দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: পশ্চিম ঘাটের পাদদেশে অবস্থিত একটি প্রত্যন্ত গ্রাম সিংগাপাথি। যা এক কামরার কিছু সংখ্যক কুঁড়ে ঘরের সমষ্টিমাত্র। এই গ্রাম বিশেষভাবে পরিচিত এই কারণে, এটি ইরুলা উপজাতিদের প্রাচীনতম চিকিৎসক ‘চেট্টির’ বাসস্থান, যিনি একটি বড় বন গাছের নিচে রোজ তাঁর ভেষজ পসরা সাজিয়ে বসেন। তাঁর সামনে বিভিন্ন প্রজাতির গাছের ডাল, শিকড় এবং পাতা প্রদর্শিত থাকে।
সময় টা ২০১৬ সাল। চেট্টির মতো একজন আদিবাসী চিকিৎসকের সাথে দেখা করতে একটি জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যম পশ্চিম ঘাটের প্রত্যন্ত আদিবাসী গ্রামে ৩০ জন আয়ুর্বেদ চিকিৎসক, ঔষধি উদ্ভিদ গবেষক, উদ্ভিদবিদ এবং প্রাণীবিদদের একটি দলকে নিয়ে হাজির হন। তাঁরা সকলে মিলে হাজির হন পশ্চিম ঘাটের প্রত্যন্ত আদিবাসী গ্রামে।


যদিও তাঁর চেহারা তাঁর দক্ষতার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে, চেট্টি চাদিভাল, সিঙ্গাপাথি, সিরুভানি বেল্টের মধ্যে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য চিকিৎসক হিসেবে বিবেচিত। তাঁর ঠাকুরদার কাছ থেকে কিছু কিছু জিনিস শেখা ছাড়া তাঁর কোন আনুষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ হয়নি। তবুও আশ্চর্যজনকভাবে সে তার নিজের ভেষজ বাগানের ঔষধি উদ্ভিদের বিশেষজ্ঞ।
চেট্টি বলেছিলেন, “যে কোন অসুখ নিরাময়ের জন্য প্রয়োজনীয় সব উদ্ভিদ এবং ওষুধ আমার কাছে আছে। লোকটি, তার কথায় সত্য, এমনকি প্রাক্তন বিরল ‘ভারতীয় হেড জিঞ্জার’ বা দুলভ আদা দিয়ে উপস্থিত গবেষক এবং ডাক্তারদের বিস্মিত করতে সক্ষম হয়েছে। কারণ ইনস্টিটিউট অফ ফরেস্ট জেনেটিক্স অ্যান্ড ট্রি ব্রিডিং-এর বিজ্ঞানী সি কুনহিকান্নান জানিয়েছেন, “উদ্ভিদ ইনসুলিন নামে পরিচিত সেই আদা, একটি বিদেশী প্রজাতির শেকড় যা ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
সি কুনহিকান্নান আরও বলেন যে “যদিও চেট্টি দাবি করেন যে তিনি এটি পাহাড় থেকে কেটে এনেছেন, তবুও এটা বিশ্বাস করা কঠিন কারণ প্রজাতিটি স্বাভাবিকভাবেই শুধুমাত্র দক্ষিণ আমেরিকায় পাওয়া যায়। তবুও সেটি তিনি কিভাবে নিজের বাগানে চাষ করলেন সেটাই রহস্যের।
তিনি বৈকুল্লাম গাছের কয়েকটি ডালও দেখিয়েছিলেন। চোখের সমস্যা চিকিত্সার জন্য এই উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য দশকের পর দশক ধরে নথিভুক্ত করা হয়েছে। একজন চিকিৎসক পি কালিচামি বলেন ” এটা পশুদের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। পোঙ্গলের সময়, গরু এবং অন্যান্য গবাদি পশুকে এই উদ্ভিদ থেকে মালা তৈরি করে পরিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়াও এই উদ্ভিদের কিডনি’র পাথর দ্রবীভূত করার ক্ষমতা রয়েছে।”


আয়ুর্বেদ ডাক্তাররা গ্রামের আর একজন মহিলা চিকিৎসকের সাথেও দেখা করেন যিনি মসৃণ প্রসব ( Smooth Labour delivery) পরিচালনা করতে দক্ষ। ওই আদিবাসী চিকিৎসক বললেন, “প্রসবের আগে আমি ওই মহিলাকে একটু ক্যাস্টর অয়েল দিই। আমি ওর পেটও ক্যাস্টর অয়েল দিয়ে ঘষি। শিশুর জন্মের পর আমরা মা ও শিশুকে স্নান করাই।” তিনি আরও বলেন যে, গর্ভবতী মাকে রাসাম ভাত খাওয়ানো হয় যা জিরা, গোলমরিচ, রসুন এবং কিছু ঠাণ্ডা ভাত যা তাকে প্রসব পরবর্তী জটিলতা থেকে আরোগ্য লাভ করতে সাহায্য করে।”
ডাক্তারদের দল সম্পুর্ণ গ্রাম ঘুরে অভিভূত। এই গ্রামে বাইরের শহর থেকে বহু মানুষ রোগ চিকিত্সার জন্যে আসেন। আরও অদ্ভুত বিষয় এই যে বাইরের থেকে শুধু লবণ ছাড়া এই গ্রামে অন্য কোনো খাবার প্রবেশ করে না। আর গ্রামের মুষ্টিমেয় আদিবাসীদের প্রত্যেকেই কিছু না কিছু চিকিত্সায় পারদর্শী। যাঁরা নিরক্ষর হলেও বংশ পরম্পরাতে প্রকৃতির কোল থেকে অমৃত সিঞ্চনে পারদর্শী। বৈদ্যরাজের আশীর্বাদ যাদের ওপরে সদাই বর্ষণ মুখর।