দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো:যৌন বিষয়ে মৌনতা যেকোনো গুপ্ত রোগের প্রথম ধাপ। দ্বিতীয় ধাপ মানসিক জটিলতা। যৌনতার সাথে তৃপ্তি বিষয়টা ভিশনভাবে জড়িয়ে। একটি তৃপ্তিদায়ক যৌনমিলনের শর্ত’ই হলো অর্গাজম বা রাগমোচন। পুরুষদের ক্ষেত্রে বীর্য স্খলনের মধ্যমে আর নারীদের ক্ষেত্রে যোনিরস স্খলন। কিন্তু সমীক্ষা বলছে ৭৫% ভারতীয় নারী আজও ‘রাগমোচনের’ সাথে পরিচিত নয়। অনেকে জানেনই না সেটা আসলে কী!
বিশেষ করে যৌন মিলনে নারীর তৃপ্তি একটি সুস্থ্য দাম্পত্য জীবনের চাবিকাঠি। বিজ্ঞানের পরিভাষায় অতৃপ্তির যৌনতা নারী শরীরে ‘হরমনাল ডিসব্যালেন্স’ তৈরি করে, যা থেকে অহেতুক খিট খিট করা, অন্যমনস্কতা, মানসিক রোগের মত অনেক ভয়ানক শারিরীক জটিলতা তৈরি হয়। অনেক পুরুষ মনে করেন ধর্ষকাম ও পুরুষাঙ্গের আকারের ওপরেই নারী তৃপ্তি নির্ভরশীল, কিন্তু বিজ্ঞান বলছে ঠিক এর উল্টোটা।


একটি সম্পুর্ণ রাগমোচন সহ স্বমেহন যেমন শরীরের জন্যে আনন্দের তেমনি রাগমচন সহ যৌনক্রীড়া নারীকে তাঁর সঙ্গীর প্রতি বহুলাংশে লয়াল করে তোলে। একজন পুরুষ যেমন সম্পুর্ণ মোচনের পর আনন্দ পায় নারীর ক্ষেত্রেও তাই। কিন্তু সমস্যাটা অন্য যায়গায়। সেটা কী সেটাই জেনে নেব আজ।
এই সপ্তাহে আমরা নারীদের রাগমোচন বা সিক্রিয়েশন নিয়ে একটি রিপোর্ট করছি: নারীর রাগমোচন কি বাস্তব, এবং যদি তাই হয় তাহলে এটা কেন ঘটে? দেখুন, আপনি সবসময় নারীর রগমোচন সম্পর্কে জানতে চাইতেন (কিন্তু জিজ্ঞেস করতে ভয় পেতেন) তাই আজ সেই উত্তর গুলো আমরা দিচ্ছি।
রাগমোচন বা ফিমেল অর্গাজম নারী যৌনতার একটি এমন দিক যা গবেষণার মাধ্যমে ক্রমশ প্রকাশিত হচ্ছে। বিশেষ করে, নারী রাগমোচন নিয়ে অনেক কল্পকাহিনী এবং লোকবিশ্বাস রয়েছে যা আদতে ভুল ও পুরুষতান্ত্রিক সমাজের ইচ্ছে করে নিজের অক্ষমতা লুকিয়ে নারীর ওপরে দায় চাপিয়ে দেওয়ার একটা প্রয়াস ছাড়া আর কিছুই নয়। এখন এই বিষয়টা, সমাজ কে ধীরে ধীরে বোঝানো হচ্ছে।
কিছু বিশেষ সমীক্ষা ও গবেষণা অনুসরণ করে, আধুনিক বিজ্ঞান দ্বারা প্রকাশিত নারী রাগমোচন সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এখানে তুলে ধরা হল।
‘জি স্পট’ আসলে বাস্তব বিষয়:
আপনাদের মধ্যে অনেকেই এই জি স্পট সম্পর্কে শুনেছেন, অনেকেই বিষয়টা কী বুঝতেই পারেন নি অথচ দাম্পত্য জীবনের হয়তো ২০ টা বসন্ত পেরিয়ে এসেছেন। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন ‘জি স্পট’ যোনির একটি ছোট অঞ্চল যা উত্তেজিত হলে বন্যভাবে তীব্র রাগমোচন উৎপাদন করতে পারে – অথবা নারীর সম্পুর্ণ তৃপ্তি লাভ হয়। যাইহোক, দশকের পর দশক ধরে, নারী যোনিতে এই অঞ্চলের অস্তিত্বের জন্য শক্তিশালী প্রমাণ খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল।


যাইহোক,২০০৮ সালে, একটি ইতালীয় গবেষণা দল নারীদের মধ্যে শারীরবৃত্তীয় পার্থক্য খুঁজে পেয়েছেন যা জি-স্পট এবং মহিলাদের মধ্যে রাগমোচন এর পার্থক্য খুঁজে পেতে সহায়তা করেছে। আপাতদৃষ্টিতে রহস্যের সমাধান হলেও গবেষকরা জি স্পট সহ মহিলাদের শেখানো শুরু করেছেন কিভাবে সেই স্পটের ব্যবহার করতে হয় এবং তৃপ্তি’র চুড়ান্তে পৌঁছতে হয়। মূলত: এটি ফ্যালপিয়ান টিউবের ভেতরের গায়ের একটি বিশেষ সংবেদনশীল অংশ, যেখানে স্পর্শ হলে স্বর্গীয় সুখ অনুভূত হয় এবং নারীর যোনি বেয়ে রসের ধারা বইতে থাকে। এই যায়গা নারী ভেদে ভিন্ন।
মস্তিষ্ক সম্পুর্ণ কাজ করা বন্ধ করে দেয়:
এটা বাস্তব যে মানুষ যখন যৌন মিলন করে তখন মানুষ সরাসরি চিন্তা করতে পারে না, কিন্তু পুরুষরা তাদের মস্তিষ্কের একটা অংশ খুলে রাখতে পারলেও যখন মহিলাদের রাগমোচন হয় তখন তাদের মস্তিষ্কের বেশীরভাগ ই অন্ধকার হয়ে যায়। তাদের কণ্ঠ থেকে তৃপ্তি’র শীত্কার বেরোয়, চোখ ঝাপসা হয়ে যায়। এই তৃপ্তি’র প্রভাব এতটাই বেশি হতে পারে যে তাতে নারী অজ্ঞান ও হয়ে যেতে পারে।
মস্তিষ্ক স্ক্যান করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে রাগমোচনের সময় মহিলাদের মস্তিষ্কের অনেক ক্ষেত্র নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছে, যার মধ্যে আবেগের সাথে জড়িত মস্তিষ্কের অংশটি অন্যতম। পুরুষদের মধ্যে এর প্রভাব কম কারণ পুরুষদের রাগমোচন এত কম যে মস্তিষ্কের স্ক্যানে তা সনাক্ত করা কঠিন।
অনেক নারী’ই রাগমোচন করতে পারে না:
১৯৯৯ সালের এক সমীক্ষা অনুযায়ী, ভারতের প্রায় ৮৬শতাংশ নারীর যৌন জীবন নিয়ে এক ধরণের সমস্যা রয়েছে (জার্নাল অফ দ্য সেকসুয়াল হেল্থ, ভল ২৮১, পৃষ্ঠা ৫৪৫)। মহিলাদের যৌন অকার্যকারিতা (এফএসডি) এতটাই সাধারণ যে এই ধারণা যে এটি একটি মেডিকেল ডিসঅর্ডার। যদি প্রায় অর্ধেক নারী জনসংখ্যার এই সমস্যা থাকে, সমালোচকরা বলছেন, তার মানে কি আমাদের সমাজই অকার্যকর? তা সত্ত্বেও, এর চিকিৎসার জন্য মাদক দ্রব্য উন্নয়নের প্রচেষ্টা চলছে। যার ফলে অকর্মণ্য ড্রাগ ভায়াগ্রা মহিলাদের মধ্যে মিশ্র ফলাফল দিয়েছে, কিন্তু আরো অনেক পথ অনুসন্ধান করা হচ্ছে। মূলত: পুরুষ সঙ্গীর অজ্ঞতা ও প্রেমহীনতা এই ঘটনার জন্যে বিশেষভাবে দায়ী।
নারীর ‘জিন’ (gene) রাগমোচন ফ্রিকোয়েন্সিকে প্রভাবিত করে:
নারী রাগমোচনের ওপরে হওয়া প্রথম জেনেটিক গবেষণা অনুসারে, মহিলাদের রগমোচন ক্ষমতার ৪৫ শতাংশ জিনের ওপর নির্ভরশীল। অনেক নারীর যৌনমিলনের সময় রাগমোচন হয় না, এবং কেউ কেউ হস্তমৈথুনের মাধ্যমে রাগমোচন করতে পারে। এর কিছু বাহ্যিক উপাদান যেমন বেড়ে ওঠার পরিবেশ, সঠিক যৌনতা বিষয়ে অজ্ঞতা দায়ী থাকলেও গবেষণায় দেখা গেছে জেনেটিক ফ্যাক্টর ও একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।


প্রযুক্তি সাহায্য করতে পারে:
কিছু কিছু গবেষকের মতে এই সমস্যা’র সম্ভবত সবচেয়ে চরম সমাধান হচ্ছে তথাকথিত “রাগমোচন” সহযোগী প্রযুক্তি ব্যবহার যেমন ভাইব্রেটর ব্যবহার করা;যা যোনি থেকে মেরুদণ্ডে একটি সিগনাল পাঠায়, যা রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে চালু করা বা বন্ধও করা যায় ব্যবহারকারীকে উদ্দীপিত করার স্কেল অনুযায়ী। এটি যোনির মুখে ‘র ভালভাতে স্পর্শ করে রাখতে হয়।
ওপরের খোঁজ গুলি নারী রাগমোচনের রহস্যের দিকটা কিছুটা উন্মুক্ত করলেও মানসিকভাবে দুজন দুজনের কাছে আসার ওপরেও নারী অর্গাজম ৭০% নির্ভরশীল। তাই পরস্পর পরস্পরকে চিনুন। এটা অনেকটাই খেলার মত, আগে ড্রিবল করুন, সাইড উইং এ ছুটুন, মিড ফীল্ড এ বল নিয়ে কসরত করুন তারপর সুযোগ বুঝে গোল…….আর এই যে গোল পাওয়ায় তৃপ্তি সেটাই হলো অর্গাজম।