দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: চোট লাগা জায়গার ফুলে যাওয়াটা আপাতভাবে স্বাভাবিক। কিন্তু এটিও আমাদের ইমিউনো সিষ্টেমের মতই একটি সতর্কীকরণ ব্যবস্থা। আসলে এটা আমাদের শরীরের প্রত্যেক টিস্যুতে উপস্থিত বেশ জটিল এবং দক্ষভাবে সাজানো ব্যবস্থারই বহিঃপ্রকাশ। এই সতর্কীকরণ ব্যবস্থা শরীরের কোন জায়গায় চোট আঘাত লাগলে বা রোগজীবাণুর সংক্রমণ হলে শরীরকে তা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করে তোলে। আর শরীর তখন সেই জায়গাতে প্রদাহ বা inflammation তৈরি করে। যার ফল ওই ফুলে ওঠা বা দপ দপ করা। এই পদ্ধতি আমাদের শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
এবার দেখে নেওয়া যাক কিভাবে ঘটে ঘটনাটা। যখন শরীরের কোন জায়গায় আঘাত লাগে এই গোড়ালি মচকানোর কথাই ধরা যাক, গোড়ালি মচকালে গোড়ালির হাড়গুলোর মধ্যে সংযোগ রক্ষাকারী অপেক্ষাকৃত নরম ও সরু তন্তুগুলি ছিঁড়ে যায়– তখন সেই তন্তুতে থাকা রক্তবাহী ছোট ছোট নালীগুলোও ফেটে যায় আর সুস্থ কোষগুলো যায় মরে। টিস্যুর এই চোট আর কোষের মৃত্যু এই দুইয়ের ফলস্বরূপ এই কোষ বা টিস্যুর মধ্যে আটকে থাকা বেশ কিছু রাসায়নিক যৌগ ক্ষতস্থানে জমা হতে থাকে আর এটাই চোট লাগার সংকেত।
আর মজার ঘটনা এই যে এই সংকেত-জানানো যৌগগুলোর উপস্থিতি আশেপাশের সুস্থ রক্তবাহী নালীগুলো শনাক্ত করতে পারে। তখন তারা হয় ফুলে ওঠে , এবং বেশিমাত্রায় ক্ষরণপ্রবণ হয়ে ওঠে । ফলে ক্ষতস্থানে রক্ত বেশি করে যায় এবং রক্তস্রোতে উপস্থিত বিভিন্ন প্রোটিন আর রক্তকণিকারা ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যুতে ছড়িয়ে পড়ে। রক্তস্রোত থেকে প্রচুর জলও ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যুতে ছড়িয়ে পড়ে – যার জন্যে চোটলাগা জায়গাটা কিছুক্ষণের মধ্যেই ফুলে ওঠে।
শুধু আশপাশের রক্তস্রোতের লোহিত রক্তকণিকা নয় এর সাথে শ্বেত রক্তকণিকারাও চোটের ওই রাসায়নিক সংকেত বুঝতে পেরে ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যুতে চলে যেতে বাধ্য হয়। এই রক্তকণিকারা মৃত টিস্যুদের খুঁজে খুঁজে বার করে ধ্বংস করে, যাতে তার জায়গায় নতুন সুস্থ টিস্যু জন্মাতে পারে। যেসব ক্ষতিগ্রস্ত কোষকে সারানো যায় না, তাদেরও এই শ্বেত রক্তকণিকারা মেরে ফেলে। এসব ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যুর ধ্বংসাবশেষ ধীরে ধীরে রক্তস্রোতে ফিরিয়ে নেওয়া হয়, যাতে তা শরীরের অন্য অংশের মাধ্যমে বের করে দেওয়া যায় এই যেমন কিছুটা ইউরিনের মাধ্যমে কিছুটা ঘামের মাধ্যমে বেরিয়ে যায়।
আর এই ক্ষতিগ্রস্ত অংশগুলো যখন এইভাবে পরিষ্কার করা হচ্ছে, তখন ক্ষতস্থানে উপস্থিত অন্য সুস্থ কোষেরা নতুন টিস্যু বানানো শুরু করে। তবে এই পদ্ধতি সম্পূর্ণ হতে বেশ কিছুটা সময় লাগে যেমন কয়েক সপ্তাহ বা কিছু ক্ষেত্রে কয়েক মাসও লেগে যেতে পারে।