দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরোঃ সাতজন ভবঘুরের একটি দল নিছক ঘোরার নেশায় বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছিল পাহাড়ের উদ্দেশ্যে। তারপর তারা পৌঁছে যায় সান্দাকফু। সালটি ছিল ১৯৮২, ৭ ই সেপ্টেম্বর। পাহাড় দেখে, পাহাড়ের প্রেমে পড়ে যায় তারা। আর তারে তাদের এই পাহাড়ের প্রতি ভালোবাসার প্রতীক হিসেবেই আজ থেকে ৪০ বছর আগে সোনারপুরে গড়ে উঠেছিল ‘আরোহী মাউন্টেনিয়ারিং ক্লাব’।
আজ ছিল তার ৪০ তম প্রতিষ্ঠা দিবস। সেই উদ্দেশ্যে সারাদিন ধরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল ক্লাব কর্তৃপক্ষ। সারাবছরই নানারকম ক্রিয়া-কলাপ লেগেই থাকে তাদের। আজকের অনুষ্ঠানের সূচনা হয় সকাল ৭.০০ টায় জাতীয় পতাকা এবং সংগঠনের পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে।তারপর তাদের ‘রান ফর অ্যাডভেঞ্চার’ এর শুরু হয় সকাল ৭:৩০ টায়। অনুষ্ঠানসূচি তে ছিল ১২ কিলোমিটার দৌড় এবং সাইক্লিং। নানা বয়সের মোট ৮৮ জন মানুষ এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। তার মধ্যে সব মিলিয়ে ২৮ জন শেষ পর্যন্ত দৌড় শেষ করেন। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলার বিখ্যাত ‘সেভেন মাউন্টেনিয়ার’ সত্যরূপ সিদ্ধান্ত, মলয় মুখার্জি এবং এক চাকার সাইকেলে সারা ভারত ভ্রমণকারী সুব্রত চক্রবর্তীর মতন সম্মানীয় বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ।


এরপর সন্ধ্যাবেলায় শুরু হয় ‘ বাৎসরিক অনুষ্ঠান ভয়েজ(Voyage)’। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও বিগত রক ক্লাইম্বিং এবং সামার ট্রেকের গ্রাজুয়েশন সেরিমনি অনুষ্ঠিত হয়। এই অনুষ্ঠানে দুটি তথ্যচিত্রের স্লাইডশো দেখানো হয় সোনারপুর আরোহী পরিচালিত শিনকুন পশ্চিম (৬১২৭ মি) সফল পর্বতারোহণের স্লাইড শো যার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন পর্বতারোহী পার্থসারথি লায়েক। একইসঙ্গে ছিল সোনারপুর আরোহী পরিচালিত শীতকালীন দেওটিব্বা (৬০০১ মি) অভিযানের উপর একটি ছোট ডক্যুমেন্টারী। এই শীতকালীন অভিযানে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন বাংলার দুই প্রখ্যাত পর্বতারোহী রুদ্রপ্রসাদ চক্রবর্তী এবং রুদ্রপ্রসাদ হালদার জুটি।


একইসঙ্গে প্রতিবছরের মতো এই অনুষ্ঠানে সংবর্ধনা জানানো হয় চন্দননগরের মেয়ে পর্বতারোহী পিয়ালী বসাককে। যিনি পৃথিবীর সপ্তম উচ্চতম পর্বত শৃঙ্গ ৮১৬৭ মিটার উচ্চতা বিশিষ্ট ধৌলাগিরি পর্বতশৃঙ্গে কোনরকম অক্সিজেন ছাড়াই আরোহন করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। গড়েছিলেন এক অনন্য নজির।
এছাড়া উঠতি পর্বতারোহী প্রদীপ কুমার বরকেও আজ সম্বর্ধনা জ্ঞাপন করে সোনারপুর আরোহী। অতি অল্প সময়ের মধ্যেই পর্বতারোহণের ইতিহাসে পাকাপাকি স্থান করে নিয়েছেন প্রদীপ। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি সফল অভিযান করে ফেলেছেন তিনি এবং তাঁর কৃতিত্বের মুকুটে সব থেকে উজ্জ্বলতম পালক হল ২০১৯ সালে নন্দাদেবী ইস্টের সফল অভিযান। তিনি সফল ভাবে তা আরোহন করেছেন। তার এই অসামান্য কৃতিত্বের জন্যই তাঁকে ‘মোস্ট প্রমিসিং মাউন্টেনিয়ার’ হিসেবে সংবর্ধনা দেওয়া হয় সংস্থার তরফে।


একাধিক দুঃসাহসিক অভিযানে জড়িয়ে পড়ায় সোনারপুর আরোহীর লক্ষ্য। এবারও সোনারপুর আরোহীর তিন সদস্য চন্দন বিশ্বাস,অভিক মন্ডল, রাহুল হালদার এক অভিনব শীতকালীন সাইক্লিং অভিযানের পরিকল্পনা করেছেন। এই অভিযানে নেতৃত্ব দেবেন চন্দন বিশ্বাস। এই অভিযান শুরু হবে ৩ ডিসেম্বরে। লক্ষ্য সাইকেলে কাশ্মীর পৌঁছানো তাও আবার শীতের সমস্ত ঠান্ডা উপেক্ষা করে। ইতিমধ্যে অক্টোবর থেকেই তুষারপাত শুরু হয়ে গিয়েছে কাশ্মীরে। কিন্তু সেই বরফ এবং তুষারপাত ঠেলেই সাইকেল নিয়ে কাশ্মীর পৌঁছে যেতে চান এই অভিযাত্রীরা।


শুধুমাত্র তাই নয়, ওদের ইচ্ছা সাইকেল নিয়ে কাশ্মীরের উত্তর এবং পশ্চিমের অ্যাকচুয়াল লাইন অফ কন্ট্রোল যা সংক্ষেপে LOC নামে পরিচিত, সেই সীমান্তেও যাবেন তারা। অভিযান শুরু শ্রীনগর থেকে, প্রায় একমাস ধরে দুখানা LOC ছুঁয়ে, কাশ্মীরের আনাচেকানাচে ঘুরে, একটা দুর্গম ট্রেক করে শেষ হবে পাঞ্জাব-পাকিস্তান সীমান্তের ওয়াঘা বর্ডারে। আজ সন্ধ্যায় এই অভিযানের ফ্ল্যাগ অফ করেন অ্যাডিশনাল এসপি বারুইপুরের ইন্দ্রজিৎ বসু (IPS)।
লেখা – তানিয়া তুস সাবা।