দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরোঃ মেলবোর্নে বক্সিং ডে টেস্ট প্রায় ভাঙ্গা দল নিয়ে ঐতিহাসিক জয় ছিনিয়ে নিয়েছে ভারত। জয়ের মূল কান্ডারী অবশ্যই অজিঙ্কা রাহানে। বিরাট কোহলির অনুপস্থিতিতে ব্যাটিং বিপর্যয় বিধ্বস্ত এক দলকে অস্ট্রেলিয়ার মতো যুযুধান প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামানোর দায়িত্ব পেয়েছিলেন তিনি। গত টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ৩৬ রানে অলআউট হওয়ার পর তুমুল সমালোচনার মুখে পড়ে ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপ। অনেক ক্রীড়া বিশ্লেষকরা এও বলতে শুরু করেন ৪-০ ব্যবধানে সিরিজ হারার ভারতীয় দল। কিন্তু মোহাম্মদ শামি এবং বিরাট কোহলি না থাকা সত্বেও অধিনায়ক রাহানে দলকে যেভাবে উদ্বুদ্ধ করেন তার প্রভাব দেখা যায় প্রতিটি সেশানেই।
শুধু ভোকাল টনিক নয় ব্যাট হাতেও সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দেন রাহানে। প্রথম ইনিংসে বিরুদ্ধ পরিস্থিতিতে ২২৯ বলে ১১২ রানের যে অনবদ্য ইনিংস খেলেন তিনি। নিশ্চিত পতনের মুখ থেকে তা আবার ফিরিয়ে দেয় ভারতকে। অসাধারণ সঙ্গ দিয়েছিলেন জাদেজাও ব্যাট এবং বল দুই ক্ষেত্রেই আজ সফল তিনি। ভালো প্রদর্শন করেছেন অভিষেক ম্যাচ খেলা মোহাম্মদ সিরাজ, শুভমান গিলরাও। আবার উমেশ যাদবের অনুপস্থিতি যেভাবে সামলেছে ভারতের বোলিং বিভাগ তাও সত্যিই প্রশংসনীয়। কিন্তু কিছুই হয়তো বা হতো না যদিনা প্রথম ইনিংসেই ১৩১ রানের লিড পেত ভারত। আর সেই লিড পর্যন্ত পৌঁছাতে যিনি সবচেয়ে বড় যোগদান রেখেছেন তার নাম অধিনায়ক অজিঙ্কা রাহানে। একইরকমভাবে দ্বিতীয় ইনিংসেও ব্যাট হাতে সফল তিনি। ২৭ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে দলকে জয়ে পৌঁছে দিয়ে তবেই মাঠ ছেড়েছেন রাহানে।
সুতরাং এই ঐতিহাসিক জয়ের ভূমিকাও যে ঐতিহাসিক এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। আর সেই কারণেই প্রথম জনি মুলাঘ মেডেলের অধিকারী হলেন রাহানে। অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের অন্যতম প্রবর্তক জনি মুলাঘকে সম্মান জানাতেই এই বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বোর্ড।
জনি ছিলেন প্রাক্তন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক। ১৮৬৮ সালে যার নেতৃত্বে প্রথমবার বিদেশে সফর করে অস্ট্রেলিয়া। ইংল্যান্ড সফরে গিয়ে সেবার মোট ৪৫ টি টেস্ট খেলেছিল টিম অস্ট্রেলিয়া। সেই ঐতিহাসিক সফরে ১৮৭৭ রানের পাশাপাশি ২৫৭ টি উইকেট শিকার করেছিলেন এই প্রাক্তন অজি অধিনায়ক। তাই তার নামাঙ্কিত মেডেল পাওয়া যে কোন ক্রিকেটারের কাছেই ভীষণ সম্মানের। বিশেষত এমন ঐতিহাসিক জয়ের পর সেই পুরস্কার লাভ করলে আনন্দ যে দ্বিগুণ হয়ে যায় এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই।
ইতিমধ্যেই এই জয়ের আনন্দ ছড়িয়ে পড়েছে ভারতবর্ষে। দলের সঙ্গে না থাকতে পারলেও অজিঙ্কার অধিনায়কত্বের তারিফ করে বিরাট কোহলি লেখেন, “সত্যিই অসাধারণ এই জয় গোটা দল যেভাবে খেলেছে তা প্রশংসনীয়। সত্যি জিংকস যেভাবে অধিনায়কত্ব করেছে এবং ছেলেরা যে ভাবে খেলেছে তাদের জন্য এর থেকে বেশি আর গর্বিত হতে পারতাম না। আশাকরি এখান থেকে আমাদের এই উত্থান চলতেই থাকবে।”
অজিঙ্কা রাহানে অধিনায়কত্ব এবং ভারতের ঐতিহাসিক জয় সম্পর্কে মুখ খুলেছেন শচিনও। তিনি বলেন, “বিরাট, রোহিত, শামি এবং ইশান্তদের ছড়া বিদেশের মাটিতে টেস্ট ম্যাচ জেতা একটি অসামান্য কৃতিত্ব। প্রথম ম্যাচের হার ভুলে আজ যে রকম খেলা এবং মানসিকতার প্রদর্শন করেছে গোটা দল তা দেখে ভীষণ ভালো লাগছে। ব্রিলিয়ান্ট জয় টিম ইন্ডিয়া।”
না, খেলতে পারলেও তিনি যে টিমের সাথে আছেন তার প্রমাণ করে দিয়েছেন রোহিতও। আজ টুইটারে তিনি লেখেন, “এমসিজিতে ভারতের এটি একটি অসাধারণ জয়। দলের প্রতিটি খেলোয়াড় যে মানসিকতার প্রদর্শন করেছে তা দেখে আমি গর্বিত।”
ভারতীয় জয়ের প্রশংসা করে ভিভিএস লক্ষণ বলেন, ” এই জয় থেকে প্রচুর পজেটিভ দিক খুঁজে নিতে পারবে ভারত। অজিঙ্কা দলকে অসাধারনভাবে নেতৃত্ব দিয়েছে। বোলাররা আজ ছিলেন ভীষণ প্রখর, বিশেষত বলতে হয় অভিষেক করা দুই খেলোয়াড়ের কথা। দুজনের প্রত্যেকেই ছিলেন ভীষণ আত্মবিশ্বাসী এবং এই রকম বড় পরিস্থিতিতে কোনরকম প্যানিক করেননি। ভারতীয় ক্রিকেটের বড় শক্তি হলো তাদের রিজার্ভ বেঞ্চের শক্তি।”