দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: অগুনতি সমর্থকদের জন্য একটি অসাধারণ সুখবর! অবশেষে লগ্নিকারী সংস্থা পেলো শতবর্ষের ইস্ট বেঙ্গল ক্লাব। হরি মোহন বাঙ্গুরের সংস্থা শ্রী সিমেন্ট এর ব্র্যান্ড লোগো দেখা যাবে ইস্ট বেঙ্গলের জার্সিতে। সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে ২০২০-২১ মরসুমেই আইএসএল খেলার জন্য মাঠে নেমে পড়বে শতবর্ষে পা রাখা ইস্টবেঙ্গল ক্লাব। এবার বাংলার চিরকালের দুই যুযুধান ক্লাবকেই আসন্ন আইএসএলে খেলতে দেখা যাবে। উল্লেখ্য, এই বছরেই ঐতিহ্যের ডার্বি যুদ্ধ একশো বছরে পা রাখলো। এবার ভারতের বৃহত্তম ফুটবল লীগে মুখোমুখি হবে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দল। করোনা আবহে এই ডার্বিই যে আইএসএল এর সেরা আকর্ষণ হবে সে কথা বলাই বাহুল্য।
কিন্তু এই মহাযজ্ঞ এত সহজে সম্পন্ন হয় নি। ময়দানে কান পাতলে শোনা যাচ্ছিলো, এর পেছনে রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সৌরভ গাঙ্গুলীর আবেগ ও স্বত:প্রণোদিত পদক্ষেপ। একদম শুরুতেই এফএসডিএল চেয়েছিল ইস্টবেঙ্গলের সাথে সঞ্জীব গোয়েঙ্কার এটিকে’র গাঁটছড়া। ঠিক সেই সময় অন্যদিকে কোটাক মাহিন্দ্রা’র সঙ্গে মোহনবাগানের কথাবার্তা অনেকটা এগিয়ে যাওয়ায় একাধিক কারণে এই দুই ক্লাবের সঙ্গে বিনিয়োগকারীরা যুক্ত হতে পারেননি। এই ঘটনা লাল-হলুদ কর্তাদের সঙ্গে এফএসডিএলের ব্যবধানও তৈরি করেছিল।
এদিকে কোয়েসের সঙ্গে ইস্টবেঙ্গলের বিচ্ছেদের পুরো বিষয় কলকাতা থেকে কালিম্পং এ আলোরণ ফেলে দিলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে পদক্ষেপ নেন। তিনি লাল-হলুদ কর্তাদের কাছে খোঁজখবর নেওয়ার পাশাপাশি নতুন ইনভেস্টর জোগাড় করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। ‘দিদি’র পরামর্শেই বিকল্প ইনভেস্টরের খোঁজে নামে ইস্টবেঙ্গল। এর পর জানা যায় গত মার্চ মাসে মুখ্যমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে ইস্টবেঙ্গল কলকাতার একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানি ‘শাপুরজি পালনজি’র সঙ্গে কথাবার্তা প্রায় চূড়ান্ত করেছে। কিন্তু গোটা দেশজুড়ে লকডাউন হয়ে যাওয়ার জন্য আইএসএল অনিশ্চিত হয়ে পড়ায়, পুরো পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।
এরপর ক্লাবের সুত্র অনুযায়ী যা খবর আসে তাতে জাকার্তা নিবাসী ব্যবসায়ী প্রসূন মুখার্জি ইস্টবেঙ্গলের কাছে বিনিয়োগ করার প্রস্তাব দেন। কিন্তু প্রসূনবাবুর সমর্থ নিয়ে কর্তারা সন্দেহ প্রকাশ করলে অচিরেই প্রসুনবাবু সরে যান। এদিকে নতুন ইনভেস্টর নেই, নেতিবাচক ও ভুলেভরা-গুজব খবর ইত্যাদির চাপে ইস্টবেঙ্গল কর্তারাও একটা সময় হাল ছেড়ে দেন। কর্তাদের অনীহা দেখে এফএসডিএল ও গা ছাড়া দেয়।
পরবর্তীতে ইস্টবেঙ্গল কর্তা দেবব্রত সরকার বিসিসিআই সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে মুখ্যমন্ত্রীর পদক্ষেপের কথা জানান। কর্তাদের অনুরোধে সৌরভ রিলায়েন্সের সাথে মধ্যস্থতা করে ইস্টবেঙ্গলের আইএসএল খেলার পথ সুগম করতে উদ্যোগী হন। সৌরভ আকাশ আম্বানীর সঙ্গে কথা বলেন। সৌরভ তাঁদের বলেছিলেন- “ইস্টবেঙ্গল অনেক বড় প্রতিষ্ঠান। ওরা আইএসএল খেললে প্রতিযোগিতার মান বাড়বে। এবং ভবিষ্যতে কলকাতার স্টেডিয়ামের গ্যালারি ফাঁকা যাবে না। এবং সেটা আইএসএলের জন্যও ভাল।”
সৌরভের এই আশ্বাস ও দূরদর্শিতা পরিস্থিতির বদল আনে। মুখ্যমন্ত্রী নিজেও মুকেশ আম্বানী’র সঙ্গে সারাসরি কথা বলেন। রিলায়েন্স থেকেই বাঙ্গুর সংস্থাকে ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেওয়া হয়। রিলায়েন্স জিও’র কলকাতার দায়িত্বে থাকা কর্তা তরুণ ঝুনঝুনওয়ালাকে গোটা ব্যাপারটা তদারকির দায়িত্ব দেওয়া হয়। মুখ্যমন্ত্রী, নীতা আম্বানী, বাঙ্গুর গোষ্ঠী ও লাল-হলুদ কর্তাদের সঙ্গে মেলবন্ধনের যাবতীয় কাজ তিনি দায়িত্ব নিয়ে দেখেন।
কিন্তু এরপর আবার বাজারে খবর রটে যে বাঙ্গুর গোষ্ঠীর তরফ থেকে কিছু ব্যবসায়িক শর্ত আরোপ করা হলে লাল-হলুদ কর্তাদের পুনরায় হতাশ হয়েছেন। এবার সেই রতনকে মিথ্যে প্রমাণে ফের আসরে নামেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি নীতা আম্বানী ও ইস্টবেঙ্গলের কর্তাদেরও বোঝান যেন দুই পক্ষ একটা ‘কমন প্ল্যাটফর্ম’এ পৌঁছলে ভাল হয়। অবশেষে দিদি-দাদার যৌথ প্রয়াস ও খেলার প্রতি ভালোবাসা ইস্টবেঙ্গলকে যোগাড় করে দেয় স্বপ্নের আইএসএল এ খেলার ছাড়পত্র। বাঙ্গুর গোষ্ঠীর শ্রী সিমেণ্টের লোগো লাগানো জার্সি গায় আইএসএল এর ময়দানে এবার ইস্টবেঙ্গল।