দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরোঃ নেই ঋদ্ধিমান, নেই রাহুল টিম ম্যানেজমেন্টের দোষে আবার কি ব্যাকফুটে টিম ইন্ডিয়া? প্রশ্ন খুবই স্বাভাবিক। এর আগেও ভারতীয় টিম নিয়ে একাধিকবার গ্যাম্বলিংয়ের খেলা খেলেছেন রবি শাস্ত্রী নির্দেশিত টিম ম্যানেজমেন্ট। কিছুটা পিছিয়ে গিয়ে ২০১৯ সালের বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল থেকে শুরু করা যাক। সেদিন ভারতের হয়ে প্রথমবার মাঠে নামা দীনেশ কার্তিককে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির জায়গায় চার নম্বরে ব্যাট করতে পাঠানো হয়। ধোনি আসেন সাত নম্বরে। ফলাফল কারো অজানা নয়। সহজ লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমেও শেষ পর্যন্ত হারের মুখ দেখে টিম ইন্ডিয়া। কিন্তু কথা হলো তারপর কি হয়? ভারতে নবী শাস্ত্রবিরোধী আওয়াজ সোশ্যাল মিডিয়ায় সোচ্চার হয়ে ওঠে। ভারতের সাথে এই বিসয়ে কথা বলা হবে বলে ঘোষণা করা হয় বিসিসিআই তরফে এবং শেষমেষ সঞ্জয় বাঙারকে হিন্দি শব্দ “বলি কা বকরা” বানিয়ে টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে নির্বাসিত করা হয়।
এপর্যন্ত গল্প সকলের জানা। সৌরভ গাঙ্গুলী আসার পর তাই সকলেরই আশা ছিলো এবার হয়তো ক্লাস নেওয়া হবে রবি শাস্ত্রির একের পর এক ভুল করলে আর রেহাই পাবেন না তিনি। কিন্তু বাস্তব ছবিটা অন্য। রবি শাস্ত্রী বহাল তবিয়তে টিকে যান ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট। দল নিয়ে চলতে থাকে একের পর এক গ্যাম্বলিং। কখনো কাঠগড়ায় দাঁড়ানো করানো হয় নির্বাচক এমএসকে প্রসাদকে। কখনোবা স্কেপগোট বানানো হয় দলের অন্যান্যদের। কিন্তু দল নির্বাচনে যদি বারবার বড়োসড়ো ভুল থেকে যায়, তাহলে সত্যিই কি সেই ফেল করা টিম নিয়ে বৃত্তি পরীক্ষা পাস করা সম্ভব?
আসুন প্রথমে এক নজরে দেখে নেওয়া যাক কাল মেলবোর্ন টেস্টের জন্য ভারতের একাদশঃ
১.অজিঙ্কা রাহানে (অধিনায়ক)
২.মায়াঙ্ক আগারওয়াল
৩.শুভমান গিল
৪.চেতেশ্বর পুজারা (সহ-অধিনায়ক)
৫.হনুমা বিহারি
৬.ঋষভ পান্থ (উইকেটকিপার)
৭.রবীন্দ্র জাদেজা
৮.রবীচন্দ্রন অশ্বিন
৯.উমেশ যাদব
১০.যশপ্রীত বুমরাহ
১১.মোহাম্মদ সিরাজ
স্বাভাবিকভাবেই আপনার হয়তোবা মনে হচ্ছে, কে এল রাহুলকে বাইরে বসিয়ে রাখার মানে কি? প্রথম থেকেই একথা জানা ছিল যে বিরাটের পরিবর্তে দলে আসতে চলেছেন রাহুল। তাহলে হঠাৎ বিরাট না থাকা সত্ত্বেও তাকে বাইরে বসতে হল কেন? সাম্প্রতিক ফর্ম কি তার খুব খারাপ। এ প্রশ্নের উত্তর যে একটি বড়সড় ‘না’ এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। তাহলে কি হনুমা বিহারি বা রবীন্দ্র জাদেজা কে এল রাহুলের থেকে বড় ব্যাটসম্যান?এক্ষেত্রেও জবাব যে না এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। তাহলে কেন বাইরে বসছেন কে এল রাহুল?আপনার নিশ্চয়ই মনে থাকবে এর আগে গিলকে নিয়েও একই রকম কথা উঠেছে বারবার। নিউজিল্যান্ডের দুরন্ত ফর্মে থাকার সত্বেও দলে সুযোগ পাননি তিনি। তাকে ড্রেসিংরুমের অভিজ্ঞতা দানের জন্য বারবার ঘোরানো হয়েছে দলের সাথে। কিন্তু একটি ম্যাচেও মাঠে নামার সুযোগ মেলেনি।
