দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: হেপাটাইটিস-এ, হেপাটাইটিস-বি এর পর হেপাটাইটিস-সি রোগের ভাইরাস আবিষ্কার করে এবছর চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পেলেন হার্ভে জে অল্টার, চার্লস এম রাইস, এবং মাইকেল হটন নামে এই তিন দিগগজ চিকিৎসক। চিকিৎসা বিজ্ঞানে তাদের এই অবদানকে সন্মান জানিয়েই সুইডেনের নোবেল অ্যাসেম্বলি কতৃক প্রকাশিত নোবেলের তালিকায় ঘোষনা করা হয়েছিল এই তিন বিজ্ঞানীর নাম।
এর আগে ১৯৭৬ সাল নাগাদ হেপাটাইটিস-বি এর জীবানু আবিষ্কার করে চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পেয়েছিলেন চিকিৎসাবিজ্ঞানী বারুখ ব্লুমবার্গ। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে হেপাটাইটিস-এ জীবানু খাবার কিংবা জলের মাধ্যমে শরীরে ছড়ায়। এর শারীরিক ক্ষতির সম্ভাবনা তেমন একটা নয়। খুব কম এবং বিশেষ অবস্থাতেই এই রোগকে মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছতে দেখা গেছে।
অপরদিকে হেপাটাইটিস বি এর জীবানু দেহের রক্তের মাধ্যমে সংক্রমণ ঘটায়, যাকে চলতি কথায় জন্ডিসও বলে। হেপাটাইটিস-বি রোগ নয় কেবল রোগের উপসর্গ মাত্র হলেও এর দ্বারা শরীরে একাধিক জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু গবেষনা বলছে এসবের থেকেও ভয়াবহ রক্তজাত হেপাটাইটিস-সি।
লিভারের প্রদাহ ,ক্যান্সারের সহ লিভারের অন্যান্য জটিল রোগের অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এই ভাইরাসকে। এর প্রভাব এতই মারাত্মক যে টিউবারকুলোসিস তথা এইডস এর মতোন ভয়াবহ রোগের সাথে এর তুলনা করা যেতে পারে।
তাঁরা কিভাবে একটি নতুন ভাইরাস আবিষ্কার করেছে?
হার্ভে জে অল্টার, যিনি রক্ত সঞ্চালন প্রাপ্ত রোগীদের হেপাটাইটিস নিয়ে গবেষণা করছিলেন, তিনি অনেক অব্যাখ্যায়িত সংক্রমণ খুঁজে পেয়েছেন। হেপাটাইটিস-এ এবং হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস সংক্রমণের পরীক্ষায় দেখা গেছে যে তারা এর কারণ ছিল না। তার দল দেখিয়েছে যে এই রোগীদের রক্ত শিম্পাঞ্জিদের কাছে এই রোগ ছড়াতে পারে, এবং আরো গবেষণায় দেখা গেছে যে এর পিছনে একজন অজানা সংক্রামক এজেন্ট রয়েছে। এই রহস্যময় নতুন অসুখকে বলা হয় “নন-এ, নন-বি” হেপাটাইটিস।
এই নতুন ভাইরাসকে ‘ভাইরাস বিচ্ছিন্ন করার জন্য ঐতিহ্যগত কৌশল’ ব্যবহার করে বেশ কয়েক বছর ধরে বিচ্ছিন্ন করা যায়নি। মাইকেল হিউটন এবং তার দল একটি আক্রান্ত শিম্পাঞ্জির রক্ত থেকে ডিএনএ টুকরো সংগ্রহ তৈরি করে এবং পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অনুসন্ধান করে। তারা ফ্ল্যাভিভাইরাস পরিবারের একটি অভিনব আরএনএ ভাইরাস খুঁজে পায় এবং এর নাম দেয় হেপাটাইটিস-সি ভাইরাস।
এই নতুন ভাইরাস শুধুমাত্র হেপাটাইটিস ঘটাতে পারে কিনা তা বোঝার জন্য চার্লস এম. রক্তে এই ভাইরাস শনাক্ত করা হয় এবং শিম্পাঞ্জিরা এই রোগে আক্রান্ত মানুষের মতই পরিবর্তন প্রদর্শন করে। এটাই ছিল চূড়ান্ত প্রমাণ যে এই ভাইরাসই ট্রান্সফিউশন-মিডিয়াটেড হেপাটাইটিসের অব্যাখ্যায়িত ঘটনার পেছনে ছিল।
এই আবিষ্কার কেন গুরুত্বপূর্ণ?
তিনজন নোবেল বিজয়ীর আবিষ্কার সংবেদনশীল রক্ত পরীক্ষা রচনায় সাহায্য করেছে যা ট্রান্সফিউশন-ট্রান্সমিটেড হেপাটাইটিসের ঝুঁকি দূর করেছে। তাদের আবিষ্কার হেপাটাইটিস সি নির্দেশিত এন্টিভাইরাল ড্রাগ বিকাশে সাহায্য করেছে। এটি এখন বিশ্বের জনসংখ্যা থেকে এই ভাইরাস নির্মূল করার আশা তৈরি করেছে।


উল্লেখ্য, প্রতি বছর সারা পৃথিবীজুড়ে হেপাটাইটিস-সি’ তে প্রান হারান প্রায় ৪ লক্ষ মানুষ। এবং আক্রান্ত হন প্রায় ৭০ মিলিয়নেরও বেশী মানুষ। ভাইরাসের শনাক্তকরণের ফলে, তার ধরনের ভিত্তিতে এ রোগের চিকিৎসা করা সম্ভবপর হবে যার ফলে অনেক রোগীই প্রানে বাঁচবেন বলে আশাবাদী চিকিৎসামহলের একাংশ।