অলিম্পিকে ১০০ মিটারে সোনাজয়ী প্রথম ব্রিটিশ অ্যাথলিট হ্যারল্ড আব্রাহামস। যিনি ওই সোনাটি জিতেছিলেন ১৯২৪ সালে প্যারিস অলিম্পিকে। ১০.৬ সেকেন্ডে সোনা জিতে গড়েছিলেন অলিম্পিক রেকর্ডও। ৪x১০০ মিটার রিলেতে পেয়েছিলেন রুপো। ১০০ মিটারে রুপো ও ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন যথাক্রমে আমেরিকার জ্যাকসন স্কোলজ (১০.৭) ও নিউজিল্যান্ডের আর্থার পোরিট (১০.৮)। গ্রেট ব্রিটেনের হ্যারল্ড আব্রাহামসের অলিম্পিকের সেই সোনা জয় নিয়ে পরে একটি সিনেমা হয়েছিল। সেই ‘চ্যারিয়টস অফ ফায়ার’ অস্কার পুরস্কারও জিতেছিল। কিন্তু বিজ্ঞাপনে ‘এ ট্রু স্টোরি’ বলে প্রচার করা হলেও তাতে তথ্যের বেশ কিছু ভুল ছিল।
১৯২০ সালে অ্যান্টুওয়ার্প অলিম্পিকেও গ্রেট ব্রিটেন দলে ছিলেন হ্যারল্ড। চারটি ইভেন্টে নেমেও পদক ছোঁয়া হয়ে ওঠেনি। ১০০ ও ২০০ মিটার দৌড়ে বিদায় নিতে হয়েছিল কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে। লং জাম্পে শেষ করেছিলেন ২০ নম্বরে। আর গ্রেট ব্রিটেনের ৪x১০০ মিটার রিলে দল পেয়েছিল চতুর্থ স্থান।
১৯২৫ সালের মে মাসে লং জাম্পের সময় পায়ে গুরুতর চোট পান। সেখানেই শেষ হয়ে যায় অ্যাথলেটিক্স জীবন। ১৯২৮ সালে আমস্টারডাম অলিম্পিকে হ্যারল্ড আব্রাহামসকে ব্রিটিশ দলের ‘নেতা’ করে পাঠানো হয়েছিল। সেখানে তাঁর আরও দায়িত্ব ছিল। সেবার ‘অফিসিয়াল ব্রিটিশ অলিম্পিক রিপোর্ট’-এর সম্পাদকও ছিলেন তিনি। ওই কাজ করতে গিয়েই ভালবেসে ফেলেছিলেন লেখালেখিকে। ফলে পরে প্রায় টানা অর্ধশতাব্দি নানা পত্রপত্রিকায় লিখেছেন। সেই সব লেখায় প্রাধান্য পেয়েছে অ্যাথলেটিক্সই। দেখা গিয়েছিল ধারাভাষ্যকারের ভূমিকায়ও। ১৯৩৬ সালে বার্লিন অলিম্পিক কভার করেছিলেন বি বি সি রেডিও-র হয়ে। লিখেছেন বেশ কয়েকটি বইও। যেমন: দি অলিম্পিক গেমস (১৮৯৬-১৯৫২), দি রোম অলিম্পিয়াড ১৯৬০। পেশায় ছিলেন আইনজীবী।
স্প্রিন্টে আসার আগে হ্যারল্ডের প্রিয় ইভেন্ট ছিল লং জাম্প। এর কারণ ওঁর দাদা সিডনি আব্রাহামস। যিনি একসময় ব্রিটেনের নামী লং জাম্পার ছিলেন। ১৯১২ সালে স্টকহলম অলিম্পিকে ব্রিটেনের হয়ে অংশও নিয়েছিলেন। ৬.৭২ মিটার লাফিয়ে পেয়েছিলেন একাদশ স্থান। দাদাকে দেখেই লং জাম্পে এসেছিলেন হ্যারল্ড। কিন্তু কোচের (Sam Mussabini) পরামর্শে অল্পদিনের মধ্যেই লং জাম্পের পাশাপাশি স্প্রিন্টেও মন দিতে হয়। প্রথমবার অলিম্পিকে নামার আগেও স্প্রিন্টারের চেয়ে হ্যারল্ডের বেশি খ্যাতি ছিল লং জাম্পার হিসেবেই। ১৯২০ সালে অলিম্পিকে অংশ নেওয়ার একমাস আগে লাফিয়েছিলেন ৭.৩৮ মিটার। ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত যা ছিল ইংল্যান্ডের রেকর্ড। কিন্তু প্রথমবার অলিম্পিকে নেমে পদক জিততে না পেরে বেশ হতাশই হয়েছিলেন। কোচের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, প্যারিস অলিম্পিকে পদক জেতার জন্য স্প্রিন্টেই মন দেবেন। তাঁর এই সিদ্ধান্ত যে নির্ভুল ছিল তা প্রমাণও করতে পেরেছিলেন।
প্যারিস অলিম্পিকে ১০০ মিটারের ফাইনাল হয়েছিল ৭ জুলাই, সন্ধ্যে ৭ টায়। ওই অলিম্পিকের সময় থেকেই ব্রোঞ্জজয়ী নিউজিল্যান্ডের আর্থার পোরিটের সঙ্গে গভীর বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল হ্যারল্ডের। এরপর প্রতিবছরই নিয়ম করে ৭ জুলাই ওঁরা দেখা করতেন। ঠিক ৭ টায় একসঙ্গে ডিনার করতেন। বিয়ের পর ওই ডিনারে দু’জনের সঙ্গেই থাকতেন স্ত্রী। ১৯৭৮ সালের ১৪ জানুয়ারি মারা যান হ্যারল্ড। তার আগে পর্যন্ত ওই নিয়মের কোনও ব্যতিক্রম ঘটেনি।
বিয়ে করেছিলেন অপেরা গায়িকা সিবিল এভার্সকে, ১৯৩৬ সালে। কনের জন্য ‘ওয়েডিং রিং’ তৈরির সময় অলিম্পিকের সোনার পদক থেকে এক টুকরো কেটে নিয়েছিলেন। সোনার পদক ও সেই আংটি, কোনওটাই শেষ পর্যন্ত হ্যারল্ড আব্রাহামসের বাড়িতে ছিল না। সিবিলের মৃত্যুর পর চুরি হয়ে গিয়েছিল। তবে একসঙ্গে নয়, আলাদা দিনে।
(হ্যারল্ড আব্রাহামসের জন্ম ১৮৯৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর, ইংল্যান্ডের বেডফোর্ডে। জন্মদিনের একদিন আগেই স্মৃতিচারণ)।