দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরোঃ ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনা ফুটবলের দুই দীর্ঘকালীন প্রতিদ্বন্দ্বী। কলকাতাও যে কতবার ভাগ হয়ে গেছে এই দুই দলে তার ইয়ত্তা নেই। দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবল ইতিহাসে এই দীর্ঘ প্রতিদ্বন্দ্বীতা সুপরিচিত। সমস্ত ব্রাজিলিয়ানদের কাছেই বিশ্বের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ফুটবলার হলেন পেলে। কিন্তু ফুটবলের রাজপুত্র মারাদোনার মৃত্যুতে শোকগ্রস্থ ব্রাজিলও। আজ দূরে সরে গেছে সমস্ত বিভেদ। ইতিমধ্যেই মারাদোনার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন পেলে রোনাল্ডো এবং রোনালডিনহোরা।
এবার শোক জ্ঞাপন করলেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি তথা লেখক পাওলো কলেহো। মাঠে মারাদোনার অসামান্য দক্ষতা, ফুটবল স্কিল এবং ক্যরিশমাকে সম্মান জানালো গোটা ব্রাজিল। এমনকি ব্রাজিলিয়ান সংবাদপত্রের শিরোনামে উঠে এলেন ফুটবলের রাজপুত্র দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনা।প্রসঙ্গত উল্লেখ্য দেশের বিশ্বকাপ জয় ছাড়া কখনোই ব্রাজিলের সংবাদপত্রের প্রথম পাতার শিরোনামে আসতে পারে না ফুটবল সংক্রান্ত কোন খবর। কিন্তু সেই চেনা ছক বদলে দিয়েছেন মারাদোনা। চিরকালই তিনি ছকভাঙা খেলোয়াড়।
তাই তার মৃত্যুতে দীর্ঘকালীন প্রতিদ্বন্দিতা সরিয়ে রেখে এখন শোকোস্তব্ধ ব্রাজিলও। শুধু খেলোয়াড় নয় ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যেও রয়েছে একই রকম শোকের ছায়া। সাও পাওলোর বেশ কিছু ছবিতে আজ ধরা পড়ল সেই অনবদ্য রূপ।প্রতিদ্বন্দীতাকে কোথাও যেন ভালোবাসায় বদলে দিলেন মারাদোনা।
রিও ডি জেনিরোর ক্রুজেইরো ভিলায় মারাদোনার একটি প্রতিকৃতি অঙ্কিত রয়েছে ব্রাজিলে।এ সম্মান ফুটবলপাগল ব্রাজিলিয়ানরা খুব কম খেলোয়াড়কেই দিয়েছে। যিনি মারাদোনার এই সুন্দর প্রতিকৃতি অঙ্কন করেন সেই গ্রাফিতি শিল্পী এঞ্জেলো ক্যাম্পস জানান,”তিনি ছিলেন অধ্যাবসায় এবং পরিশ্রমের প্রকৃষ্ট উদাহরণ। একজন মানুষ হিসেবে তিনি সারা জীবন কাটিয়েছেন। তার সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠতে সবসময় চেষ্টা করেছেন।”ক্যাম্পসের আঁকা এই প্রতিকৃতির নাম “এল পিবি দে ওরো”বা একজন সোনালী শিশু।


এমনকি ব্রাজিলের অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্টেডিয়াম নিও কুইমিকা এরিনার প্রবেশদ্বারেও রয়েছে বিজয়ী মারাদোনার ছবি। ব্রাজিল যে মারাদোনাকে কত ভালবাসে তা বোঝা যায় একটি ছোট্ট স্ট্যাটিসটিকস দেখলেই। ১৯৯০ সালে ছয় ম্যাচের মধ্যে প্রথমবার ১-০ বলে ব্রাজিলকে পরাজিত করেছিল মারাদোনার দল। এমনকি সেই বছরও এক লক্ষ আশি হাজার শিশুর নাম রাখা হয়েছিল মারাদোনার নামে। ব্রাজিলের কাছে মোট তিনবার পরাজিত হয়েছিলেন মারাদোনা। যার মধ্যে ১৯৮২ সালের বিশ্বকাপের হার ছিল সবথেকে বেদনাদায়ক। সেদিন তরুণ মারাদোনাকে বেরিয়ে যেতে হয়েছিল ফাউল করার কারণে। এই আর্জেন্টিনীয় তারকা স্বীকার করেছিলেন সেদিন ফ্যালকাওকে ঘুষি মারতে ইচ্ছে হচ্ছিল তার।


কিন্তু এদিন ফালকাও জানান তিনি আদৌ মারাদোনার সেই ঘটনা মনে রাখেননি। তিনি বলেন,” বল পায়ে তিনি ঈশ্বর এবং বল ছাড়াও তিনি একজন মানুষ।”
ব্রাজিলের কার্নিভাল গুলিতে বারবার এসেছেন মারাদোনা। ১৯৯৮ সালে যখন তিনি অবসর নেন সেবার রিও কার্নিভাল যেভাবে সম্মান জানায় তা ছিল সত্যি অনবদ্য। সেদিন মারাদোনা বলেছিলেন “আমি নিজেকে একজন ব্রাজিলিয়ান ভাবতে চাই।”
ব্রাজিলিয়ান হিসেবে মারাদোনা সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু ছিলেন কেরেকা। ইতালিয় লীগে নাপোলির হয়ে একসাথে খেলতেন তারা। এদিন কেরেকা বলেন,”তার ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে ব্রাজিলের প্রতি তার কিছুটা তিক্ততা ছিল। তারপর তিনি দেখেন ১৯৮৬ সালের পর ব্রাজিলিয়ানরা তাকে কিরকম ভালোবাসে। ব্রাজিলিয়ানরা সেই সমস্ত প্লেয়ারদের ভালবাসি যারা স্কিলফুল। এটা কোন বিষয় নয় তারা কোন দেশ থেকে এসেছে।”