দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরোঃ নেটফ্লিক্সের ‘কুইন’স গ্যাম্বিট’ ইতিমধ্যে সাড়া জাগিয়েছে নানা মহলে। রূপে লাবণ্যময়ী হয়েও যে চৌষট্টি খোপের যুদ্ধে পুরুষতন্ত্র নারীর পদতলে মুখ থুবড়ে পরে সেই বৃত্তান্ত আমরা জেনে ফেলেছি। কিন্তু এখন যার কথা উঠে আসছে সে কোনো ফিকশনাল চরিত্র নয় কিন্তু যেন তাকে ঘিরেই গল্প বুনে ফেলেছে নেটফ্লিক্স। বাইশ বছরের ডোরসা দেরাক্সানি, কিছুদিন আগে অবধি ইরানি হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতেন কিন্তু মধ্যযুগীয় পুরুষতন্ত্রকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সে সবরকমের কাঁটাতার পেরিয়ে চলে এসেছে আমেরিকা।
কে এই ডোরসা? কেনই বা সে শিরোনামে? ডোরসা যখন দাবা খেলা শুরু করে তখন তার বয়স মাত্র দুই বছর, আর এদিকে তার যখন অক্ষর জ্ঞান হচ্ছে ততদিনে সে জেনে ফেলেছে যে কিভাবে আড়াই চালের ঘোড়া দিয়ে সাম্রাজ্য শাসন করা যায়। মাত্র বাইশ বছর বয়সেই সে আন্তর্জাতিক স্তরে গ্র্যান্ডমাস্টারের শিরোপা পেয়েছে।
এতদিন সে ইরানের জাতীয় পরিচয় নিয়ে দাবার আসরে খেলছিল। কিন্তু গোল বাঁধাল তার স্বাধীন ইচ্ছে, হিজাব না পরার অপরাধে ইরানের জাতীয় দল থেকে বরখাস্ত করা হল তাকে। কিন্তু এই চোখ রাঙানিকে পাত্তা না দিয়ে ডোরসা পাড়ি জমাল আমেরিকায়। সেন্ট লুইসা ইউনিভার্সিটিতে বায়োলজিতে স্নাতকে ভর্তি হয়ে আমেরিকার নাগরিকত্ব গ্রহণ করল।
আরো পড়ুনঃ আরব্যরজনীর রূপকথা নয়, এক প্রচণ্ড বাস্তব!পাহাড়ের বুকে এক নারীর ইচ্ছের জেহাদ
ইরানের রাজধানী তেহরানে জন্মায় ডোরসা। মাত্র আট বছর বয়সে প্রথম টুর্নামেন্ট জিতে নেয় সে। আঠারো পেরোতে না পেরোতে ডোরসা গ্র্যান্ডমাস্টারের শিরোপা পেয়ে যায়। ২০১৬ সাল থেকে সে ইন্টারন্যাশনাল চেস্ ফাউন্ডেশন প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করে। ২০১৭ সালে হঠাৎ ইরান সরকার তাকে জাতীয় টিম থেকে বাদ দিয়ে দেয় আর তখনই ডোরসা খবরের শিরোনামে চলে আসে। এরপর মিসৌরির সেন্ট লুইসা ইউনিভার্সিটির পক্ষ থেকে তাকে স্কলারশিপ দেওয়ার কথা বলা হয়। ডোরসা ততক্ষনাৎ সেই প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায় ও পাড়ি জমায় আমেরিকা।
সম্প্রতি ডোরসা ইউএসএ চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ পদক সমেত ১৩০০০ ডলারের পুরষ্কার মূল্য পেয়েছে। তৃতীয় স্থান অধিকার করে ডোরসা স্বাভাবিক খুব উচ্ছসিত। তার এই সাফল্যের পেছনে যে দিনরাতের পরিশ্রম আছে তা স্পষ্ট করে দিয়েছে ডোরসা। তাঁকে নেটফ্লিক্সের এই সিরিজের কথাটি বলা হলে তিনি বলেন যে, ‘দাবা আদতে আরো বেশি সেক্সি যতটা এই সিরিজে দেখানো হয়েছে তার থেকেও ’। ডোরসাকে মাঝে মাঝেই সাংবাদিকদের এমন প্রশ্ন শুনতে হয় যে তার এই লাবণ্যময়ী রূপ কি তার খেলারই অঙ্গ! তাতে সম্মতি জানিয়ে ডোরসা জানায় যে, দাবার বোর্ডে সে প্রতিপক্ষ ছাড়া আর কাউকেই চেনে না।


পুরুষ প্রতিপক্ষরা তার রূপের মেজাজে যে তাকে মাঝে মাঝেই দুর্বল ভেবে বিপদে পরেছে সে কথাও জানিয়েছে ডোরসা। একসময় যার ইউরোপীয় কোচ তাকে বলেছিল যে, দাবা খেলতে হলে লিপস্টিকের দরকার কি! তাকেও যেন এক জোরদার চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে ডোরসা। তার এখন লক্ষ্য জয় সুনিশ্চিত করা, তাই তার প্রশিক্ষণের জন্য চব্বিশ ঘন্টা সেন্ট লুইসা চেস ক্লাবের ঘর খোলা রয়েছে। নিজের ডিগ্রির পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গে সে চেস্ নিয়ে সবরকমের বই পড়ে চলেছে। ডোরসা যেন ‘গল্প হলেও সত্যি’র এক চরিত্র।