দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরোঃ ‘এক ঝাঁক ইচ্ছেডানা, যাদের আজ উড়তে মানা/ মিলবেই তাদের অবাধ স্বাধীনতা’ – পরশপাথরের এই গানটি সুদূর আরব মুলুকে কেউ শুনেছে বলে মনে হয় না। কিন্তু ‘ইচ্ছে’ সেখানে পরশপাথরের সমান। বিশেষত এক নারীর ইচ্ছে সেখানে ঘোরতর অপরাধ। কিন্তু সেই মুলুক থেকে যদি কেউ পাড়ি জমায় পাহাড়ের বুকে। যদি সে পৃথিবীর দুর্গম প্রান্তরগুলোতে রেখে আসতে চায় নিজেত ছাপ? কি মনে হচ্ছে, অবাস্তব? না না এ এক ঘোরতর বাস্তব। যাকে বলে গল্প হলেও সত্যি। যার কথা বলছি তাকে এক কথায় ওয়ান্ডার ওমেন্ বলাই যায়। কারণ সে এমন এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে যে তাকে বর্তমান পৃথিবীর নারী স্বাধীনতার পোস্টার গার্ল বলাই যায়।


তাঁর নাম হল রাহা মোহার্র্ক। পৃথিবীর নারী স্বাধীনতা যেখানে এক অলীক স্বপ্ন সেই সৌদি আরবে জন্ম রাহার। কিন্তু তুলনামূলক স্বাধীন আবওহাওয়াতেই তাঁর বড় হওয়া। ১৯৮৬ সালে সৌদির জেদ্দায় জন্ম রাহার। বাবার কাজ করতেন আরব এয়ারলাইন্সে। আদরের মেয়েকে একটু বেশি ভালোবাসতেন তিনি। শারজার আমেরিকান ইউনিভার্সিটি থেকে ভিজুয়াল কমিউনিকেশনে স্নাতক হবার পর দুবাই পারি জমান এমবিএ-এর জন্য। এমবিএ-এর পরে তার জন্য চলে আসে মোটা মাইনের চাকরি, অনেক উচ্চাশা বিলাস। তখনো রাহা জানে না যে তার জন্য অপেক্ষায় আছে কত ‘দুর্গম গিরি কান্তার মরু’।


হঠাত্ রাহার বন্ধুরা ঠিক করে কিলিমাঞ্জারো ট্রেক করবে। ট্রেকিং কি বা কিলিমাঞ্জারো সমুদ্র থেকে কত উচ্চতায় তা জানত না রাহা। শুধু জানত যে তার মধ্যে বাসা বাঁধছে এক অদম্য ইচ্ছে। সেই ইচ্ছের সামনে নতজানু হল রাহার বাবা মা আর পুরুষতন্ত্রের রোষ। বাবার উদ্দেশে চিঠি লিখে বেরিয়ে গেল সে। পা বাড়াল অজানায়। আর তারপর থেকে একের পর এক সামিট জয়।
আরো পড়ুনঃ আপনার ও বিশ্বাস হবে না যে এই ‘ছবির’ ছেলেটি কিশোর শাহরুখ খান নয়!
২০১১ সালে তানজানিয়া থেকে সফর শুরু করেছিল রাহা। তারপর একে একে আন্টার্টিকার মাউন্ট ভিনসন, ইওরোপের মাউন্ট এলবুর্জ, নেপালের কালাপাত্থর-এর চূড়ো পেরিয়ে গেলেন তিনি। শেষমেশ এলো সেই পালা। ২০১৩ এর ১৮ মে, পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টের বরফচূড়োতে যখন সূর্যের আলো এসে ছুঁল তখন পঁচিশের রাহা তার ইচ্ছেডানা মেলে দিয়েছে। তার ইচ্ছেতে অজান্তে সামিল হয়েছে হাজারো নারীর স্বপ্ন, আকাঙখা।
আজ রাহা দুনিয়ার তাবড় তাবড় ব্র্যান্ডের মুখ। অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসকে নানা দেশে নানা বয়সীদের মধ্যে প্রচার করছে সে। রাহা প্রথম মহিলা ও তরুণ আরববাসী হিসেবে এভারেস্টের শৃঙ্গ স্পর্শ করেছিল। কিন্তু এসবের থেকে বড় কথা রাহা যেন এক ইচ্ছের নাম। তৃতীয় বিশ্বে আজো যখন নারী স্বাধীনতার নামে কেবলমাত্র দুকলম লেখা আর কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা। যে দেশে আজো নারী ভ্রূন হত্যা ঘটে যায় সেখানে যেন রাহা সত্যি ওয়ান্ডার ওমেন, কিন্তু এক সাধারণ নারীর বেশে। যে নিজের ইচ্ছেকে হারতে দেয়নি, আর যে কারো ইচ্ছেকে হারতেও দেবে না।

