দ্যা ক্যালকাটা মিরর ওয়েব ডেস্ক: নতুন একটি গবেষণাতে আজ থেকে প্রায় ১৩,০০০ বছর আগে কেন পৃথিবী হঠাৎ করে ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিল তার রহস্যের সমাধান সুত্র মিলতে পারে, এমনটাই দাবি করছেন টেক্সাস এ এন্ড এম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপকের সহ-লেখকের গবেষণা।
মাইকেল ওয়াটার্স, সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অফ ফার্স্ট আমেরিকানস অ্যান্ড টেক্সএএ এন্ড এম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্ট অধ্যাপক, এবং বেলর বিশ্ববিদ্যালয় এবং হিউস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকর্মীরা এই গবেষণা চালিয়েছেন।
আজ থেকে ১৩০০০ বছর আগে হটাত্ করে পৃথিবীতে নেমে আসা ‘হিম-যুগের’ উত্পত্তির কারণ হিসেবে কিছু গবেষক বিশ্বাস করেন যে এই ঘটনা পৃথিবীর সাথে একটি বাহ্যিক বস্তুর সংঘাত যেমন একটি উল্কা সংঘর্ষের কারণেই ঘটেছে। যা পৃথিবীকে প্রায় ৩ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড পর্যন্ত শীতল করেছিল।
কিন্তু ওয়াটার্স এবং তাঁর দল তাদের এই গবেষণাতে দেখেছে যে টেক্সাস এর হলের গুহায় এই হিমযুগ ময়লার স্তরে যে প্রমাণ রেখে গিয়েছে তা একটি ব্যাপক পরিমাণে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলাফল।
ওয়াটার্স বলেন যে হল’স গুহা, টেক্সাস পার্বত্য দেশে অবস্থিত, ২০,০০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিস্তৃত একটি সেডিমেন্টেড রেকর্ড। তিনি ও তার দল প্রথম ২০১৭ সালে এই গুহা গবেষণা শুরু করেন।
তিনি বলেন, “এটি একটি ব্যতিক্রমী রেকর্ড যা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা প্রশ্নের তদন্ত করার জন্য আন্তঃশৃঙ্খলামূলক সহযোগিতার একটি অনন্য সুযোগ প্রদান করে।
ওয়াটার্স আরও জানান যে -“গবেষণার শুরুতেই আমাদের কাছে একটা বড় প্রশ্ন ছিল, প্রায় ১৩,০০০ বছর আগে যখন কানাডায় বরফের চাদর গলে যাচ্ছিল, তখন কি একটি বিশেষ কোন বাহ্যিক প্রভাব ঘটেছিল, যা উত্তর গোলার্ধকে অতিরিক্ত ১২০০ বছরের জন্য বরফ যুগে ফিরিয়ে দেয়?”
কিন্তু এই প্রশ্নের পিছুতারা করতে গিয়ে ওয়াটার্স এবং তার দল দেখেছে যে গুহার ভেতরে প্রাচীন সেডিমেন্টের স্তর আছে যা প্রথমে টমাস স্ট্যাফোর্ড (স্ট্যাফোর্ড রিসার্চ ল্যাবরেটরিজ, কলোরাডো) দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। এই সেডিমেণ্টের স্তর যা প্রস্তাবিত ঘটনার তারিখ বা প্রাসঙ্গিক প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে এবং সম্ভবত প্রাচীন হিম-যুগের প্রারম্ভিক কারণ কে সনাক্ত করতে পারে।
এই ঘটনার প্রভাবে সম্ভবত বিশাল কায় ম্যামথ, ঘোড়া এবং উটের মত বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীদের বিলুপ্তি ঘটাতে সাহায্য করেছে যা একসময় উত্তর আমেরিকায় ঘোরাফেরা করতো।
হিউস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূবিজ্ঞানের অধ্যাপক এবং গবেষণা দলের প্রধান অ্যালান ব্র্যান্ডন বলেন, “এই ঘটনা দেখায় যে এই শীতলতা নামিয়ে আনা ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট ভূ-রাসায়নিক বিক্রিয়াটি খুব একটা অনন্য নয়, কিন্তু এই ঘটনা ৯,০০০ থেকে ১৫,০০০ বছরের মধ্যে মোট চারবার ঘটেছে।”


