দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: ইপোথাইরয়ডিজম, হাইপারথাইরয়েডিজম ও গলগন্ড কী এ নিয়ে অনেকের ভালো ধারণা নেই। হটাত্ ই দেখলেন ওজনটা কোনও কারণ ছাড়াই বেড়ে যাচ্ছে! কোনও কারণ ছাড়াই, খাবার ঠিকমত খাওয়ার পরও ওজন কমে যাচ্ছে! আগের মতো গরমটা আর সহ্য হচ্ছে না বা ঠান্ডাটা অসহ্যের পর্যায়ে চলে গেছে! প্রচুর ঘামে ভিজে যাচ্ছে শরীর! ক্লান্তিবোধ আপনাকে কাবু করে ফেলছে! গলার স্বরটি পরিবর্তিত হয়ে গেলো কি হঠাৎ করেই! এরকম আরো অনেক সমস্যা হতে পারে আপনার, যদি আপনার শরীরে থাইরয়েড নামক অতি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থিটা অসুস্থ হয়ে পড়ে।
জেনে নেওয়া যাক থাইরয়েড কী?
থাইরয়েড প্রজাপতির মত দেখতে একটি গ্রন্থি, যেটা গলায় থাকে, গলার কলার বোন বা বিউটি বোন নামক হাড়ের ওপরে। এটি একটি এন্ড্রোক্রাইন গ্রন্থি। এটি হরমোন তৈরি করে। আর থাইরয়েড হরমোন আমাদের শরীরে জৈব বিপাক ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। তাই এর গুরূত্ব অনেক।


থাইরয়েড গ্রন্থিতে কী কী সমস্যা হতে পারে?
থাইরয়েডে অনেক রকম রোগ হতে পারে। নিচে হাইপোথাইরয়ডিজম, হাইপারথাইরয়েডিজম ও গলগন্ড রোগ নিয়ে আলোচনা করা হলো।
ক) হাইপোথাইরয়ডিজম
যখন শরীরের প্রয়োজনের চেয়ে কম থাইরয়েড হরমোন নিঃসৃত হয়, তখন তাকে হাইপোথাইরয়ডিজম বলে। কখন বুঝবো যে আমি এই রোগে ভুগছি? চলুন জেনে নিই এর কিছু লক্ষণ।
হাইপোথাইরয়ডিজম এর লক্ষণসমূহ
১) কাজ করতে এনার্জি না পাওয়া বা ক্লান্তবোধ করা।
২) খাওয়ার রুচি কমে যাওয়া।
৩) পর্যাপ্ত খাবার না খাওয়ার পরেও শরীরের ওজন অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে যাওয়া।
৪) ঠান্ডা একদমই সহ্য করতে না পারা।
৫) চুল ও ত্বক শুকনো ও মোটা হয়ে যাওয়া।
৬) মেয়েদের ঋতুচক্রের সময় প্রচুর রক্ত বেরনো ও অনিয়মিত মাসিক হওয়া।
৭) অকারণে মুখ ফুলে যাওয়া।
৮) অহেতুক হতাশাগ্রস্থ হওয়া।
৯) মাংসপেশীতে ব্যথা হওয়া।
১০) পায়খানা কষে যাওয়া।
১১) বন্ধ্যাত্বতায় ভোগা।
১২) মানসিক অবসাদে ভোগা।
১৩) যৌন চাহিদা কমে যাওয়া।
১৪) হার্ট এর গতি কমে যাওয়া।
১৫) থাইরয়েড গ্রন্থি ফুলে যাওয়া বা গোটা গোটা ওঠা। যাকে মেডিকেল ভাষায় গয়টার বলে।
এই সমস্ত লক্ষণ কয়েকটা একসাথে দেখা দিলে ডাক্তার এর শরনাপন্ন হবেন। ডাক্তার আপনাকে কিছু পরীক্ষা করতে দেবে। পরীক্ষার ফল দেখে ডাক্তার নিশ্চিন্ত হবেন আসলেই আপনি হাইপোথাইরয়েডিজম এ ভুগছেন কিনা? এরপর প্রয়োজনীয় চিকিৎসা বলে দেবেন ডাক্তার।


