দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরোঃ কাল শুরু হতে চলেছে ভারত অস্ট্রেলিয়া সফরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বর্ডার গাভাস্কার ট্রফি। ইতিমধ্যেই সিরিজ নিয়ে মুখ খুলেছেন দু’দেশের বিশিষ্ট ক্রীড়াবিদরা। একদিকে যখন ছোটা খাতে প্রায় মিনি হাসপাতালে পরিণত হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার শিবির।চোটের কারণে প্রথম টেস্টে অনুপস্থিত ডেভিড ওয়ার্নার, ক্যামেরন গ্রীন, পুকভস্কির মতো তারকারা।এমনকি গতকাল নিট প্র্যাকটিসের সময় পিঠে টান ধরার কারণে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছেন স্টিভ স্মিথও।তখনই অন্যদিকে তখনই ভারতীয় দলেও অনুপস্থিত রোহিত শর্মা। প্রথম টেস্টের পর দেশে ফিরছেন কোহলিও। তাই এই সিরিজে আপাতত সকলের কাছেই হট টপিক এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই।
এবার সিরিজ নিয়ে মুখ খুললেন অন্যতম ভারতীয় তারকা ব্যাটসম্যান আজহারউদ্দিন এবং অস্ট্রেলিয়ান তারকা ইয়ান চ্যাপেল। কাল এক সাংবাদিক বৈঠকে একই সাথে আসন অলংকৃত করেন আজাহারউদ্দিন এবং ইয়ান চ্যাপেল। ক্যালকাটা মিররের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলাম আমরাও।
আজারুদ্দিনের কাছে প্রশ্ন ছিল, গোলাপি বলের কথা মাথায় রেখে কোহলি কি আদৌ পাঁচ বোলার খেলানোর সিদ্ধান্ত নেবেন?
আজহার বলেন, “আমি অবশ্যই সব সময় পাঁচজন বোলার খেলানোর পক্ষে। আমার মতে দুজন স্পিনার খেলানো উচিত। গোলাপি বলের ক্ষেত্রে স্পিনারদের ভূমিকা কম নয়। বিশেষত একজন লেখক বোলার দলে থাকলে অনেকটাই সুবিধা হবে। তৃতীয় পেশার হিসেবে আমি সিরাজকে দেখতে চাইবো। সিরাজ এখনো নতুন, আমার সব সময় মনে হয় লাল বলে অনেক ভালো বোলার।”
অস্ট্রেলিয়া তরফে বোলিং কম্বিনেশন কি হবে সেই নিয়ে মুখ খোলেন ইয়ান,তিনি বলেন,”আমি কিন্তু চার বোলারের পক্ষে। আমার মতে একজন অলরাউন্ডার নেওয়া যেতে পারে। ক্যামেরন গ্রীন না থাকায় অতিরিক্ত ওভার বোলিংয়ের দায়িত্ব লাবুশানে, মার্কাস হ্যারিসদেরই নিতে হবে।”


কোহলির না থাকা প্রসঙ্গেও এদিন মুখ খোলেন দুজনেই,আজাহার বলেন, “কোহলি একজন বড় প্লেয়ার। ওড়না থাকাটা ভারতকে অনেকটাই ব্যাকফুটে চলে যাবে। আমি সেই ধরনের খেলোয়াড়দের বেশি পছন্দ করি যারা সব সময় স্কোরবোর্ড এগিয়ে নিয়ে যায়। কোহলি সেই ধরনের প্লেয়ার। তবে নতুন খেলোয়াড়দের কাছে এটা একটা বড় সুযোগ তাদেরকে সামনে এগিয়ে আসতে হবে।”
