর কংগ্রেস বিরোধী নবীনকেও সাধ্যমতো টেনে ছিলেন তিনি। রাজ্যে কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের জ্ঞাতিশত্রুতা যাই থাক, দাদার মমতা শেষ পর্যন্ত তাঁকে শূন্য হাতে ফেরাননি।
(চলবে)