দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: লাল রঙ নারীসত্বার। নারীর অহংকারের প্রতীক, তা সিঁদুর হোক কিংবা ঋতুচক্রের রক্তের রঙ। এই রক্তেই লুকিয়ে রয়েছে নারী শরীরের গোপন কথা। বিজ্ঞান বলছে পিরিয়েডের রক্তের রং’ই বলতে পারে কেমন আছে আপনার শরীর। প্রতিটি মেয়ের বড়ো হয়ে ওঠা এই পিরিয়ড বা ঋতু চক্রের মধ্যে দিয়ে। মেয়েদের জীবনের একটা বড় অংশ হল এই পিরিয়ড। এটি একটি যন্ত্রনাদায়ক উপলব্ধি হলেও মেয়েদের সুখের চাবিকাঠি। এই প্রাক পিরিয়ড সিনড্রোম(পিএমএস) চলাকালীন মহিলারা প্রচণ্ড হতাশা, উদ্বেগ, আত্মঘাতী চিন্তাভাবনা এবং নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকার অনুভূতিতে পড়তে পারেন। তবে অনেকেই তাদের ঋতুচক্রকে আড় চোখে দেখে।
অক্ষয়কুমার অভিনিত ‘প্যাডম্যান’ ছবিটি মানুষের মনের অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন করতে পারলেও এর পথচলা এখনও অনেকটাই বাকি। তবে অল্প বয়সী মেয়েদের, তাদের প্রথমে হওয়া পিরিয়ড সম্পর্কে সচেতন হওয়া বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, এমনটাই দাবি বিশেষজ্ঞদের। তবে এখনও অনেকেই একে গোপন বিষয় বলে চিহ্নিত করে। বিরক্তি,রাগ,ঘেন্না দূরে সরিয়ে যদি পিরিয়ড অর্থাৎ ঋতুচক্রের সময় রক্তের রঙটি খেয়াল করে দেখবেন নারীরা তাদের শরীরের অনেক গোপন কথাই জানতে পারবেন।
পিরিয়ডের সময় মেয়ে বা মহিলা উভয়েই চড়ম তলপেটে যন্ত্রণা, হেভি ফ্লো, মুড সুইং প্রভৃতি মিলিয়ে ভীষণ বিরক্তিকর একটা মূহুর্ত অনুভব করেন। কিন্তু এই সব উপসর্গের সাথে সাথে যদি রক্তের রঙের দিকে একটু খেয়াল করা যায় তাহলে বোঝা যাবে অনেক কিছুই। এই যেমন যদি শরীরে কোনও রোগ বাসা বেঁধে থাকে তা ও জানিয়ে দেবে পিরিয়ডের সময় হওয়া রক্তের রঙ।
‘আমেরিকান অ্যাকাডেমি অফ ওবেস্টেরিয়ানস অ্যান্ড গাইনোকোলজিস্টের’ প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী “পিরিয়ডের ব্যাপ্তি ও রক্তের রঙ দেখে জানা যায় কেমন আছে শরীর”। পিরিয়ডের রক্তের রঙ কখনো গাঢ় লাল, কখনো খয়েরি আবার কখনও কালোও হয়। রক্তের এই প্রতিটি রঙের পেছনেই দায়ী বিশেষ কিছু শারীরবৃত্তীয় কারণ। আমেরিকার একজন গাইনোকোলজিস্ট বোঝানোর সুবিধার জন্য রক্তের রঙকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন। (১)ফ্রোজেন ব্লুবেরি, (২)স্ট্রবেরি জ্যাম, (৩)ক্র্যানবেরি জুস।
রক্তের রঙ যদি কালচে খয়েরি অর্থাৎ ফ্রোজেন ব্লুবেরির মতো হয় তবে বুঝতে হবে শরীরে ‘ইস্ট্রোজেনের’ মাত্রা বেশি পরিমানে রয়েছে। যার ফলে ইউটেরাসের লাইনিং মোটা হয়ে গিয়েছে। যদি এমনটা হয় তাহলে মেয়েদের রক্তপাত বেশি হবে।
পিরিয়ডের সময় রক্তপাতের রঙ যদি চটচটে লাল অর্থাৎ স্ট্রবেরি জ্যামের মতো হালকা রঙের হয় তাহলে বিষয়টা ঠিক উল্টো হবে অর্থাৎ তখন নারীর শরীরে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কম হবে। এক্ষেত্রে ইউটেরাসের লাইনিং পাতলা হয় এবং রক্তপাতও কম হয়। অর্থাৎ তাহলে জানতে হবে যে আপনি হরমোনাল ইমবেলেন্স ভুগছেন। প্রসঙ্গত, রক্তের রং এমন হলে অনেক সময় ‘ইউটেরাইন ফাইব্রয়েডস’ হওয়ার আশঙ্কাও বেড়ে যায়।
যদি রক্তের রঙ ক্র্যানবেরি জুসের মতো উজ্জ্বল লাল রঙের হয় তবে তা হবে সবচেয়ে স্বাভাবিক। রক্তের রঙ যদি লাল হয় তাহলে বুঝবেন আপনার শরীর একেবারে ঠিক আছে। অর্থাৎ রক্তের রং এমনটাই হওয়া উচিত।এক্ষেত্রে ফ্লো যেমন স্বাভাবিক থাকে, তেমনই হরমোনের মাত্রাও স্বাভাবিক থাকে।
এছাড়া জলে রক্ত মিশলে যেমন রং হয়, আপনার পিরিয়ডের সময়কার রক্তের রং যদি তেমন হয়, তাহলে বুঝবেন আপনি অপুষ্টি অথবা অ্যানিমিয়ায় ভুগছেন। আবার যদি রক্তের রঙ ধূসর লাল হয়ে যায় বা পিরিয়ডের সময় যদি কড়া বা বাজে গন্ধ বেরোয় তাহলে সেক্সুয়াল ট্রান্সমিটেড ডিজিজে আক্রান্তের সম্ভাবনা লক্ষ্য করা যায়। সেক্ষেত্রে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা দরকার। পুষ্টিবিদ ডাঃ সানা খান মাসের এই সময়টিতে “প্রোটিন, ভাল ফ্যাট এবং জটিল শর্করা যেমন পুরো শস্য, লেবু এবং শাকসব্জির সংমিশ্রণ” খাওয়ার মাধ্যমে রক্তে শর্করার মাত্রাকে ভারসাম্যহীন করার পরামর্শ দেন।