দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরোঃ দুই ভারতীয় পর্বতারোহীর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করল নেপাল। ২০১৬ সালে মাউন্ট এভারেস্টের শিখরে ছুঁয়ে ছিলেন বলে দাবি করেছেন নরেন্দ্র সিং যাদব এবং সীমা রানী গোস্বামী নামক ওই দুই পর্বতারোহী। নিজেদের দাবি অনুযায়ী ছবিও জমা দিয়েছিলেন তারা। কিন্তু সেই ছবি মিথ্যে বলে অভিযোগ করেন নেপাল পর্যটন বিভাগের এক কর্তা। এর পরেই শুরু হয় জটিলতা। বিশেষত ২০১৬ সালে মাউন্ট এভারেস্টের শিখরে ছুঁয়েছেন বলে যে দাবি করেছিলেন নরেন্দ্র যাদব এবং সীমা রানী গোস্বামী তা সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে জানিয়েছেন তাদের গাইড।
যদিও ইতিমধ্যেই সেই গাইডের বিরুদ্ধেও মামলা করেছেন হরিয়ানার পর্বতারোহী নরেন্দ্র সিং যাদব। নেপাল পর্যটন বিভাগের কর্তা প্রদীপ কুমার কৈরালা অবশ্য বলেন,”এভারেস্ট জয়ের দাবি প্রমাণ করতে পারেনি নরেন্দ্ররা। যে ছবি ওরা জমা দিয়েছিলেন তাতেও গন্ডগোল হয়েছে। ওদের বিরুদ্ধে যথোচিত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
নেপাল পর্যটন বিভাগের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, যে ছবি নরেন্দ্ররা জমা দিয়েছিলেন তাতে অক্সিজেন মাস্কের পাইপ ট্যাংকের সাথে যুক্ত ছিল না। এমনকি কালো চশমাতে বরফ বা আশেপাশের কোন প্রতিচ্ছবিও ছিল না। এমনকি হাতে ধরে থাকা পতাকা নুইয়ে পড়ে ছিল এমন এক জায়গায় যেখানে সব সময় হওয়া বয়। নেপালে এভারেস্ট জয়ের ক্ষেত্রে একাধিক মিথ্যে দাবি প্রতিবছর জমা পড়ে বলে জানা গিয়েছে। আগে যেখানে দশ বারো বছরে কয়েকটা মাত্র ভুয়ো দাবি পাওয়া যেত এখন সেখানে বছরে একাধিক ভুয়ো দাবি পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে আরো জানতে আমরা যোগাযোগ করেছিলাম বাঙালি এভারেস্ট বিজয়ী সত্যরূপ সিদ্ধান্ত এবং রুদ্রপ্রসাদ হালদারের সাথে। সত্যরূপ বাবু বলেন,”এ ধরনের ঘটনা মোটেই প্রথম নয়। এমনকি আমিও এ ধরনের ঘটনার শিকার হয়েছি। ২০১৬ সালে আমার নিজের সামিটের ছবি মর্ফ করেছিলেন দীনেশ রাঠোর এবং তারকেশ্বরী রাঠোর। পুনের এই দুই পুলিশ দম্পতি সেবার আমার ছবি জাল করে মিথ্যা এভারেস্ট জয়ের দাবি করেছিলেন। আমার মতে এ ধরনের ঘটনা রুখতে নেপাল পর্যটন বিভাগের কঠোর পদক্ষেপ নেয়া উচিত। এইসব ছবি তাদের জনসাধারণের সামনে প্রকাশ্যে আনা উচিত। তাহলে এ ধরনের ঘটনা বন্ধ হবার সুযোগ রয়েছে।”
তবে এই ঘটনায় সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর রহস্যটি ফাঁস করেন এভারেস্ট বিজয়ী বাঙালি অভিযাত্রী রুদ্রপ্রসাদ হালদার। তিনি বলেন, ” ২০১৬ সালের সেই এক্সপিডিশনের সময় নরেন্দ্র এবং সীমার সাথে আমার দেখা হয়েছিল সামিট ক্যাম্পে। আমরা তখন সামিট মার্চ শুরুর মুখে। দুপুর আড়াইটে তিনটে নাগাদ দেখতে পেলাম, সীমা এবং নরেন্দ্ররা সাউথ কল থেকে নেমে যাচ্ছে নিচের ক্যাম্পের দিকে। স্বাভাবিক কৌতুহলেই আমি প্রশ্ন করেছিলাম সামিটের খবর কি? ওরা তখন কাঁদতে কাঁদতে জানায় যে ওদের গাইড ওদের সাথে অত্যন্ত দুর্ব্যবহার করেছে। ফলতো ওদের সামিট করা হয়নি। আর সেই কারণেই ওরা নিচে নেমে আসছে। আমি ওকে একথাও জানিয়েছিলাম, এ সময় নীচে নামা বিপদজনক। তবে সীমা বলেন ওনার আর ভালো লাগছে না। এরপর আমাদেরও প্রস্তুত হওয়ার দরকার ছিল কারণ কিছুক্ষণের মধ্যেই আমাদের সামিট মার্চ শুরু। তাই আর বেশি কথা হয়নি। এরপর পাঁচ সাত দিন বাদে যখন আমরা নামচেবাজার নামলাম, তখন দেখলাম নরেন্দ্র ও সীমার ফেসবুকের ওয়ালে সার্টিফিকেটের ছবি রয়েছে। অর্থাৎ ওদের ক্লাইম্ব হয়েছে। দেখেশুনে খুবই আশ্চর্য হয়ে ছিলাম। এরপর আমাদেরকে ওরা ফেসবুক থেকে ব্লকও করে দেয়।”
স্বাভাবিকভাবেই এরপর আর বুঝতে অসুবিধা থাকে না যে, এই দুই ভারতীয় পর্বতারোহী হয়তোবা এভারেস্ট বিজয় নিয়ে ভুয়া দাবি তুলেছেন। যেমন অনেক ক্ষেত্রেই পেতে হচ্ছে নেপাল সরকারকে।