দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: নারীদের মাইগ্রেনজনিত মাথাব্যথার সমস্যা একজন পুরুষের তুলনায় প্রায় চারগুণ বেশি! বিশেষজ্ঞদের মতে, মাসের বিভিন্ন সময় মেয়েদের শরীরে নানা হরমোনের তারতম্যের জন্যে মাইগ্রেনের সমস্যা হয়ে থাকে। প্রকৃত অর্থে পিরিয়ড শুরু হওয়ার প্রথম দুই দিন মাইগ্রেনে ভোগার আশঙ্কা বেশি। অনেক মেয়েদের পিরিয়ড শুরুর আগেই তীব্র মাথাব্যথা অর্থাৎ মাইগ্রেনের যন্ত্রনা হতে দেখা যায়। এমনিতে এই সময় নানারকম শারীরিক অস্বস্তি তো থাকেই! তাই মেন্সট্রুয়াল মাইগ্রেন অনেক মেয়ের কাছেই একটা বিভীষিকার নাম।
মেন্সট্রুয়াল মাইগ্রেনের প্রতিকার জানার আগে এর জন্য দায়ী কারণগুলো আগে জেনে নিন-
মেন্সট্রুয়াল মাইগ্রেন হলে তীব্র মাথাব্যথা হয় যা সাধারনত মাথার একদিকে, চোখের চারপাশে বা পিছনের দিকে অনুভূত হয়। পিরিয়ডের আগে বা শুরুতে এই ধরনের মাথাব্যথা হলে তাকে মেন্সট্রুয়াল মাইগ্রেন বলা হয়। অনেকের বমি বমি ভাব বা চোখে ঝাপসা দেখার সমস্যাও হতে পারে। সাধারণত ২০ থেকে ৪৫ বছর বয়সী নারীরা মেন্সট্রুয়াল মাইগ্রেনে বেশি ভোগেন। যাদের মাইগ্রেন হওয়ার প্রবনতা থাকে, তাদের শব্দ, আলো ও গন্ধ সবই অসহ্য লাগে। পরিবারে মা, স্ত্রী বা বোনের এই সমস্যা থাকলে এতে আক্রান্ত হবার আশঙ্কা বেড়ে যায়।
পিরিয়ডের সময়ে মাথাব্যথার কারণ
এ সমস্যার নেপথ্যে অনেকগুলো কারণ আছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। চলুন একনজরে মেন্সট্রুয়াল মাইগ্রেন হওয়ার কারণগুলো জেনে নেই।
মাসিকের সময় বা ঠিক আগে রক্তে ইস্ট্রোজেন হরমোনের নিম্নগামিতা
অনিদ্রা, মানসিক চাপ ও অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা
হঠাৎ আবহাওয়ার পরিবর্তন
অতিরিক্ত পরিশ্রম ও ক্লান্তি
অতিরিক্ত ক্যাফেইন, কৃত্রিম চিনি ও টাইরামিন (tyramine) সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ
বংশগত কারণ ইত্যাদি
মেন্সট্রুয়াল মাইগ্রেন প্রতিকারের উপায়
মাসিকের সময় বা ঠিক আগে তলপেট ব্যথা, মাথা ঘোরানো, ব্রেস্ট পেইন এই ধরনের সমস্যা দেখা যায়। তারসাথে যদি মাইগ্রেনের তীব্র যন্ত্রনাও থাকে, তাহলে কী অবস্থাটা হয়, নিশ্চয় বুঝতে পারছেন! মাসিকের সময়ে মাথাব্যথার কারণগুলো তো জানা হয়ে গেলো, কিন্তু এর কোনো প্রতিকার আছে কি? জানি, এই প্রশ্নটি অনেকের মনেই ঘুরপাক খাচ্ছে। চলুন তাহলে জেনে নেই মেন্সট্রুয়াল মাইগ্রেনের প্রতিকার সম্পর্কে!