হাইপোথাইরয়েডিজম এর কারণ কী?
১) হাসিমোটর থাইরয়েডাইটিস নামক অটোইমিউনো ডিজিস থাকলে।
২) থাইরয়েড গ্লান্ড কোন কারণে শুকিয়ে গেলে।
৩) থাইরয়েডেকটমি নামক অপারেশনের পর।
৪) কিছু কিছু ওষুধ বা এন্টিথাইরয়েড ড্রাগ এর ওভার ডোজ হয়ে গেলে।
৫) আয়োডিনের অভাব হলে।
৬) ডিজহরমোজেনেসিস হলে।
৭) পিটুইটারিতে অসুখ হলে।
৮) হাইপোথ্যালামিক এ অসুখ হলে।
এছাড়া আরো অনেক কারণে হতে পারে।
হাইপোথাইরয়েডিজম এর চিকিৎসা কী?
এই রোগের চিকিৎসা তুলনামূলকভাবে সোজা। মুখে খাবার জন্য থইরক্সিন হরমোন এর ট্যাবলেট দেওয়া হয়। যেটা অনেক সময় আজীবন খেয়ে যেতে হয়।
খ) হাইপারথাইরয়েডিজম
শরীরের প্রয়োজনের তুলনায় বেশি থাইরয়েড হরমোন ক্ষরিত হলে এই রোগ হয়।
হাইপারথাইরয়েডিজম এর উপসর্গগুলো কী কী?
১) খাবারের রুচি বেশ ভালো থাকার পরেও শরীরের ওজন কোন কারণ ছাড়াই কমে যাওয়া।
২) প্রচুর ঘামা, গরম একেবারে সহ্য না করতে পারা।
৩) হাতের তালু ঘেমে যাওয়া।
৪) মাংস পেশীতে শক্তি না পাওয়া।
৫) হাত পা কাঁপা।
৬) অনিয়মিত মাসিক হওয়া।
৭) ঘুমে সমস্যা হওয়া।
৮) ডিস্টার্ব ও নার্ভাস থাকা।
৯) চোখে ঝাপসা দেখা।
১০) ঘন ঘন হওয়া পাতলা পায়খানা ।
১১) বুক ধুকপুক ধুকপুক করা,ও হার্ট বিট বেড়ে যাওয়া।
১২) উচ্চ রক্তচাপ হওয়া।
১৩) চুল পাতলা হয়ে যাওয়া।
১৪) থাইরয়েড গ্লান্ড ফুলে গেলে বা বড় হয়ে যাওয়া।
তার মানে দেখা যাচ্ছে হাইপোথাইরয়েডিজম এর বিপরীত উপসর্গ গুলোই হলো হাইপারথাইরয়েডিজম এর।
হাইপারথাইরয়েডিজম এর কারণ কী?
হাইপারথাইরয়েডিজম এ গ্রেবেশ নামক অটোইমিউনো ডিজিজ
১) graves নামক অটোইমিউনো ডিজিস হলে।
২) অনেকগুলো গোটা গোটা হয়ে থাইরয়েড গ্লান্ড বড় হলে।
৩) থাইরয়েড এ প্রদাহ হলে।
৪) আয়োডাইড ইন্ডিউস ড্রাগ নিলে
৫) TSH ক্ষরণকারী পিটুইটারি এডেনোমা হলে
হাইপারথাইরয়েডিজম এর চিকিৎসা কী?
৩ ভাগে বিভক্ত এর চিকিৎসা। রোগীর অবস্থা, বয়স, নডিউল এর সাইজ, টক্সিসিটি ইত্যাদি এর উপর নির্ভর করে ডাক্তাররা ৩ ধরনের চিকিৎসা দেন।
হাইপারথাইরয়েডিজম এর চিকিৎসায় খাবার ওষুধ
১. মুখে খাবার ওষুধ দেওয়া হয়
২. অপারেশন করা হয়
৩. রেডিও থেরাপিও করতে হয়
থাইরয়েড গ্লান্ড সুস্থ রাখার কয়েকটি টিপস
থাইরয়েড গ্লান্ড সুস্থ রাখতে মাংস, ডিম, মাছ খান পর্যাপ্ত পরিমাণে
১) উচ্চ মানের টাইরসিন প্রোটিনযুক্ত খাবার খান। টাইরসিন দরকার হয় থাইরয়েড হরমোন তৈরিতে। আর এটি পাওয়ার জন্যে খেতে হবে লাল মাংস (মাটন), মাছ, মুরগির ডিম ও মাংস, কলা ও মিষ্টি কুমড়ার বিচি।


২) বাঁধাকপি, ফুলকপি, সীম, চীনাবাদাম, সয়াসস, ইত্যাদি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া যাবে না। রান্না করে খাবেন, কাঁচা খাবেন না। আর থাইরয়েড এ সমস্যা থাকলে এসব খাবার খাওয়া উচিত নয়।


৩) থাইরয়েড গ্লান্ড সুস্থ রাখতে গম বা গ্লুটেন প্রোটিনযুক্ত খাবার খাবেন, ইম্যুনিটি কে ঠিক রাখার জন্য। এজন্য গম, শস্যদানা, যব, বার্লি খেতে হবে।
৪) থাইরয়েড ঠিক রাখার জন্য লিভারের সুস্থতা দরকার। কেননা এখানেই T4, T3 কনভার্ট হয়। আর লিভারের সুস্থতার জন্য ফ্যাটি অ্যাসিড যুক্ত খাবার খেতে হবে। বিভিন্ন তেলযুক্ত মাছ, কাঁচা বাদাম, অলিভওয়েল এ পাওয়া যাবে।
৫) আয়োডিন যুক্ত লবণ খাবেন।
৬) কীটনাশক ও হেভি মেটাল যেমন, পারদ, ক্যাডমিয়াম, লেড এর সামনে যাবেন না।
থাইরয়েডকে ভালো রাখুন, নিজে ভালো থাকুন।