এদিন কোহলি প্রসঙ্গে মুখ খুললেন ইয়ান চ্যাপেলও। সাথে সাথে রাহানের ক্যাপ্টেন্সি নিউ এদিন কথা বলেন তিনি। তার মতে,”কোহলির না থাকা ভারতের পক্ষে অবশ্যই বড় প্রভাব ফেলবে। তবে ক্যাপ্টেন হিসেবে রাহানে ভালো। আক্রমনাত্মক ক্যাপ্টেন আমি যা পছন্দ করি। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে আমার মনে আছে ওয়ার্নার দুরন্ত খেলছিলেন। ভারতের পক্ষে জয় দরকার ছিল সিরিজ জেতার জন্য। তখন হঠাৎ করেই রাহানে কুলদীপের হাতে বল তুলে দেন এবং কুলদীপ ওয়ার্নারকে ফিরিয়ে দেয়। নিজে ব্যাট হাতেও সেদিন দ্রুত রান তুলেছিলেন তিনি তাই ওর অধিনায়কত্ব আমার বেশ লাগে। যদিও অনেক ম্যাচে তেমনভাবে ওকে এখনো অধিনায়কত্ব করতে দেখিনি।”
ভারতীয় পেস ব্যাটারি সম্পর্কেও এদিন মুখ খোলেন ইয়ান। তার মতে,”বুমরাহ এবং মোহাম্মদ শামি খুবই ভাল বোলার। এবার ভারতের জোরে বোলিং আক্রমণ সত্যি খুব ভালো। তবে ওদের স্মিথের উইকেট টার্গেট করতে হবে। স্মিথকে সময় দিলে ওরা ভুল করবে। ওয়ার্নার না থাকায় অস্ট্রেলিয়ার কাছে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ উইকেট হল স্মিথ। তাই আগেভাগে তাকেই তুলে নিতে হবে ভারতীয়দের।”
সাংবাদিকদের তরফে এরপর তাদের কাছে প্রশ্ন ছিল, স্মিথ নাকি কোহলি কাকে এগিয়ে রাখছেন তারা বিশেষত টেস্ট ক্রিকেটে। আজহার বলেন,”স্মিথ-কোহলি দুজনেই বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ খেলোয়ারদের অন্যতম এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। স্মিথের ব্যাটিং একটুখানি আনকনভেনশনাল। তবে টেস্ট ক্রিকেটের নিরিখে ওর যা ব্যাটিং গড়। বোধহয় তা প্রায় ৬০ এর উপরে। তাই শুধু টেস্ট ক্রিকেটের কথা বললে ওকে এগিয়ে রাখতেই হবে।”


অন্যদিকে চ্যাপেল অবশ্যই এগিয়ে রাখছেন কোহলিকেই। তার উত্তর,”প্রশ্নটা সত্যিই কঠিন কারণ আলোচনা তিন ফরম্যাটকে নিয়ে নয় মাত্র টেস্ট ফরম্যাটকে নিয়ে। তবে আমি তাকে এগিয়ে রাখতে পছন্দ করে যার ব্যাটিং দেখতে আমার বেশি ভালো লাগে। সেক্ষেত্রে কোহলির ব্যাটিং দেখতে আমার অনেক বেশি ভালো লাগে তাই আমার মতে কোহলিই এগিয়ে।”
অন্যদিকে এদিন স্মিথকে আউট করার গুরু মন্ত্র দেন আজহার। তার মতে, “স্মিথের ব্যাটিং একটু আনকনভেনশনাল। তাই আমার মতে শুরুর দিকে ওকে অফস্টাম্পের বাইরে আউট স্যুইং করানো উচিত।”
অ্যাডিলেড টেস্টে এর আগেও ভাল ফলাফল করেছে ভারতীয় দল। সে কথা মাথায় রেখেই প্রাক্তন অস্ট্রেলিয়ান তারকা ইয়ান চ্যাপেলকে প্রশ্ন করা হয় গোলাপি বলের ক্ষেত্রে অ্যাডিলেড কি একই রকম ব্যবহার করবে? চ্যাপেলের উত্তর,”আমি এটুকু বলতে পারি অ্যাডিলেডে টেস্ট ড্র হবে না। ফলাফল নিশ্চয়ই আসবে। হ্যাঁ, প্রথমদিকে বোলাররা একটু সুবিধা পাবেন এটা ঠিক। তবে পরের দিকে ব্যাটসম্যানরাও সুবিধা পেতে পারেন।”
অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া প্রসঙ্গে আজহার বলেন,”আমাদের সময় অস্ট্রেলিয়ার বাউন্স যেরকম ছিল এখন কিছুটা কমতি লাগে। পিচে যেন সেই বিষাক্ত তীক্ষ্ণতা নেই। হ্যাঁ, বাউন্স এখনো আছে। তবে ব্যাটসম্যানরা নিজেদের সময় দিলে অবশ্যই রান পাবেন।”