“এর অর্থ, এই শীতল করে তোলার ঘটনা মহাশূন্য থেকে আসেনি। বরং এটি বায়ুমন্ডলে একটি বৃহৎ উল্কা বিস্ফোরণ পরবর্তি ভূ-রাসায়নিক প্রমাণের পরিবর্তে একটি বিশাল আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের একটি ধারাবাহিক সময়কে প্রতিফলিত করে।”
ব্র্যান্ডন বলেন -“আমি সন্দিহান ছিলাম”। “একটি বিকল্প ব্যাখ্যা নিয়ে আসার জন্য আমরা প্রতিটি পথ অনুসরণ করেছি অথবা এই উপসংহারটিকে এড়িয়ে চলতে চেয়েছি। অতীতে একটি আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতকে একটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল কিন্তু কোন সংশ্লিষ্ট ভূ-রাসায়নিক ফিঙ্গার প্রিন্ট না থাকার দরুণ তা বরখাস্ত করা হয়। “
দলটি জানায়, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের পর, বিশ্বব্যাপী এরোসলের বিস্তার পৃথিবীতে আসা সৌর বিকিরণকে ব্যাপকভাবে প্রতিফলিত করে এবং অগ্ন্যুৎপাতের আকার এবং সময়ের উপর নির্ভর করে এক থেকে পাঁচ বছর ধরে সমগ্র বিশ্ব জুড়েই শীতলতার দিকে টেনে নিয়ে যেতে পারে।
বেলর-এর ভূবিজ্ঞানের অধ্যাপক স্টিভেন ফরম্যান বলেন, “প্রায় ১৩,০০০ বছর আগে সংঘটিত ছোট জলবায়ু পরিবর্তণ জনিত ঘটনা বা ইয়ং ড্রায়াস গত বরফ যুগের শেষে স্বতন্ত্র উষ্ণতার বৃদ্ধিকে বিঘ্নিত করে।”
ফোরম্যান বলেছিলেন, “সম্ভবত যুবক ড্রায়াসের শেষে পৃথিবীর জলবায়ু একটি সঙ্কোচিত বিন্দুতে ছিল, সম্ভবত উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে বরফের প্রবাহ থেকে বর্ধিত তুষার আবরণ এবং শক্তিশালী আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের সংমিশ্রণে তীব্র উত্তরাঞ্চল গোলার্ধের শীতলতা সৃষ্টি হয়েছিল।”
ওয়াটার্স বলেন, “দ্রুত শীতল হওয়ার এই সময়ে উট এবং ঘোড়া সহ বেশ কিছু প্রজাতির বিলুপ্তির ঘটে, এবং ক্লোভিস প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্যের আবির্ভাব ঘটে।”
ব্র্যান্ডন এবং হিউস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা নান সান হলের গুহা থেকে সংগৃহীত পদার্থের আইসোটোপিক বিশ্লেষণ সম্পন্ন করেন। তারা দেখেছেন যে ইরিডিয়াম, রুথেনিয়াম, প্ল্যাটিনাম, প্যালাডিয়াম এবং রিনিয়ামের মত উপাদান সঠিক অনুপাতে উপস্থিত ছিল না, যার মানে একটি উল্কা বা গ্রহাণু এই ঘটনা ঘটায় নি।
এই রিপোর্টের প্রধান লেখক সান জানান “আইসোটোপ বিশ্লেষণ এবং উপাদানের আপেক্ষিক অনুপাত পূর্ববর্তী আগ্নেয় গ্যাসেই পাওয়া গেছে।”
আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত উৎসের কাছাকাছি তাদের সবচেয়ে তীব্র শীতলতা সৃষ্টি করে, সাধারণত অগ্ন্যুৎপাতের বছরে, অগ্ন্যুৎপাতের পরের বছরগুলোতে এই শীতল হওয়ার পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে কম হয়।
ফরম্যান বলেন এই ইয়ং ড্রাইস কুলিং প্রায় ১২০০ বছর ধরে চলে, “তাই বলা যায় যে এ শীতল হওয়ার ঘটনার সূত্রপাত আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের কারণে হয়ে থাকলেও এর পাশাপাশি পৃথিবীর অন্যান্য পরিবর্তন যেমন দীর্ঘকালীন বরফের চাদরে ঢেকে থাকাও এর পরবর্তি কারণ হতে পারে।
গবেষক ওয়াটার্স এর সাথে যোগ করেছেন যে এই “তরুণ ড্রায়াসের শুরুর দিকের সেডিমেন্টে যে রাসায়নিক অসঙ্গতি পাওয়া গেছে তা আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলাফল এবং এটি কোন বাহ্যিক প্রভাবের কারণে সৃষ্ট নয়।”
এই গবেষকদের দল তাদের এই কাজ সায়েন্স অ্যাডভান্সে প্রকাশিত করেছেন।