দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: কলকাতায় অস্বাভাবিক ভাবে মৃত্যু ঘটলো বর্ষীয়াণ ফ্যাশন ডিজাইনার শর্বরী দত্ত’র। ৮০ বছরের এই প্রবীণা’র বড় কোনো অসুখের ইতিহাস ছিল না। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে আচমকাই তাঁর মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে আসে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে তাঁকে শৌচাগারে মৃত অবস্থাতে পাওয়া গিয়েছে। আপাত দৃষ্টিতে দুর্ঘটনা বলে মনে হলেও তাঁর কানের কাছে একটি ক্ষত চিহ্ন রয়েছে যা পুলিশকে অন্যভাবে ভাবতে বাধ্য করছে। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট এলে তবেই সঠিক তথ্য সামনে আসবে বলে মনে করছে কলকাতা পুলিশের আধিকারিকরা। তাঁর মৃত্যুতে মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমেছে টালিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রি সহ দেশের ফ্যাশন জগতে।
পরিচিতদের মধ্যেও শর্বরী দত্তের মৃত্যুর কারণ নিয়ে রহস্য’ জট তৈরি হয়েছে। পরচিত সূত্রে খবর, গতকাল সকাল থেকেই তাঁর ফোন বন্ধ ছিল। বহুবার চেষ্টা করেও তাঁর সাথে যোগাযোগ করতে পারেননি অনেকেই। সন্দেহ দানা বাঁধতেই গভীর রাতে খোঁজ পরে তাঁর। অবশেষে ব্রড স্ট্রিটের বাড়ির শৌচাগারেই মেলে দেহ। একনজরে মৃত্যুর সম্ভাব্য কারণ হার্ট অ্যাটাক মনে হলেও, দু একটি ছোটখাটো বিষয় দেখে পুলিশ গোটা ঘটনার তদন্ত না করে কোনো চুড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসতে চাইছেন না।
উল্লেখ্য, নিজের বাড়িতেই ছেলে ও পুত্রবধূর সঙ্গে থাকতেন শর্বরী। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে জানা গিয়েছে , বৃহস্পতিবার সারা দিনই তাঁদের সঙ্গে শর্বরীর কোনো রকম কথাবার্তা হয় নি। ছেলে ও পুত্রবধু জানিয়েছে গত ১৬ তারিখ ডিনারের টেবিলেই তাঁদের সাথে মায়ের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। তার পরেই ১৭ তারিখ সারা দিন কেটেগিয়ে রাতে এই ঘটনা। গভীর রাতেই দরজা ভেঙে উদ্ধার হয় দেহ। মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। ছেলে ও পুত্রবধুকেও পুলিশ তাদের স্ক্যানারে রেখেছেন।
দেহ দেখে প্রাথমিকভাবে পুলিশ চিকিৎসক জানিয়েছেন,বাথরুমে যে অংশে তাঁর দেহ পড়েছিল, সেখানে রক্ত দেখতে পাওয়া গিয়েছে। কানের পাশেও একটি ক্ষতচিহ্ন রয়েছে বলেও জানিয়েছেন পুলিশ ও চিকিৎসক। তবে তাঁর দেহ কতক্ষণ শৌচাগারে পড়ে ছিল সে বিষয়ে এইমুহুর্তে বিশেষ কিছু জানা যায়নি।


শর্বরী দত্ত, ১৯৯৪-৯৫ সালে কলকাতা’র ফ্যাশন জগতে অন্য রকম ধারা নিয়ে কাজ করতে শুরু করেন। ইতিহাস জানায়, ভারতে তথা বাংলায় তখন পুরুষদের ফ্যাশন নিয়ে কারো কোন মাথা ব্যাথা ছিল না। ঠিক সেই ফাঁকা জায়গাতেই পুরুষের পোশাকে অভিনব উদ্ভাবনী ভাবনার ছোঁয়া দেন শর্বরী।
ভারতীয় পুরুষদের জাতীয় পোশাক ‘ধুতি’র নতুন নতুন চমকেই সারা দুনিয়ায় খ্যাতি অর্জন করেন তিনি। তিনি রঙিন ধুতির পাড়ে কাঁথা স্টিচ বা রাজস্থানী প্রিন্ট এর ব্যবহার করে অন্য মাত্রায় তাঁর শৈল্পিক ভাবনা ফুটিয়ে তুলতে পারঙ্গমতা দেখান। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন দেশের লোক সংস্কৃতিকে পোশাকের বিভিন্ন অংশে ফুটিয়ে তুলতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। মিশরীয় সভ্যতার হায়ারোগ্রীফিক লিপিকে পাঞ্জাবি বা ধুতির গায়ে ফুটিয়ে তুলে এই পোশাককে আন্তর্জাতিক ময়দানে একটা পরিচিতি এনে দিয়েছিলেন তিনি। ২০০৮ এ এই কারুকার্য’র জন্যে আন্তর্জাতিক পুরস্কারও জিতেছিলেন তিনি।
উল্লেখ্য, টালিগঞ্জ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির একাধিক অভিনেতা’র পোশাক ডিজাইনে তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত। কিংবদন্তি পরিচালক ঋতুপর্ণ’র পোশাক থেকে শুরু করে হালফিলে সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ওয়েডিং কস্টিউম, এই সবের মূলেই ছিলেন এই প্রথিতযশা শিল্পী।