দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরোঃ খড়ের নৌকায় বহরমপুর থেকে আউট্রামঘাট অবধি পাড়ি।হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন এমনই উত্তেজনাকর অভিযানে শামিল হতে চলেছেন একদল অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় মানুষ। লম্বায় ৫৬ ফুট আর চওড়ায় ৮ ফুট। নৌকার কাঁচামাল বলতে ৫০ টি বাঁশ, দু কাহন খর এবং হোগলা পাতা। নিজেদের হাতে তৈরি এমনই অভিনব নৌকা নিয়ে গঙ্গার বুকে নামবেন ১১ জন অভিযাত্রী। লক্ষ্য তাদের ৮ দিনে বহরমপুর থেকে কলকাতার আউট্রামঘাটে পৌঁছানো।
শুধু জলের অভিযাত্রী নয় এই অভিনব অভিযানে যোগ দিয়েছেন এভারেস্ট বিজয়ী পর্বতারোহীরাও।পুষ্পেন সামন্ত,অসীম মন্ডলদের সাথে রয়েছেন দুই বাঙালি মাউন্টেন ম্যান সত্যরূপ সিদ্ধান্ত এবং রুদ্রপ্রসাদ হালদার। একদিকে যেমন ২৭ ফুটের নৌকা নিয়ে দুঃসাহসিক আন্দামান অভিযানে পারি দেওয়া তাপস চৌধুরী, অসীম মন্ডল, পুষ্পেন সামন্তরা এই অভিনব খড়ের নৌকা অভিযান নিয়ে উদগ্রীব। তেমনি উদগ্রীব সত্যরূপ বাবু কিম্বা রুদ্রপ্রসাদবাবুও। এই ধরনের অভিযান মোটেই প্রথমবার নয়। ইতিহাসের পাতা খুললেই দেখা যায় যুগ যুগ ধরে মানুষকে তাড়িয়ে দিয়েছে জলকে জয় করার টান। তা পঞ্চদশ শতাব্দীতে ভারতে আসা ভাস্কদাগামার কথাই হোক কিম্বা ১৯৪৭ সালে দক্ষিণ আমেরিকা থেকে পলিনেশিয়া দ্বীপপুঞ্জ পৌঁছাতে জলে ভেসে পড়াই হোক।ভারতেও এ ধরনের অভিযানের উদাহরণ কম নেই। বহুদিন ধরেই বাঙালি অভিযাত্রীদের অনুপ্রেরণা ১৯৫৯ সালে আন্দামানের উদ্দেশ্যে ১৮ ফুট ডিঙি নিয়ে ভেসে পড়া পিনাকী রঞ্জন চট্টোপাধ্যায়।
তবে নদীর অভিযান সম্পূর্ণ আলাদা। পরিচয় হয় নানা মানুষের সাথে। “দ্য সি এক্সপ্লোরার ইনস্টিটিউট” তাদেরই অভিনব নৌকা নিয়ে গঙ্গার বুকে নামতে চলেছেন সংস্থার অন্যতম কর্ণধার শিউলি চট্টোপাধ্যায়ের স্মৃতির উদ্দেশ্যে। টানা আট দিন নদী বক্ষেই থাকা-খাওয়া, এবং অবিরাম দাঁড় বেয়ে লক্ষ্যে পৌঁছানোর প্রবল বাসনা। শুধু তাই নয় এই কোভিড আবহে জনসচেতনতা বাড়াতে ৩৭০ কিলোমিটারব্যাপী এই যাত্রায় বিভিন্ন এলাকায় দাঁড়িয়ে জনসচেতনতা মূলক অনুষ্ঠান করবেন তারা। অভিযান সম্পর্কে আরো বিশদে জানতে আমরা যোগাযোগ করেছিলাম অন্যতম খ্যাতনামা জল-অভিযাত্রী তাপস চৌধুরীর সাথে।