সাহা এবং পান্থ প্রসঙ্গে মুখ খুললেন দুজনেই।এক্ষেত্রে দুজনেই অবশ্য সহমত। তাদের মতে,”ভারত যদি চার বোলার খেলায় তাহলেই সুযোগ দেওয়া যেতে পারে সাহাকে। কারণ জাদেজা যদি না খেলতে পারেন। তাহলে একজন গুরুত্বপূর্ণ অলরাউন্ডারকে থাকতে হচ্ছে দলের বাইরে। সে ক্ষেত্রে কোহলির একমাত্র পছন্দ হতে পারে পান্থ। কারণ ও অনেক ভালো ব্যাটসম্যান। যদি পাঁচ বোলার খেলানো হয়। সে ক্ষেত্রে রিষভ অনেক বেটার চয়েজ। আর যদি চার বলার খেলানো হয় তাহলে সাহাকে প্রাধান্য দেব একজন গুরুত্বপূর্ণ উইকেটকিপার হিসেবে।”
ইয়ান চ্যাপেল কিছুদিন আগে বলেছিলেন ২-১ ব্যবধানে সিরিজ হারবে ভারত। কিন্তু তখন দলে ওয়ার্নার ছিলেন। এদিন এ প্রসঙ্গে চ্যাপেল বলেন,”আমি বলেছিলাম ২-১ এর ব্যবধানে সিরিজ হারবে ভারত। তবে তখন দলে ওয়ার্নার স্মিথ দুজনেই ছিলেন। কিন্তু এখন ওয়ার্নার না থাকায় অনেকটাই প্রভাব পড়তে পারে ফলাফলে। ভারতকে যদি জিততে হয় তাহলে গোলাপি বলের টেস্ট জিতে ১-০ লিড নেওয়া দরকার। তবে ওয়ার্নার না থাকলেও অস্ট্রেলিয়ায় অস্ট্রেলিয়াকে হারানো যথেষ্ট কঠিন।”
এদিন আজাহারকে জিজ্ঞেস করা হয় ভারতের পক্ষে জয় পেতে গেলে সবচেয়ে বড় গুরু মন্ত্র কি হতে পারে?
তিনি বলেন,”ওদের ওপেনিং পার্টনারশিপ এখন অনেকটাই দুর্বল। যখন নতুন বল মুভ করে তখন অসুবিধা হয় সবারই। তাছাড়া মার্কাস হ্যারিস নতুন। তাই জয় পেতে হলে ভারতকে নতুন বলে ওপেনিং পার্টনারশিপ ভাঙতে হবে।”
ভারতের ক্ষেত্রে ওপেনিং এর জন্য আজহারের অবশ্য পছন্দ পৃথ্বী শ এবং মায়াঙ্ক আগারওয়ালই। প্র্যাকটিস ম্যাচে ভালো পারফর্ম করলেও শুভমান গিলকে এখনও দলে রাখতে চান না এই তারকা। তার মতে ভারতের প্রথম ছয় ব্যাটিং লাইনআপ হলো, “পৃথ্বী শ, আগরওয়াল, চেতেশ্বর পুজারা,বিরাট কোহলি, অজিঙ্কা রাহানে, ঋদ্ধিমান সাহা/ রিষভ পান্থ।”
এর সাথে সাথেই ডে নাইট টেস্ট নিয়েও এদিন মুখ খোলেন আজহার। তার মতে,”আমি নিজে দিন-রাতের টেস্টের খুব একটা পক্ষে নই। তবে হ্যাঁ,সাদা বলের সিরিজ খেলার পর সরাসরি দিন রাতের টেস্ট না খেলে, হয়তো কয়েকটি টেস্টের পরে খেললেই ভালো হতো।কিন্তু ওরা প্রত্যেকেই প্রফেশনাল খেলোয়াড়।পরিস্থিতির সাথে ওদের মানিয়ে নিতেই হবে।”
সাথে সাথে এদিন তিনি এও বলেন,”গোলাপি বলে ভারতের অভিজ্ঞতা তুলনায় অস্ট্রেলিয়ার অভিজ্ঞতা অনেক বেশি। তবে আমি বলবো দুইপক্ষের কাছেই এখনো বিষয়টা নতুন। তাই যে দল তিনটি বিভাগে নিজেদের সেরাটা উজার করে দেবে তারাই জিতবে।অস্ট্রেলিয়ায় অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে গেলে ব্যাটিং বোলিং ফিল্ডিং তিনটাতেই নিজেদের সেরাটা উজার করে দিতে হবে। সাম্প্রতিক অতীতে ভারতের ফিল্ডিং যথেষ্ট খারাপ হয়েছে।তাই সেদিকেও নজর দেওয়া দরকার। “