আধুনিক গনমাধ্যম জার্নাল ও সামাজিক মাধ্যমগুলির দৌলতে ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বরের বিষয়ে সকলেরই অল্পবিস্তর ধ্যান ধারনা আছে। বলাযায় ইউনিভার্সের সবথেকে রহস্যময় ও শক্তিশালী বস্তু হলো এই ব্ল্যাকহোল। আইনস্টাইনের সাধারন আপেক্ষিকতাবাদ অনুযায়ী এই ব্ল্যাকহোল মহাজাগতিক সেই ভর যা স্পেসটাইম বা স্থানকাল চাদরে ছিদ্র সৃষ্টি করে। 1916 সালে ব্ল্যাকহোলের তত্ত্ব প্রথম কল্পনা করা গেলেও 1964 সালে Cygnus X1 নামক ব্ল্যাকহোল আবিষ্কারের পর এর অস্তিত্ত্ব সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হন। আমাদের পরিচিত মহাবিশ্বে এরকম কয়েক ডজন ব্ল্যাকহোলের উপস্থিতি দেখা যায়। এর ভর ও ঘনত্ব অসীম হবার কারনে এর দ্বারা সৃষ্ট মহাকর্ষ বলও প্রবল। আলো পর্যন্ত এর আকর্ষন থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না। স্পেসটাইমে ইহা দ্বারা সৃষ্ট ছিদ্রে বা সাইফনে কোনো ভর আসিলে উহার এসকেপ ভেলোসিটি আলোর গতিবেগ অপেক্ষাও অধিক হওয়া আবশ্যক। কোনো পদার্থের গতি আলোর গতি অপেক্ষা অধিক হয় না বলিয়া ধরা যাইতে পারে ব্ল্যাকহোলের ইভেন্ট হরিজনে কোনো বস্তু প্রবেশ করিলে উহা ব্ল্যাকহোলের কেন্দ্র বা সিঙ্গুলারিটির দিকে চালিত হবে। কোনো কিছু এমনকি আলোও ইভেন্ট হরিজন থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না তাই ব্ল্যাকহোলের অস্তিত্ত্ব নির্ধারন বা দৃষ্টিগোচর করা আপাত অসম্ভব। একারনে ব্ল্যাকহোলের অস্তিত্ত্ব নির্ধারনের জন্য কিছু পরোক্ষ পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। সাধারনত মহাজাগতিক বাইনারি বা ট্রাইনারি স্টার সিস্টেমগুলিতে ব্ল্যাকহোল উপস্থিত থাকে। তাছাড়া X-ray ও Gamma-ray এর বিচ্ছুরন দেখে বিজ্ঞানীরা ব্ল্যাকহোলের উপস্থিতি নির্ধারন করেন। এখনও পর্যন্ত চারপ্রকার ব্ল্যাকহোলের উপস্থিতি প্রমানিত যথা সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল, স্টেলার ব্ল্যাকহোল, ইন্টারমিডিয়েট ব্ল্যাকহোল এবং মিনিয়েচার ব্ল্যাকহোল। যে ব্ল্যাকহোলের ভর সূর্যের ভর বা সোলার মাসের কয়েক লক্ষগুন হয়, উহাকে সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল বলে। আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্রে স্যাজিটেরিয়াস A হলো এরকম সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল। পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব ২৫হাজার আলোকবর্ষ। প্রায় প্রতিটি স্পাইরাল গ্যালাক্সির কেন্দ্রেই এরকম সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল থাকে। দেখা গেছে Sag-a আসলে দুটি সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোলের সমবায়। এখন প্রশ্ন হলো এই সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে এলো কোথা থেকে? ধারনা করা হয়, আমাদের গ্যালাক্সির বয়স যখন ১০০ মিলিয়ন বছর তখন সূর্যের চেয়ে বহুগুন বড়ো কোনো নক্ষত্রের মৃত্যুর পর প্রথম সৃষ্ট স্টেলার ব্ল্যাকহোল ক্রমাগত আয়তন ও ভর বৃদ্ধির কারনে গ্যালাক্সির কেন্দ্র অভিমূখে চালিত হয়। উহাই সময়ের সাথে সাথে সুপারম্যাসিভ ব্লাকহোলে পরিনত হয়। দ্বিতীয় সম্ভাবনা বিগব্যাংএর সময় সৃষ্ট কোনো