দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: করোনা আবহে মানুষের রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছে, প্রত্যেকেই ভাবছেন মৃত্যুর ছায়া যেনো আসে পাশে ঘুরে বেরাচ্ছে। আর এর মধ্যেই উঠে এল এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন মানুষের দীর্ঘায়ুর জন্য দীর্ঘ ভূমিকা রাখে ‘সঙ্গী’ পোষ্য কুকুর। হ্যা, মানুষের আয়ু বাড়াতে হলে কুকুর পোষা বা কুকুরের সাথে সময় কাটানো বিশেষ প্রয়োজনীয়।
উল্লেখ্য, কুকুরের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক প্রায় ১৫ হাজার বছরের। আর এই প্রাণিটির রয়েছে এক বিশেষ অনুভুতি ও মানুষের ‘ভাষা’ বোঝার এক অদ্ভুত ক্ষমতা। শুধু তাই নয়, নানা অঙ্গভঙ্গিও সে খুব তাড়াতাড়ি বুঝে নেয়। তবে সম্প্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে যে কুকুর শুধু মানুষের ভালো বন্ধুই নয়, মানুষের দীর্ঘায়ুর জন্যও দীর্ঘ ভূমিকা রাখে। এই তথ্য গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে। এই গবেষণাতে মানুষ এবং কুকুরের সম্পর্কের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
এই গবেষণাটি ‘সায়েন্স’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। ইওরোপ, সাইবেরিয়ায় ছড়িয়ে থাকা ২৭ রকমের কুকুরের জিন নিয়ে এই গবেষনাটি করা হয়েছিল। ফ্রান্সিস ক্রিক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল গবেষক দেখেছেন অন্যান্য পশুদের মধ্যে সবচেয়ে আগে পোষ মেনেছিল কুকুর। এছাড়া দ্য আমেরিকান হার্ট অ্যাসোশিয়েশন জার্নাল -এর এক সমীক্ষায় ধরা পড়েছে, কুকুর পুষলে তার মনিবরা নাকি দীর্ঘ আয়ু পান। বিশেষ করে যে সমস্ত রোগী হৃদরোগ অথবা স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এই উপায় খুবই কার্যকর বলে জানিয়েছে সমীক্ষার ফলাফল।
এখন বিশ্বব্যাপি হৃদরোগে আক্রান্তের হার এবং মৃত্যুহারও অনেক বেড়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব অনুযায়ী ২০০০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মানুষের মৃত্যুর প্রধান তিনটি কারণই হার্ট ও ফুসফুসের রোগ। আর এই হার্টের স্বাস্থ্য সুরক্ষাতেই ভূমিকা রাখে পোষ্য প্রাণী। তবে সম্প্রতি যাদের বাড়িতে পোষা কুকুর রয়েছে, এমন মানুষের সঙ্গে যাঁদের কুকুর নেই, তাঁদের নিয়ে একটা তুলনামূলক বিচার করা হয়েছিল।
১ লক্ষ ৮২ হাজার মানুষ যাঁরা কখনও না কখনও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাঁদের নিয়ে সমীক্ষা করে দেখা গিয়েছে যে এঁদের মধ্যে মাত্র ৬ শতাংশের হার্ট অ্যাটাক অথবা স্ট্রোক হয়েছিল। এই সমীক্ষায় অংশ নেওয়া সবাই ছিলেন সুইডেনের বাসিন্দা। সমীক্ষায় বলা হয়েছে, বাড়িতে কুকুর থাকলে তার দেখভাল করতে গিয়ে শারীরিক সক্ষমতা বজায় থাকে, তার ফলে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ঘটনা খুব কমই ঘটে।
এছাড়াও সারাদিনের কাজের শেষে ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে এই পোষা কুকুর। নানাভাবে বিনোদন করতে ও সে সাহায্য করে। এছাড়া মনের গভীরে আটকে থাকা কোন দুঃসহ যন্ত্রণা বা নেতিবাচক দিক বের করে আনতে যথেষ্ট সাহায্য করে এই পশু।
নিউ ইয়র্ক স্টেট ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় দেখা গেছে স্ট্রেসপূর্ণ কোন কাজের সময় পোষা প্রাণী সঙ্গে থাকলে মানুষ অনেক বেশি চাপমুক্ত থাকে। তা পরিবারের সদস্য, সঙ্গি বা ঘনিষ্ঠ বন্ধুর চেয়েও বেশি। এছাড়া পোষা প্রাণী পিটিএসডি বা পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস সিনড্রোম দূর করতেও সাহায্য করে। এই পিটিএসডি যুদ্ধফেরত সৈনিকদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। তাদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য কুকুর এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বলে দেখা গেছে। এছাড়া
একাকিত্ব ও উদ্বেগ হ্রাসের পাশাপাশি, মানসিক স্বস্তিও দেয় কুকুর।