বেশ, আপনি নিশ্চয়ই ভাবছেন প্রথমেই বিরুদ্ধ পরিস্থিতিতে একটি তরুণ ব্যাটসম্যানকে ফেলতে চায় না ভারতীয় দল। হয়তোবা সহজ কোন ট্যুরে অভিষেক ঘটবে তার। তাহলে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে তাকে এই সুযোগ দেওয়া কি খুব যুক্তিসঙ্গত? ভারতের বিরাট কোহলি নেই, নেই রোহিত শর্মা কিংবা মোহাম্মদ শামিরা। তার উপর মাথায় রয়েছে ৩৬ রানে অল আউট হবার দুঃস্বপ্ন। তাহলে একথা ঠিক যে নতুন কোন ব্যাটসম্যানকে অভিষেক করানোর জন্য এই মুহূর্তে আদর্শ জায়গা নয় অস্ট্রেলিয়া। হয়তো গিলকে আগেই সুযোগ দেওয়া উচিত ছিল। যাই হোক তিনি সুযোগ পেয়েছেন এতে সকলেই যে খুশি তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই।
কিন্তু কে এল রাহুলের সুযোগ না পাওয়া কোন অর্থে যুক্তিসংগত তার জবাব কি আদৌ দেবেন এই টিম ম্যানেজমেন্ট। বিশেষত আপনার নিশ্চয়ই মনে থাকবে অস্ট্রেলিয়া টেস্ট ক্রিকেটে দুরন্ত ফর্মে থাকা ভিভিএস লক্ষণকে একদিনের দলে রেখেছিলেন সৌরভ এবং সেই সিরিজে নিজেকে প্রমাণ করতে কোন কসুর করেননি লক্ষণ। লক্ষণ কি আদর্শ একদিনের ক্রিকেটের ব্যাটসম্যান ছিলেন? এ নিয়ে এখনো প্রশ্ন তোলা হয় ইতি উতি। কিন্তু যিনি ফর্মে রয়েছেন যিনি আত্মবিশ্বাসী তাকে সেদিন ক্রিকেটের বাইরে রাখতে চাননি সৌরভ। অন্যদিকে ওডিআই ক্রিকেটের দুরন্ত ফর্মে থাকা সত্ত্বেও টেস্ট ক্রিকেটে কামব্যাক করতে পারছেন না তিনি রাহুল। হ্যাঁ, সাদা বল এবং লাল বলের ক্রিকেট নিশ্চয়ই আলাদা। কিন্তু একথা ঠিক যে এই মুহূর্তে তার আত্মবিশ্বাসকে কাজে লাগানো উচিত ছিল ভারতীয় দলের।
অন্যদিকে উইকেটকিপার হিসেবে সাহার জায়গায় সুযোগ দেওয়া হল পান্থকে। একথা ঠিক যে আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান হিসেবে পান্থের ভূমিকা যথাযথ। বিদেশের মাঠে সেঞ্চুরিও রয়েছে তার। তাছাড়া প্রস্তুতি ম্যাচেও সেঞ্চুরি করে সকলের নজর কেড়ে নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু প্রস্তুতি ম্যাচে অর্ধশতরান করেন ঋদ্ধিমান সাহা। যদিও গত ম্যাচে ব্যাটিং বিপর্যয়ের মধ্যে সেভাবে রুখে দাঁড়াতে সক্ষম হননি তিনি। কিন্তু দলে যদি জাদেজার মত একজন অলরাউন্ডার থাকেন এবং কে এল রাহুলের মত একজন যোগ্য ব্যাটসম্যান থাকতেন তাহলে সেরা উইকেটকিপার হিসেবে ঋদ্ধিমান সাহার ডলি থাকায় কি যুক্তিসঙ্গত নয়? নিশ্চয়ই সেই দৃশ্য আপনাদের মনে থাকবে যখন ঋদ্ধিমান একটি দুরন্ত স্টাম্পিং করেছিলেন গত ম্যাচে।
কার্যত বলতে গেলে ভারতের এই ম্যাচের প্রথম একাদশ থেকে মনে হচ্ছে অর্ধশক্তি নিয়ে খেলতে নামছে তারা। এখনই একাদশ নিয়ে কতটা কাজের কাজ হয় সেটা হয়তো বলবে আগামী পাঁচ দিন। কিন্তু বোর্ডের চোখে শিশুপালের মত শত অপরাধ কবে পূর্ণ করবেন রবি শাস্ত্রী সেটাই এখন দেখার।