শীত মানে কমলালেবু আর জয়নগরের মোয়া। কিন্তু কালের নিয়মে হারিয়ে যেতে বসেছে এই মোয়া।জয়নগরের মোয়া শিল্পীদের দুর্দশা ছবি ফুটে উঠেছিল। জানেন কবে কিভাবে এই মোয়ার উৎপত্তি হয়েছে?
তখন অষ্টাদশ শতকের একেবারে শেষের দিক। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বহরু গ্রামের বয়স্ক ব্যক্তি যামিনী বুড়ো, হঠাৎ এক কান্ড ঘটিয়ে বসলেন।ধানি জমি ছিল ওই বুড়োর। চাষ করা হতো কনকচুর ধান। ধানের সঙ্গে খই মেশালেন তিনি। আবার খেজুর গাছের রস থেকে তৈরি নলেন গুড় মিশিয়ে ফেললেন তার সঙ্গে। সেই মিষ্টিমন্ড তিনি পরিবেশন করলেন তার মেয়ের বিয়েতে। কিছুটা ইতস্তত করলেও অতিথিরা সেই নতুন উদ্ভাবিত মিষ্টি খেয়ে ফেললেন। খেয়েই অবাক হয়ে গেলেন তারা। সম্পূর্ণ নতুন প্রকার এক মিষ্টি।
তবে ঠিক জয়নগর না হলেও বহুরু গ্রাম জয়নগরের পার্শ্ববর্তী। মনসামঙ্গল কাব্যে এই জয়নগরের উল্লেখ পাওয়া যায়। উনিশ শতকের প্রথমে এই গ্রামের জমিদারি হাতে আসে নন্দকুমার বসুর।মথুরা বৃন্দাবন থেকে ঘুরে এসে তিনি স্থির করেন এখানে নব মথুরা বৃন্দাবন স্থাপন করবেন। তারপর এখানেই তৈরি হয় শ্যাম সুন্দরের মন্দির। এই গ্রামেই জন্মগ্রহণ করেছেন শক্তি চট্টোপাধ্যায় হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের মতন কিংবদন্তিরা। জয়নগরের মোয়া খেয়েই বড় হয়েছেন তারা। তবে ধীরে ধীরে সেই মোয়ার প্রকৃতি পাল্টেছে।
আজকে যে মোয়া আমরা চেখে দেখি তা কিন্তু আগের থেকে আলাদা। পূর্ণচন্দ্র ঘোষ এবং নিত্যগোপাল সরকার দুজন ময়রা মিলে এই মোয়ার আমূল পরিবর্তন ঘটে। গাওয়া ঘি খোয়া ক্ষীর খই আর গুড়ের মিশ্রণে মোয়ার স্বাদ অনেকটাই পাল্টে গিয়েছে।
প্রথম এই মোয়া পাওয়া গিয়েছিল শ্রীকৃষ্ণ মিষ্ট ভান্ডারে,নব্বই দশকে বেশ রমরমা ব্যবসা শুরু হয়েছিল জয়নগরের মোয়ার। ধীরে ধীরে জয়নগরে কমলা মিষ্টান্ন ভান্ডার পঞ্চানন মিষ্টান্ন ভান্ডার প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে। গুণমান অনুযায়ী দামের পরিবর্তন হলেও মোয়া খাওয়া নিয়ে কোন আপোস করতে রাজি নয় আম বাঙালি।
মোয়ায় মিশেছে ফুড কালার, নকল ফ্লেভার। আগের মত ঘি আর গুড় নেই। কনকচুড় ধানের খই নেই। সব মিলিয়ে মোয়া নিয়ে নানান অভিযোগ। আর এই অভিযোগের গেরোয় পড়ে অবশেষে বন্ধ হয়ে যেতে বসেছে জয়নগরের মোয়ার ব্যবসা।