28 C
Kolkata
Sunday, October 1, 2023
More

    নিরাপদ স্যানিটারি ন্যাপকিন মানে নিরাপদ নারী জীবন, এ কথা জানতে হবে পুরুষকেও

    দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: ‘প্যাডম্যান’ মুভি কিংবা ১৫’ই আগস্টে মোদীর ভাষণ তবুও স্যানিটারি ন্যাপকিন শব্দটা এখনও পর্যন্ত বাংলার বহু জায়গায় ট্যাবু হিসেবেই রয়ে গিয়েছে। কিন্তু এই স্যানিটারি প্যাড সর্বস্তরে পরিচিত হওয়ার কথা ছিল নারীদের পিরিয়ডের সময় ব্যবহৃত একটি অতি প্রয়োজনীয় এবং গুরুত্বপুর্ণ উপাদান হিসেবে। কিন্তু সেটা হয় নি!

    পিরিয়ড হওয়ার অর্থ একজন নারী পৃথিবীতে নতুন একটি শিশুকে নিয়ে আসার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন কিংবা হয়েছেন অর্থাত্‍ শিশু কন্যা থেকে কুমারী কন্যাতে পদার্পণ। নতুন একজন শিশু মানে আগামীর পৃথিবীতে মানুষের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার বাহক। তাই পিরিয়ড মোটেই ট্যাবু হিসেবে থাকার মতো বিষয় নয়। বরং পিরিয়ড হওয়া উচিত অনেকটা আনন্দ অনুষ্ঠানের মতই সম্মানীয়। কিন্তু ট্যাবু ও সচেতনার অভাব এই পিরিয়ডকেই করে তুলতে পারে প্রাণহানিকর!

    পিরিয়ডের সময় নারীদের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় জিনিস হচ্ছে স্যানিটারি ন্যাপকিন; যা তাদের জন্য সময়টাকে রাখে নিরাপদ ও আরামদায়ক। তাই পিরিয়ড এবং স্যানিটারি ন্যাপকিন সম্পর্কে প্রয়োজন বিস্তারিত আলোচনা। সাধারণত প্রতি ২৪ থেকে ৩২ দিনের মধ্যে নারীদের পিরিয়ড হয়ে থাকে। এটি তিন থেকে পাঁচ দিন পর্যন্ত চলতে পারে।

    ২০১৪ সালে করা ন্যাশনাল হাইজিন সার্ভেতে দেখা গেছে, বাংলার প্রায় ৬৬ শতাংশ নারী পিরিয়ডের সময় ন্যাকড়া বা পুরনো কাপড় ব্যবহার করেন যা অনেক সময় তাদের ফেলতে পারে মারাত্মক ঝুঁকিতে। পুরনো কাপড় ঠিকমতো পরিষ্কার করে ব্যবহার না করায় সেখান থেকে ছড়াতে পারে রোগজীবাণু, যা হতে পারে জরায়ুর ক্যান্সারের কারণ। এক্ষেত্রে স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারের বিকল্প নেই বললেই চলে।

    ন্যাশনাল হাইজিন সার্ভের মতে, বাংলার মাত্র ৩৪ শতাংশ নারী ঋতুচক্রের সময় স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করেন। কিন্তু এসব ন্যাপকিন ব্যবহারের ক্ষেত্রেও অনেকসময় দেখা দেয় নানান ধরনের জটিলতা। ভালো মানের ন্যাপকিন ব্যবহার না করলে একজন নারীর জীবন পড়তে পারে হুমকির মুখে। সাধারণ মানের স্যানিটারি ন্যাপকিনে নানান ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। সম্প্রতি স্যানিটারি ন্যাপকিনের ভেতর পোকা পাওয়া যাওয়ার ঘটনা সবাইকে অবাক করেছে। পোকাযুক্ত স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারের ফলে সেখান থেকে জীবাণু ছড়িয়ে একজন নারীর মৃত্যুও হতে পারে। এসব কারণে স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারের ক্ষেত্রে সঠিক স্যানিটারি ন্যাপকিন নির্বাচন খুবই জরুরি।

    ভালো মানের স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করলে উপরোক্ত সমস্যাগুলো থেকে মুক্ত থাকার পাশাপাশি একজন নারী পিরিয়ডকালীনও নিজের সব কাজ খুব স্বাভাবিকভাবেই পরিচালনা করতে পারেন। প্যাড অনাকাঙ্ক্ষিত জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হওয়া থেকে রক্ষা করে এবং বাইরের জীবাণু প্রবেশের পথও সঙ্কুচিত করে। ফলে পিরিয়ডকালীন স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার একজন নারীকে রাখে সর্বাধিক নিরাপদ। কিন্তু সব ন্যাপকিনই কি ভালো?