প্রাইমর্ডিয়াল ব্ল্যাকহোল মহাজাগতিক ভর যথা গ্রহ নক্ষত্র ভক্ষনের মাধ্যমে আয়তনে বৃদ্ধি পেয়ে সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোলে পরিনত হতে পারে। পৃথিবীর নিকটতম ব্ল্যাকহোলটি কিন্তু পরিষ্কার মেঘমুক্ত আকাশে আমরা খালি চোখেই দেখতে পাই। মাত্র ১০০০ আলোকবর্ষ দূরে স্যাজিটেরিয়াস কন্স্টেলেশানের নিকটে টেলিস্কোপিয়াম নক্ষত্রপুন্জে এই যুগ্ম তারকাকে বিজ্ঞানীরা ব্ল্যাকহোল রূপে সনাক্ত করেছেন একে ।HR 6819 নামে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর ভর সূর্যের ৪.২ গুন হলেও ইহার আগ্রাসনধর্মীতা বেশ কম।
এখন প্রশ্ন হলো পৃথিবী কি কোনো ব্ল্যাকহোলের কবলে কখনও পড়তে পারে? NASA র রিপোর্ট অনুযায়ী পৃথিবীর নিকটে এরকম কোনো ব্ল্যাকহোল নেই এবং সর্বোপরি ব্ল্যাকহোল স্পেসে নক্ষত্র বা গ্রহ ভক্ষনের জন্য ঘুরে বেড়ায় না। এছাড়াও সূর্যের মতো ভরের নক্ষত্র জীবদ্দশার শেষে ব্ল্যাকহোলে পরিনত হয় না। এমনকি সূর্যের সমভরের কোনো ব্ল্যাকহোল সূর্যের স্থানে অবস্থান করলেও পৃথিবী সহ অন্যান্য গ্রহগুলি উহার চতুর্দিকে একইভাবে ঘূর্নায়মান থাকবে। তবে সম্প্রতি সৌরমন্ডলে রহস্যময় নবম গ্রহের সম্ভাব্য উপস্থিতি সৌরমন্ডলের ভবিষ্যত নিয়ে কিছু প্রশ্নের অবতারনা করেছে। বিশেষকতগুলি কারনে বিজ্ঞানীরা প্লুটোর গ্রহের তকমা ছিনিয়ে নেবার পর লক্ষ্য করেন নেপ্চুনের কক্ষপথের বহির্ভাগে কাইপার বেল্ট কোনো অজানা বৃহৎ ভরের প্রভাবে স্থিতাবস্থায় অবস্থান করছে। কিন্তু সেই অদেখা বা অজানা ভরটি কি? বিজ্ঞানীদের হিসেব অনুযায়ী এই অজানা ও অদেখা প্রকল্পিত ভর পৃথিবীর ভরের প্রায় ৫ থেকে ১০ গুন। সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে এর ১০ থেকে ২০ হাজার বছর সময়
লাগে। কিন্তু এই নবম গ্রহটির প্রকৃত স্বরূপ কি? কেনোই বা তাকে দেখা যাচ্ছে না? এটাই ভাবিয়ে তুলেছে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের।
একদল বিজ্ঞানীর মতে প্ল্যানেট নাইন আসলে কোনো গ্রহ নয় বরং তা পৃথিবীর থেকে ৫-১০ গুন ভরবিশিষ্ট একটি ব্ল্যাকহোল। কিন্তু এর আয়তন একটি বেসবল বা বাতাবীলেবুর সমান! ব্ল্যাকহোলের ধর্মবিশিষ্ট ও ক্ষুদ্র আয়তন যুক্ত বলেই বিজ্ঞানীরা এর উপস্থিতি বুঝতে পারলেও কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছেন না। তাদের মতে এটা প্রাইমর্ডিয়াল ব্ল্যাকহোল যার উৎপত্তি হয়েছিলো সেই বিগব্যাং এর সময়। কিন্তু সৌরমন্ডল সৃষ্টির কোনো এক পর্যায়ে সূর্যের অভিকর্ষ বলের প্রভাবে সূর্যের চারিদিকে একটা অদ্ভুত কৌনিক কক্ষপথে ঘুরতে থাকে। প্রতিটি গ্রহের কক্ষপথের সাথে সামান্য কৌনিক অবস্থান কিন্তু এরকম একটি বৃহৎ ভরের উপস্থিতি নির্দেশ করে। তবে এরকম কোনো ব্ল্যাকহোল সৌরজগতের জন্য কি কোনো বিপদের কারন হতে পারে? বিজ্ঞানীদের ধারনা কিন্তু এমন কিছু বিপদেরই ইঙ্গিতবহ। ক্রমাগত হকিং রেডিয়েশান বিকিরনের ফলে যদি উহা মহাশূন্যে বিলীন হতে শুরু করে তবে কয়েক মিলিয়ন হাইড্রোজেন বোমা বিস্ফোরনের সমপরিমান গামারশ্মির বিকিরন পৃথিবীর জীবজগতকে ধ্বংস করবে। আর দ্বিতীয় সম্ভাবনা, মহাজাগতিক ভরকে ভক্ষণ করে যদি উহা আয়তনে বৃদ্ধি পায় তবে একসময় সমগ্র সৌরজগৎ এর করাল গ্রাসে নিমজ্জিত হবে!