দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: মঙ্গলে প্রানের স্পন্দন, অদূর ভবিষ্যতে মঙ্গলে বসতি স্থাপনের তথ্য অবাক করেছিল গোটা বিশ্বকে। এখন আবার মঙ্গলে ফলনের কথাও তুলে ধরলেন বিজ্ঞানীরা। তাদের দাবি, মানুষ পরবর্তী সময়ে মঙ্গল গ্রহে বসতি স্থাপন করলেও করতে পারে। আর তখন যদি হাতের কাছে নিয়মিত খাবারের জোগান দেওয়া না যায়, তা হলে চলবে কী করে? এই ফল স্বরূপ মঙ্গলে হতে পারে অ্যাভোকাডোর চাষ।
শুনতে অদ্ভুত লাগলেও এটাই সত্যি। ইতিমধ্যে সে গবেষনার প্রাথমিক পর্যায়ে, অ্যাভাকাডোর বীজ সংরক্ষণ প্রক্রিয়া দ্বারা ‘ক্যুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটির বৈজ্ঞানিকদের সহযোগিতাতে শুরু হয়েছে এই প্রক্রিয়া। চাহিদা অনুযায়ী এই ফল পাওয়া দুর্লভ। এটি ক্রিমযুক্ত টেক্সচার সহ একটি প্রস্তর ফল যা উষ্ণ জলবায়ুতে বৃদ্ধি পায়। সঠিক স্বাস্থ্যের জন্য এই ফল এক অতি অত্যাবশ্যকীয় ফল।
অন্য কোন ফল নয় আমরা আলোচনার করছি অ্যাভাকাডো ফল নিয়ে। এই ফল নাশপাতি বা মাখন ফল হিসেবেও পরিচিত। এই ফলে প্রচুর পরিমাণে মনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড (এমুএফএ), ভিটামিন খনিজ, ক্যালোরি, কার্বহাইড্রেট,ভিটামিন সি, ই, কে,এর পাশাপাশি রিবোফ্লাভিন, নিয়াসিন ওমেগা৩, ক্যারোটিন সহ বিভিন্ন গুনাবলী বর্তমান। যা হজমের উন্নতি, হতাশার হ্রাস ঝুঁকি, ক্যান্সারের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে, ডায়াবেটিস সহ মৃত্যুর ঝুঁকি হ্রাস করতে,স্বাস্থ্যকর রঙ এবং চুল গজাতেও এটি ভীষণ উপকারী ফল হিসেবে ব্যবহৃত।
তবে এই ফলের উৎপাদন অনেক কম। ফলের জোগান প্রায় নেই বললেই চলে। তবে বৈজ্ঞানিকদের এই আবিষ্কারের ফলে এখন থেকে বেশি পরিমাণে উৎপন্নও করা যাবে এই অ্যাভোকাডো। এক আশ্চর্য পদ্ধতিতে এ বার অ্যাভাকাডোর বীজ সংরক্ষণ করতে চলেছেন বিজ্ঞানীরা। ফল জোগানোর প্রক্রিয়াটা কী?
ক্যুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটির বৈজ্ঞানিকরা দাবি, ‘অ্যাভাকাডোর বীজ সংরক্ষণ করার জন্য এবং গাছের চটজলদি বৃদ্ধির জন্য এই গাছ রাখা হবে তরল নাইট্রোজেনে। তবে তরল নাইট্রোজেনে রাখার আগে ফলের বীজ মুড়ে নেওয়া হবে একটি অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলে। অতঃপর ক্রিয়োটিউবে রেখে এই সংরক্ষণ প্রক্রিয়াটি চালাতে হবে। এর ফলে দুই মাস বাদেই গাছে পাতা চলে আসবে’।
কী এই ক্রিয়োপ্রিজার্ভিং?
ক্রিয়োপ্রিজার্ভিং-এর ফলে জিনিসের সেলুলার স্ট্রাকচার একই থাকে। মূলত আইভিএফ পদ্ধতিতে -৩২০ ডিগ্রি ফারেনহাইটে শুক্রাণু এবং ডিম্বাণু সংরক্ষণের জন্য মূলত এটা কাজে লাগানো হয়। ক্যুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটির বৈজ্ঞানিকরা গাছ ক্রিয়োপ্রিজার্ভ করতে গিয়ে লক্ষ্য করেছেন যে, ৮০% ক্ষেত্রেই গাছগুলি ঠিকঠাক ভাবে বেড়ে উঠছে।
‘ইউনিভার্সিটি সেন্টার ফর হর্টিলকালচার সায়েন্সের’ প্রফেসর নিনা মিটার জানিয়েছেন, এগুলোকে স্পেস-এজ অ্যাভাকাডো বলা যেতেই পারে। মানুষ যখন মঙ্গলে যাবে, তখন এই গাছগুলিও ক্রিয়ো-ফ্রোজেনের পর পাঠানো হবে। অ্যাভাকাডো উৎপাদন বেশী করার জন্যই এই অভিনব পদ্ধতির তৈরী।বৈজ্ঞানিকদের এই আবিষ্কারের ফলে এখন থেকে বেশি পরিমাণে অ্যাভাকাডো উৎপন্নও করা যাবে।


এ প্রসঙ্গে ক্যুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটির এক ছাত্র ক্রিস ও’ব্রায়েন জানান, এই পদ্ধতিতে অ্যাভাকাডো সংরক্ষণ করলে পোকামাকড়, দাবানল এবং বিভিন্ন ছত্রাকের সংক্রমণের হাত থেকেও এই ফল বাঁচাবে।তবে এই তরল নাইট্রোজেনের তাপমাত্রা কমাতে কোন বিদ্যুতের দরকার পড়ে না। তাই এই পদ্ধতিতে বিনা বিদ্যুতেই অ্যাভাকাডো ঠিকমতো সংরক্ষিত থাকবে। গবেষকদের উদ্দেশ্য শুধু অ্যাভাকাডো সংরক্ষণ করাই নয়, এর উৎপাদন বাড়ানোও।
অ্যাভাকাডো সংরক্ষণের গবেষণা আজ থেকে ৪০ বছর আগে থেকে চললেও বিজ্ঞানীরা এই প্রথম গবেষণায় সফলতা পেয়েছেন। অবশ্য এই ক্রিয়োপ্রিজার্ভ পদ্ধতিতে কলা, আঙ্গুর এবং আপেলও সংরক্ষণ করা হয়।