দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: নেপচুন থেকে এগিয়ে, সৌরজগতের ঠিক সীমা পেরিয়েই খোঁজ পাওয়া গেল একটি এক্সোপ্ল্যানেট এর, যা ঠান্ডা হওয়ার বদলে অসম্ভব উত্তপ্ত। আর এতটাই উত্তপ্ত যে নিমিষে গলিয়ে দিতে পারে ভারী ভারী ধাতু। যে সব গ্রহ আয়তনে নেপচুনের কাছাকাছি, একই সঙ্গে অবস্থান করে সৌরজগত্ বা সোলার সিস্টেমের বাইরে, তাকেই জ্যোতির্বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয়ে থাকে এক্সোপ্ল্যানেট।
সব গ্রহ কিন্তু সৌরজগতে অবস্থান করে না। শুধুমাত্র সূর্যকে ঘিরে পাক খেয়ে যাওয়া গ্রহ গুলাইক নিয়েই আমাদের সৌর জগত তৈরি। যেমন, আমাদের এই পৃথিবী,মঙ্গল, শুক্র, বৃহস্পতি, শনি এই সব গ্রহেরাও প্রদক্ষিণ করছে সূর্যকে। কিন্তু এক্সোপ্ল্যানেটের ক্ষেত্রে তেমনটা হয় না। এরা থাকে সৌরজগতের বাইরে। ওই সপ্ব গ্রহের কাছাকাছি যে নক্ষত্র থাকে, তার অক্ষপথে পাক খায় এরা। আর সেই নক্ষত্র থেকে দূরত্ব অনুযায়ী গঠন হয় সেই গ্রহের বিশেষত্ব।
তবে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই এক্সোপ্ল্যানেটগুলি আকারে এতটাই ছোট হয় যে পাক খেতে খেতে তারা তাদের প্যারেন্ট নক্ষত্রের সঙ্গে ধাক্কা খায়। সেসময় হয় একেবারে ধ্বংস হয়ে যায় নতুবা এমন একটি দূরত্বে অবস্থান করে তা জ্যোতির্বিজ্ঞানের পরিভাষায় নেপচুন ডেসার্ট বা নেপচুনের মরুভূমি। কারণ সূর্য থেকে নেপচুনের দূরত্ব কে মাথায় রেখেই এই নাম দেওয়া হয়েছে। তবে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই সেগুলো হিম শীতল হয় কিন্তু এবার যে এক্সোপ্ল্যানেট খুঁজে পাওয়া গেল তা বড় একটা চোখে পড়েও না।
সম্প্রতি ন্যাশনাল এয়ারোনটিকস অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ওরফে নাসা-র ট্র্যানজিটিং এক্সোপ্ল্যানেট সার্ভে স্যাটেলাইট মারফত এই উত্তপ্ত নেপচুন সদৃশ গ্রহের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়ে ইউনিভার্সিটি অফ কানসাসের জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা আনন্দে আপ্লুত সেই সঙ্গে কিছুটা অবাকও। এই গ্রহের নাম দিয়েছেন প্ল্যানেট এলটিটি ৯৭৭৯বি। তবে এই এক্সোপ্ল্যনেট এর মূল বৈশিষ্ট্য এটি আলো বিকিরণ করে, গ্রহ সাধারণত আলো প্রতিফলিত করে থাকে। তবে এই গ্রহতির ক্ষেত্রে তার পৃষ্ঠতল এতটাই উত্তপ্ত যে তা দুড় থেকে আলো বিকিরিত করছে বলে মনে হয়।


এই এক্সোপ্ল্যানেট নিয়ে প্রকাশিত গবেষণাপত্রের প্রধান লেখক ইয়ান ক্রসফিল্ড জানিয়েছেন এই এক্সোপ্ল্যানেট আলো বিকিরণ করছিল, সেটা দেখেই এর অস্তিত্ব সম্পর্কে সজাগ হয়েছেন সবাই। এক্সোপ্ল্যানেটের এই আলো বিকিরণ করার ঘটনাও বড় একটা ঘটে না!
প্রাথমিক পরীক্ষা ও নিরীক্ষণ করার পর জানা গিয়েছে এই এক্সোপ্ল্যানেটের উপরিভাগ এতটাই উত্তপ্ত যে দস্তা, প্ল্যাটিনামের মতো ভারি ধাতু গলে যেতে পারে নিমেষেই। এ ছাড়া এই এক্সোপ্ল্যানেট অকল্পনীয় গতিতে পাক খাচ্ছে নিজের কাছাকাছি নক্ষত্রের অক্ষপথে। যে অক্ষপথে পৃথিবীর ১ বছর লাগবে নক্ষত্রটিকে পাক খেতে সেখানে এই গ্রহের লাগে মাত্র ১ দিন! বা আর একটু সরলভাবে বললে এই গ্রহে ১ দিন কাটানো মানে পৃথিবীতে ১ বছর অতিক্রান্ত হয়ে যাবে।
এই গ্রহের খোঁজ অনেকটা ইন্টারস্টেলার সিনেমার সেই চমকে দেওয়া গ্রহটির মতই, তবে সেটা শনিগ্রহের উপগ্রহ ছিল, আমাদের সৌরজগতের মধ্যেই কিন্তু সেই কল্পবিজ্ঞান যে বাস্তব হতে চলেছে সেটা বেশ চমকে দেওয়ার মত বিষয়। তবে ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আগে এই গ্রহ নিয়েই যে আরও কিছু খবর মিলতে এমনটাই জানানো হচ্ছে নাসার তরফে।