তাপস বাবু বলেন,”এই অভিনব নৌকা অভিযান এর সাথে যুক্ত হতে আমি ভীষণ ব্যাগ্র।এই কোভিড পরিস্থিতিতে জনসচেতনতা বাড়াতে আমাদের মনে হয়েছে অভিযাত্রীদেরও কিছু করা উচিত। এই কারণেই যাত্রার সময় বিভিন্ন এলাকায় জনসচেতনতামূলক ছোট ছোট প্রচারাভিযান করব আমরা। এই খরের নৌকার কনসেপ্টটি একেবারেই অভিনব। আমরা সাধারনত অভিযানের জন্য তৈরি নৌকা ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু অভিযাত্রীরা নিজেরা খেটে নিজেদের নৌকা তৈরি করছে। পরিবেশবান্ধব জিনিসপত্র দিয়ে এই নৌকা তৈরি।”
এই জলের অভিযানে শুধুমাত্র জল অভিযাত্রীরা নয় যোগ দিচ্ছেন পর্বতারোহীরাও। সে প্রসঙ্গে তাপস বাবু বলেন,”বাঙালির গর্বের এভারেস্ট বিজয়ী পর্বতারোহীরাও এই অভিযানে আমাদের সাথে যোগ দিচ্ছেন। তাদের জলের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানতে আমি ভীষণ আগ্রহী।”
এবিষয়ে আমরা যোগাযোগ করেছিলাম খ্যাতনামা এভারেস্ট বিজয়ী পর্বত আরোহী রুদ্রপ্রসাদ হালদারের সাথেও। তিনি বলেন,”বহুদিন আগে আমার ইচ্ছা ছিল ভেলা নিয়ে ব্রহ্মপুত্র ভেসে পড়া। কিন্তু নানা কারণে তা সফল হয়নি। আমি তাই এই অভিযানে যুক্ত হতে পেরে সত্যিই ভীষণ আনন্দিত। এরপরেও আমি অন্যান্য জলের অভিযানে যুক্ত হতে চাই।আমরা সাধারনত পাহাড়ে অভিযান করি কিন্তু তাপসদা-পুষ্পেন যখন আমাকে এই অভিযান সম্পর্কে বলে তখন আমি আর না করতে পারিনি। তাছাড়া শহরের দিকে লোকেরা করোনা সম্পর্কে কিছুটা সচেতন। কিন্তু গ্রামবাংলায় অনেকেই এখনও সচেতন নন। তাই এই অভিযান এ আমরা করনা সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে যে অনুষ্ঠান গুলি করবো সেটা নিয়েও আমি বেশ উদগ্রীব হয়ে রয়েছি। ট্রেন বাস চলাচলের পর গ্রামের দিকে করোনার প্রভাব বেশকিছু বেড়েছে। তাই এ সম্পর্কে তাদের সচেতন করা একান্ত প্রয়োজন। তাই এই অভিযানের ফাঁকে ফাঁকে বিভিন্ন জায়গায় নেমে আমরা অনুষ্ঠান করে সচেতনতা মূলক প্রচার করব।”
নিজেদের তৈরী এই নৌকা সম্পর্কে তিনি কতটা উত্তেজিত হয়ে কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন,”হয়তো এর দৈর্ঘ্য কিছুটা বড় কিন্তু এটা আসলে সেই ভেলার মতই। বিশেষত পুষ্পেন মনে করে যে ভাসতে চাইলে যেকোনো কিছু নিয়েই ভেসে পারা যায়। এই কারণেই এই অভিনব নৌকার কনসেপ্টটি আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে।”
কাল শুরু হচ্ছে শিউলির গঙ্গাবক্ষে যাত্রা। গঙ্গা দূষণ সম্পর্কিত তথ্য এবং করোনা সচেতনতা মূলক প্রচার তো রয়েছেই, কিন্তু এই এগারোজন অভিযাত্রীর খড় হোগলার নৌকা নিয়ে গঙ্গাবক্ষে যাত্রাই হল আসল অ্যাডভেঞ্চার। কাল সেই অ্যাডভেঞ্চার কেমন হয় সে দিকেই এখন তাকিয়ে আছে সকলে।