    বাজারের স্যানিটারি প্যাডগুলোর মধ্য থেকে ন্যাপকীন পছন্দ করার আগে দেখতে হবে তাতে রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়েছে কিনা। যদি রক্ত শুষে নেয়ার জন্য সুপার অ্যাবজর্বেন্ট পলিমার ব্যবহার করা হয়, যা প্রচুর পরিমাণে রক্ত শুষে নিতে পারে কোনো ধরনের ক্ষতি ছাড়াই, তাহলে সেই ন্যাপকীন শরীরের জন্যে খুব ভালো। এতে লিক হয়ে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা না থাকায় একজন নারী সর্বদা শুষ্ক অনুভূতি পান, যা মাসিককালীন নারীকে সর্বদা সতেজ রাখে।

    ন্যাপকিন ব্যবহার করলেই একজন নারী সুরক্ষিত থাকবে এমন নয়। এক্ষেত্রে স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু ব্যাপারে সতর্ক থাকাও বাঞ্ছনীয়। যেমন- ন্যাপকিন ধরার আগে ভালোভাবে হাত পরিষ্কার করে নেয়া প্রয়োজন। কারণ, অপরিষ্কার হাত দিয়ে ন্যাপকিন স্পর্শ করে তারপর তা ব্যবহার করলে সেখান থেকে সহজেই জীবাণু ছড়াতে পারে। এছাড়া ন্যাপকিন পরিবর্তনের সময় ঠিকমতো পরিষ্কার না হয়ে নিলে আগের প্যাড থেকে জীবাণু ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে। অনেকে বাথরুমের ভেতরেই স্যানিটারি ন্যাপকিন রেখে দেন, এতে করে বাথরুম থেকেই ন্যাপকিনের ভেতরে জীবাণু প্রবেশ করতে পারে। আবার ভুল করে মেয়াদোত্তীর্ণ ন্যাপকিন কিনে ব্যবহারের ফলেও তৈরি হয় স্বাস্থ্যঝুঁকি।

    ন্যাপকিন ব্যবহারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি যে বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হয় তা হচ্ছে ব্যবহারের সময়কাল। অনেকে একটি ন্যাপকিন সারাদিন ধরে ব্যবহার করে থাকেন, যা কোনোভাবেই উচিৎ নয়। একটি ন্যাপকিন চার থেকে ছয় ঘণ্টার বেশি সময় ব্যবহার করা উচিৎ নয়, কারণ এতে করে প্রথম দিকের শুকিয়ে যাওয়া রক্ত থেকে জীবাণু ছড়াতে পারে। অতিরিক্ত রক্তপাত হলে চার থেকে ছয় ঘণ্টা সময়ের জন্য অপেক্ষা না করে এর আগেই ন্যাপকিন পরিবর্তন করে ফেলা উচিৎ। এতে জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হবার আশঙ্কা থাকে না।

    সহজ কিছু সতর্কতা অবলম্বনের মাধ্যমে খুব সহজেই নিরাপদভাবে স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করা সম্ভব। বাংলার নারীদের যে বড় অংশ স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারের বাইরে রয়েছেন তার মূল কারণ সচেতনতার অভাব। তাই ন্যাপকিন ব্যবহারের উপকারিতা এবং সঠিক ন্যাপকিন না ব্যবহারের অপকারিতা সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা জরুরি। আর সবচেয়ে বেশি জরুরি হলো, পিরিয়ড যে শরীরের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া তা অনুধাবন করা এবং নারীদের স্বাস্থ্যের সুরক্ষা নিশ্চিতে সবাই সচেষ্ট হওয়া।

    Related Posts

    Comments

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    সেরা পছন্দ

    চলতি আইএসএলে জয়যাত্রা শুরু করল ইস্টবেঙ্গল !

    দ্যা ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো : এই ম্যাচে কিছুটা অ্যাডভান্টেজে থেকে খেলতে নেমেছিল হায়দরাবাদ। তার কারণ এটাই তাদের প্রথম...

    জানেন ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ কি কি ? উপসর্গ দেখে সতর্ক হোন

    দ্যা ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো : ডেঙ্গির জ্বর মৃদু ও গুরুতর উভয় ধরনের হতে পারে। এমন পরস্থিতিতে এর লক্ষণও...

    জানেন বিশ্ব কাঁপানো গোয়েন্দা সংস্থা কোন গুলি ? জানুন অজানা তথ্য

    দ্যা ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো : কোন দেশের গোয়েন্দা সংস্থা সবচেয়ে দুর্ধর্ষ-এমন কৌতূহল অনেকের মধ্যে আছে। তবে ইন্টারনেটের বিভিন্ন...

    ১০ সেকেন্ডের টর্নেডো ! তছনছ হাবড়ার কুমড়া গ্রাম

    দ্যা ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো : হাবড়ায় ১০ সেকেন্ডের সাইক্লোন। নিমেষে লণ্ডভণ্ড গোটা এলাকা। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঝড়ের...

    কতদিন বৃষ্টি চলবে দক্ষিণবঙ্গে ? জানাল আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর

    দ্যা ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো : ঝাড়খণ্ডের উপর তৈরি হওয়া নিম্নচাপের জেরে বিগত ক’দিন ধরে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে...