দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরোঃ মেয়েটির নাম পূজা বিশনোই। আর পাঁচটি সাধারণ বাচ্ছার মতই মাত্র তিন বছর বয়সে একদিন সে কিছু ছেলেদের সাথে দৌড়ে অংশ নেয়। ভালো দৌড়ালেও শেষ পর্যন্ত হেরে যায় পূজা। পূজার কথায়,” ঐদিন হেরে যাবার পরেই আমি আমার মামাকে বলি আমাকে দৌড় শেখাও। সেই থেকেই আমার ট্রেনিং শুরু।”
পূজার মামা সারওয়ান নিজে ছিলেন একজন ক্রীড়াবিদ। যোধপুরের স্পোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার সাথে যুক্ত ছিলেন তিনি। কিন্তু হ্যামস্ট্রিংয়ে গুরুতর আঘাতের পর তিনি তার খেলা ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। সারওয়ান বলেন,”সেটা ছিল ২০১৪ সাল। আমি দেখেছিলাম পূজা যথেষ্ট ভাল দৌড়েছে। তখনই ভেবেছিলাম কিছুটা প্রশিক্ষণ দিলে ও ভালো পারফর্ম করতে পারবে।”
এর কিছুদিন পরে সারওয়ান আবার ছেলেদের সাথে দৌড়ে নামান পূজাকে। এবার দ্বিতীয় স্থানে থাকা ছেলেটিও ছিল পূজার চেয়ে প্রায় কুড়ি মিটার দূরে। এই সহজ শুরু থেকেই ১০ বছরের পূজা হয়ে উঠেছে ভারতবাসীর গর্ব। ২০১৭ সালে মাত্র ছয় বছর বয়সে যোধপুর ম্যারাথনে ৪৮ মিনিটে ১০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে সে।তখনই তার সিক্স প্যাক চেহারা সকলকে চমকে দেয়।
এরপর বিরাট কোহলি ফাউন্ডেশনও এগিয়ে আসে পূজার পাশে।কারণ পূজার বাবা অশোক বিশনোই ছিলেন একজন সাধারণ কৃষক।পূজার খরচ চালানো তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। এতদিন একটি সাধারণ দোকানে কাজ করে পূজার খরচ চালানোর চেষ্টা করতেন তার মামা। এ সম্পর্কে বলতে গিয়ে ফাউন্ডেশনের ট্যালেন্ট ম্যানেজার তুষার নায়ার বলেন, “সারওয়ান আমার যখন কাছে এসেছিল এবং আমরা প্রোফাইল চেক করলাম, পূজা বেশ চিত্তাকর্ষক ছিল। ক্রীড়াবিদের জন্য সবচেয়ে বিষয় তার চিন্তার স্বচ্ছতা এবং একটি বড় লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্য। আমি মনে করি যুব অলিম্পিকে ও নিশ্চয়ই সোনা আনবে।”
সারওয়ানের ভরসার যোগ্য মান রেখেছে ছোট্ট পূজাও।২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে মাত্র নয় বছর বয়সে ১২মিনিট ৫০ সেকেন্ডে ৩ কিলোমিটার দৌড়ে অনূর্ধ্ব-১৪ প্রতিযোগিতায় বিশ্বরেকর্ড স্থাপন করেছে সে। এছাড়া ৩০০০, ১৫০০ এবং ৮০০ মিটার রেসে অগুনতি পদক তো রয়েছেই।
সারওয়ান, এখন যিনি পূজার অফিসিয়াল কোচ তিনি বলেন, “এক বছর আগে পরিস্থিতি ততটা ভালো ছিল না। পূজার জন্ম যোধপুরের কাছে গুডা বিষ্ণোইয়ান গ্রামে। পূজার বাবা-মা দূরে থাকেন, আর আমার পরিবার পূজাকে লালন-পালন করে। আমি ওর জন্য বিজনেস ম্যানেজার হিসেবে এক বন্ধুর দোকানে কাজ করতাম এবং ওকে প্রশিক্ষণ দিতাম।”
তবে কোহলি ফাউন্ডেশন পাশে এসে দাঁড়ানোর পর সমস্যা এখন অনেকটাই কেটেছে। তার আগামী লক্ষ্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে পূজা বলে, “আমি এখন ২০২৪ সালের যুব অলিম্পিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রস্তুতি নিচ্ছি এবং আমি দেশের জন্য একটি স্বর্ণপদক জিততে চাই।”
পূজার ডেলিরুটিনও বেশ কঠিন এসম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে সে বলে,” আমাকে সবসময় স্ট্রিক্ট ডায়েট ফলো করতে হয়। যার মধ্যে রয়েছে ড্রাই ফ্রুটস, ফল এবং প্রোটিন। বর্তমান পরিস্থিতির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে আমি অনলাইনে ক্লাস করি এবং রাত দশটার মধ্যে নিয়মিত শুতে যাই।”