১) খাদ্যতালিকায় নজর দিন
তেলে ভাজা খাবার, প্রক্রিয়াজাত বা প্রসেসড ফুড যেমন সসেজ, নাগেট এবং টাইরামিনযুক্ত খাবার যেমন চিজ, অতিরিক্ত পাকা ফল ইত্যাদি এগুলো বেশি পরিমাণে খেলে মাইগ্রেন হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যায়। তাই এগুলো এড়িয়ে চলাই ভালো। ম্যাগনেশিয়ামসমৃদ্ধ খাবার, ফলমূল, শাক-সবজি, জল বেশি করে খাবেন।
পিরিয়ড শুরু হবার এক সপ্তাহ আগে থেকেই মিষ্টিজাতীয় খাবার, পনির, ফার্স্ট ফুড খাওয়া বাদ দিতে হবে। নিয়মিত সুষম খাবার খেলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে এবং আপনি শারীরিকভাবেও ফিট থাকবেন। অ্যালকোহল, ধূমপান এগুলো মাইগ্রেন বাড়িয়ে দেয়, তাই এসব বর্জন করুন।
২) পরিমিত ঘুম ও বিশ্রাম
দৈনিক ৮ ঘণ্টা ঘুমানো এবং কাজের ফাঁকে ফাঁকে বিশ্রাম নেওয়া ভীষণ প্রয়োজন! একটানা কাজ, অনিদ্রা, অবসাদ এগুলো পরোক্ষভাবে আপনার শরীরের মারাত্মক ক্ষতি করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, পরিমিত ঘুম ও বিশ্রামের অভাবে মাইগ্রেনের সমস্যা তীব্রতর হয়। সচল থাকুন ও নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করুন। এতে ঘুম ভালো হবে এবং আপনিও ফ্রেশ থাকতে পারবেন। সেইসাথে মাইগ্রেনের সমস্যাও কমে আসবে।
৩) দুশ্চিন্তা থেকে দূরে থাকুন
দুশ্চিন্তা থেকেই শরীর ও মনে নানারকম রোগ বাসা বাঁধে! মাইগ্রেনের সমস্যা থাকলে অতিরিক্ত চিন্তা করা, টেনশন এগুলো বাদ দিতে হবে। বিশেষ করে মাসিকের সময় নিজের প্রতি একটু যত্নশীল হওয়া উচিত। দুশ্চিন্তা থেকে দূরে থাকতে যোগ ব্যায়াম করতে পারেন, পছন্দের বই পরতে পারেন কিংবা গান শুনতে পারেন। আপনার শখের কোনো কাজ থাকলে সেগুলোতেও মন দিতে পারেন। এই ছোটখাটো প্রচেষ্টাগুলো থেকেই মেন্সট্রুয়াল মাইগ্রেনকে আপনি পরাস্ত করতে পারবেন!
৪) পরিমিত শারীরিক পরিশ্রম করুন
প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটুন। পরিমিত শারীরিক পরিশ্রম আপনার শরীরের কোষ ও অঙ্গগুলোকে সচল রাখে। তাই সুষম খাবার গ্রহণ আর বিশ্রাম নেয়ার পাশাপাশি ফিজিক্যালি অ্যাকটিভ বা কর্মতৎপর থাকাও ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। পিরিয়ডের সময়ে ভারি কাজগুলো বাদ দিতে পারেন, কিন্তু হালকা পরিশ্রম করতে হবে। বাসার টুকটাক কাজগুলো নিজের হাতে করতে পারেন এবং সকালে কিছুক্ষণের জন্য প্রাকৃতিক বাতাসে হাঁটতে পারেন। এতে আপনার মন ভালো থাকবে আর মাইগ্রেনের সমস্যাও কন্ট্রোলে থাকবে!
মেন্সট্রুয়াল মাইগ্রেনের এই প্রতিকার গুলো প্রয়োগের পরেও যদি সমস্যা যদি প্রকট হয়, সেক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে ভুলবেন না। কোনোভাবেই যদি এই ব্যথা না কমে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করুন। এমন অনেক কার্যকরী ওষুধ আছে, যেটা সাময়িকভাবে আপনাকে এই মাথাব্যথা থেকে মুক্তি দেবে। মেনোপোজ বা রজঃনিবৃত্তির পর মাইগ্রেনের ব্যথা অনেকটাই কমে যায়। মেন্সট্রুয়াল মাইগ্রেন মেয়েদের বেশ কমন একটি সমস্যা, এটা থেকে মুক্তি পেতে জীবনধারায় পরিবর্তন আনতে হবে। সাস্থ্যসচেতন হোন, ভালো থাকুন।
