দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরোঃ যে বাবার জন্য তাঁর এই স্বপ্নের দৌড়, আর তিনি দেখতে পাবেননা সিরাজকে। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে আসন্ন সিরিজের জন্য শুক্রবার অনুশীলন করছিলেন সিরাজ।তারই মাঝে কোচ এবং অধিনায়ক এর মুখ থেকে এই খবর পান তিনি।রিক্সা চালক বাবার স্বপ্ন ছিল ছেলে একদিন দেশের জার্সি গায়ে তুলে নিয়ে ভেঙে দেবে বিপক্ষের উইকেট। সেই স্বপ্ন সফল করেছেন সিরাজও।তবে বাবার শেষ বেলার সাথী হতে পারলেন না তিনি। শুক্রবার এক হাসপাতালে ফুসফুসের সংক্রমণে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই তরুণ পেসারের বাবা। সবচেয়ে খারাপ খবর হল এই মুহূর্তে দেশে ফেরার কোনো উপায় নেই তার।
তবে সিরাজ ঠিক করে নেন বাবার স্বপ্নকে সফল করেই তাঁর বিদেহী আত্মাকে শ্রদ্ধা জানাবেন তিনি। অর্থাৎ থাকবেন মাঠে, উড়িয়ে দেবেন বিপক্ষের উইকেট।সত্যি অর্থে যা চেয়েছিলেন সিরাজের বাবা। এর আগে আইপিএলে মন্দীপ সিংহকেও আমরা দেখেছিলাম একইভাবে পিতার আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতে। সিরাজের এই মানসিকতায় অভিভূত বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট সৌরভ গাঙ্গুলীও। টুইট করে এদিন দাদা লেখেন,”এই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার মতো প্রচণ্ড শক্তি যেন মহম্মদ সিরাজের থাকে। এই সফরে ওর সাফল্যের জন্য শুভকামনা রইল। ও দুর্দান্ত এক চরিত্র।”
একইভাবে সিরাজের পাশে দাঁড়িয়েছেন তার ছেলে বেলার কোচও।সিরাজের ক্রিকেটার হয়ে ওঠার পেছনে বড় ভূমিকা ছিল তার বাবার। এই অটোচালকের পক্ষে ক্রিকেটের দামি সরঞ্জাম কিনে দেওয়া সম্ভব ছিল না। তবু ছেলের স্বপ্ন সফল করতে কোন ত্রুটি করেননি ঘউস।বেতন দেওয়ার সামর্থ ছিলনা কিন্তু দু কিলোমিটার দূরে কোচ সাইবাবার কাছে গিয়ে তিনি বারবার অনুরোধ করেন ছেলের পরীক্ষা নেওয়ার জন্য। হায়দ্রাবাদি এই কোচ সিরাজের বোলিং দেখে রীতিমতো চমকে ওঠেন। তিনি বলেন,”আমি কয়েকটা বল দেখার পরেই ওর বাবাকে বলি কোন বেতন লাগবেনা ওকে আমাদের হাতে তুলে দিন।”সেদিন থেকেই শুরু হয় সিরাজের যাত্রা।
ক্লাবের সরঞ্জাম পেলেও অনূর্ধ্ব ১৪ সফরে সিলেট হবার পর, ম্যাচ খেলার জন্য স্পাইকস দরকার ছিল সিরাজের। কি করলেন সিরাজের বাবা? কোচ সাইবাবা বলেন,”ঘউস ভাই আমাকে বারবার অনুরোধ করেন ওকে দলে রাখুন। যেকোনোভাবে ওর জুতো কিনে আনব। এখনও মনে আছে, সারা রাত শহরে অটো চালিয়ে অর্থ উপার্জন করতেন ঘউস ভাই। সেই অর্থে সিরাজকে প্রথম বোলিং স্পাইকস কিনে দেন। সিরাজ হয়তো এই মনের জোর ওর বাবার কাছ থেকেই পেয়েছে।”
কষ্টের সাথে বাবার মতোই লড়তে শিখেছিলেন সিরাজ নিজেও। অনূর্ধ্ব ১৪ বিভাগের ম্যাচে ব্যাট করতে নেমে ইয়ার্কার বল পায়ে লাগে তার। ফলে পা ফুলে নীল হয়ে গিয়ে জমাট বেধে যায় রক্ত। কিন্তু হাল ছাড়েননি সিরাজ। কোচ বলেন, “আমাদের বোলিং শুরু হওয়ার পাঁচ ওভারের মধ্যেই সিরাজ হঠাৎ এসে বলে আমি বল করব। বলেছিলাম, ভেবে দেখ। পা তো এখনও ফুলে আছে। নাছোড় সিরাজ মাঠে নামলই। এমনকি ছোট স্টেপে বল করে তিন উইকেট নিয়ে জিতিয়ে দিল আমাদের।”